ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘শাজাহান খানকে দিয়েই সড়ক দূর্ঘটনা রোধ’

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

‘শাজাহান খানকে  দিয়েই সড়ক দূর্ঘটনা রোধ’

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সড়ক দূর্ঘটনা রোধে সুপারিশমালা প্রণয়নে সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানকে প্রধান করে কমিটি গঠন নিয়ে সংসদে উঠা প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য শাজাহান খানকে প্রধান করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবিবারের বৈঠকে যখন শাজাহান খানের নাম প্রস্তাব করা হয় তখন কেউ কিন্তু বিরোধিতা করেননি। তাঁর নেতৃত্বে আরও ১৪ জন সদস্য রয়েছেন। এখানে ব্যক্তি কোনো বিষয় নয়। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে প্রশ্ন করতে গিয়ে ফখরুল ইমাম বলেন, ‘বদিকে দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ, শাজাহান খানকে দিয়ে সড়ক নিয়ন্ত্রণ। এই শাজাহান খানের একটা হাসি নিয়ে কতকিছু ঘটলো। সেই শাজাহান খানকে প্রধান করে গঠিত কমিটি সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কতটা সক্ষম হবে? এই প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, অতীতে কোনো ব্যক্তির কারণে কোনো সমস্যার উদ্ভব হয়েছে কিনা সেটা আমি দেখব না। আমি দেখব সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নে ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কমিটি কি সুপারিশ তৈরী করে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করব। এসময় প্রশ্নকারী ফখরুল ইমামের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেখুন না, আপনি যতটুকু আশা করছেন তার চেয়েও ভালো রিপোর্ট আসতে পারে।’ পরে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে সরকার দলীয় এমপি এ কে এম শামীম ওসমান ব্যক্তি আক্রমণ করে ফখরুল ইমামের প্রশ্নের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘শাজাহান খান একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার হাসির জন্য ঘটনা ঘটেছে নাকি পরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটানো হয়েছিল, সেটা দেখার বিষয়। তবে এভাবে প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি। সরকারি দলের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখরের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের জানান, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ডিভাইডারই একমাত্র সমাধান নয়। এখানে চালক, পথচারী ও যাত্রীদের সচেতনতাও জরুরি। কারণ রাস্তায় দেখা যায় ফুটওভার ব্রীজ থাকার পরেও ডিভাইডার দিয়ে লাফ দিয়ে মানুষ রাস্তা পার হচ্ছেন। মহিলারা বাচ্চা কোলে নিয়ে রাস্তা পার হয়। এমনকি ফ্লাইওভারের এপাশ থেকে ওপাশে হামাগুড়ি দিয়ে মানুষ পার হচ্ছে। মানুষ সড়কে শৃঙ্খলা মানছে না। মানুষের বিবেকটা এখানে খুব জরুরি। সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি কমিটিও করা হয়েছে। একই প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্য যারা ঢাকার রাস্তায় চলাচল করেন তারা দেখবেন মানুষ মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছেন। এরমধ্যে গাড়ি এসে চাকায় পিষ্ট করে দিচ্ছে। এখানে কী শুধু চালককে দায়ী করবেন? অনেক গাড়িচালক ট্রাফিক সিগনাল মানেন না। ভিআইপি হয়ে অনেকে রং সাইডে গাড়ি নিয়ে যান। এটা ঠিক নয়। ভিআইপিরা তো অসাধারণ, তারা যদি রং সাইডে চলেন তাহলে সাধারণ মানুষ কেন রং সাইডে যাবে না! তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে তাঁর মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, সকল মহাসড়কে ফোরলেনের পাশাপাশি বাইলেন ও ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে। সড়ক মন্ত্রণালয় সেইভাবেই কাজ করছে। লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি শহিদ ইসলামের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের সংসদকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিশেষ উদ্যোগে চলমান ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রান্সজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের উত্তরা ৩য় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত সম্পূর্ণ অংশ ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের নিমিত্ত সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে চলছে। তিনি জানান, প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে উত্তরা ৩য় পর্ব থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৬ স্টেশন বিশিষ্ট উভয়দিকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম আধুনিক, সময় সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বিদ্যুত চালিত এলিভেটেড ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট নির্মাণের লক্ষ্যে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) বা বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১২-২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করা হয়। এটা একটি ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্প। তিনি আরও জানান, প্রাক্কলিত মোট প্রকল্প ব্যয় ২১ লাখ ৯৮ হাজার ৫০৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। যার মধ্যে জিওবি ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪৮ কোটি টাকা ও প্রকল্প সাহায্য (পিএ) ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৪৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম, আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ তে পরিবার প্রতি গাড়ির সংখ্যা সিলিং নির্ধারণের বিধান রাখা হয়েছে। সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা কোনো ব্যক্তি, পরিবার, প্রতিষ্ঠান বা কোনো এলাকার জন্য মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা বা সীমা নির্ধারণ করতে পারবে। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মেট্রোরেল, বিআরটি ইত্যাদি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বাস রুট ফ্রাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা শীঘ্রই বাস্তবায়ন হবে। এসব পদ্ধতি চালু হলে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায়। ######
×