স্টাফ রিপোর্টার ॥ দশম জাতীয় সংসদ না ভেঙ্গেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের নেয়া শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবারও খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে আদালতে রিট আবেদনের ওপর শুনানি করেন রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সাকিব মাহবুব। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মোঃ মোমতাজ উদ্দিন ফকির, ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু, মোখলেছুর রহমান প্রমুখ। এর আগে ১৭ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। সেদিন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিটটি খারিজ করে আদেশ দেন।
এদিকে সোমবার আদালত বলেছে, ‘সংসদ অধিবেশন শুরু আগে শপথ নেয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকার গঠন। কারণ রাষ্ট্রপতি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া দলের প্রধানকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকেন। এ কারণে নির্বাচিত সদস্যরা আগে শপথ নিয়েছে। আর সংসদ অধিবেশন শুরুর আগে সরকার গঠন করা হয়ে থাকে। অতএব রিট আবেদনটি সরাসরি খারিজ করা হল। আদেশের পর আপীলে যাওয়ার কথা বলেছেন রিটকারীর আইনজীবী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, শপথগ্রহণের দিন থেকেই সংসদ সদস্যদের কার্যভার গ্রহণ করা হয়। কিন্তু আদালত সংসদের প্রথম অধিবেশন থেকে সংসদ সদস্যদের কার্যভার গ্রহণ করার কথা বলেছে। আদালতের এই পর্যবেক্ষণ যথাযথ মনে করছি না। তাই এ আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপীল বিভাগে যাব। অন্যদিকে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দায়িত্ব নেবেন বলেই গত ৩ জানুয়ারি তারা শপথ নিয়েছেন। সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছে ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের প্রথম অধিবেশন বসার দিন থেকে সংসদ সদস্যরা কার্যভার গ্রহণ করে থাকে। ফলে আগে শপথ নিলেও তাতে সংবিধান বা আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। ফলে রিট আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্যদের নেয়া শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ৮ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের স্পীকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আইনী নোটিস দেয়া হয়। সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী মোঃ তাহেরুল ইসলাম তাওহীদের পক্ষে নোটিসটি পাঠান সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। নোটিসে বলা হয়, সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে পুনরায় সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু সে অনুচ্ছেদ প্রতিপালন না করে আবার সংসদ সদস্যরা শপথ নেয়ায় বর্তমানে দুটি সংসদ বহাল রয়েছে, যা সংবিধান পরিপন্থী। কিন্তু সে নোটিসের কোন জবাব না পাওয়ায় গত ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এ রিট দায়ের করেন। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি রিটটির ওপর শুনানি শেষ হলে গত ১৭ জানুয়ারি আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করেন হাইকোর্ট।
তবে আদেশের দিন রিট আবেদনকারী উপযুক্ত পক্ষ না হওয়ায় আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে নেন রিটকারীর আইনজীবীরা। এরপর ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন নতুন করে একই গ্রাউন্ডে রিট দায়ের করেন। এরপর ওই রিটের ওপর শুনানি নিয়ে আদালত খারিজ আদেশ প্রদান করে।
