ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৫৫ তাজা গুলি ও একটি গ্রেনেড ;###;অস্ত্রের গায়ে লেখা মেড ইন পাকিস্তান ;###;পাওয়া গেছে ফকিরাপুলের ডাস্টবিনে

পাকিস্তানী অস্ত্র উদ্ধার

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পাকিস্তানী অস্ত্র উদ্ধার

শংকর কুমার দে ॥ ‘মেড ইন পাকিস্তান’-অর্থাৎ পাকিস্তানের তৈরি লেখা গুলি ও গ্রেনেড উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানাধীন বিজয়নগর এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে ৫৫টি গুলি ও তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করার পর রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এসব গুলি ও অস্ত্র পাঠিয়েছে বলে মনে করছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এটা আইএসআইয়ের ষড়যন্ত্র। জঙ্গী গোষ্ঠী, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড, উত্তরার দিয়াবাড়িতে, রূপগঞ্জে, খুলনাসহ বিভিন্নস্থানে প্রায় একই ধরনের অস্ত্র, গুলি, গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে যা এখনও রহস্যবৃত। কারা, কিভাবে, কেন, মেড ইন পাকিস্তান লেখা গুলি, গ্রেনেড, বাংলাদেশে ঢুকিয়েছে তার রহস্য উদঘাটন করতে তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিজয়নগরের ডাস্টবিন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৮ রাউন্ড নাইন এমএম পিস্তলের গুলি, ২৮ রাউন্ড একে ফোর্ট সেভেন রাইফেলের গুলি ও ১৯ রাউন্ড শটগানের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে যাতে গুলির গায়ে লেখা ‘মেড ইন পাকিস্তান’। মেড ইন পাকিস্তান লেখা গুলি, গ্রেনেড উদ্ধার করার পর বিস্ময়ে হতবাক হন পুলিশ। খবর পেয়ে গুলি উদ্ধার ও গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বাংলাদেশের জঙ্গী গোষ্ঠী কিংবা সন্ত্রাসীদের জন্য এসব গুলি, গ্রেনেড পাঠিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা। পরিত্যক্ত অবস্থায় যেসব গুলি ও গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে তার সঙ্গে কোন অস্ত্র পাওয়া যায়নি। এতে অনুমিত হওয়া স্বাভাবিক যে অস্ত্রের চালানও এসে থাকতে পারে, যা জঙ্গী গোষ্ঠী কিংবা সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গিয়ে থাকতে পারে। পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক বলেন, রবিবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে কয়েকজন টোকাই লোহার ডাস্টবিনে গুলি ও গ্রেনেড দেখে টহল পুলিশকে জানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রেনেড দেখে পুলিশের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেয়। তাজা গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করেন বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, গ্রেনেডটি দেখতে কিছুটা পুরনো হলেও তাজা ও শক্তিশালী ছিল। খবর পেয়ে আমরা সেটি নিষ্ক্রিয় করেছি। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, গুলি ও গ্রেনেড পুরনো হলেও এগুলো মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নয়। আর্জেস গ্রেনেডটি একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের মতো মনে হয়েছে। এগুলো কেউ এই ডাস্টবিনে রেখে গেছে বলে তারা ধারণা করছেন। এই বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে। এসব গুলি, গ্রেনেড কার হেফাজতে ছিল তা জানার চেষ্টা চলছে। গুলি ও গ্রেনেডের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র এসেছিল বলেও মনে করছি আমরা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, মেইড ইন পাকিস্তান লেখা গুলি ও গ্রেনেড উদ্ধারের ঘটনায় প্রমাণ করে এগুলো পাকিস্তান থেকেই এসেছে। এই ধরনের অস্ত্র, গুলি, গ্রেনেড ইতোপূর্বে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই পাঠিয়েছে বলে তদন্ত করে দেখেছি। বিশেষ করে জঙ্গী গোষ্ঠী ও ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য এই ধরনের অস্ত্র, গুলি, গ্রেনেড পাঠিয়েছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদেশে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডের উৎসও একই স্থানে। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটসহ সীমান্ত এলাকায় উলফা গোষ্ঠীর জন্য পাঠানো অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার, যার সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জড়িত। এ ছাড়াও খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় চিংড়ি ঘেরের মাটি খননকালে উদ্ধার হওয়া ৩২টি গ্রেনেড পুরনো ও মরিচা ধরা হলেও বেশ শক্তিশালী ছিল, যার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করেছে সেনাবাহিনী। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম (উলফা)-কে ঘাঁটি গাড়তে যারা অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছে, সেই একই মহল এখন অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে বাংলাদেশের জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) উলফাকে অর্থ, অস্ত্র ও সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে, সেই একই অভিযোগের ভিত্তিতে সন্দেহের তীর এখন আইএসআই এর দিকেই। দেশের ভেতরে জামায়াত- শিবিরসহ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জঙ্গী তৎপরতায় সহায়তা করছে, যাতে দেশকে জঙ্গী রাষ্ট্রে আখ্যায়িত করা যায়। আর এ কারণেই মাঝেমধ্যেই দেশের বিভিন্নস্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় অস্ত্র, গুলি, গ্রেনেড পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই কোনো অপরাধী চক্র এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গোরাবারুদ এনে থাকতে পারে। এসব চক্রের হাতে আরও অস্ত্র গোলাবারুদ আছে কিনা খুঁজে দেখা হচ্ছে। কারা কী কারণে কী উদ্দেশে এই গোলাবারুদ মজুদ করেছে, আবার ফেলে দেয়ার পর পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হচ্ছে, তা রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।
×