ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টাইগারদের অগ্নিপরীক্ষা ডানেডিনে

প্রকাশিত: ১১:০২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

টাইগারদের অগ্নিপরীক্ষা ডানেডিনে

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ক্রিকেটারদের প্রত্যাশা ছিল এক রকম, আর মাঠের খেলায় দেখা গেল একেবারে অন্যরকম। গত দুই ওয়ানডেতে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি সফরকারী বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভাল স্টেডিয়ামে হোয়াইটওয়াশ থেকে বাঁচার লড়াই মাশরাফি বিন মর্তুজাদের। প্রথম দুই ওয়ানডেতেই ৮ উইকেটের লজ্জাজনক পরাজয়ের পর এবার এই লজ্জা এড়ানোর ম্যাচে আবার বড় সঙ্কটে পড়েছে সফরকারীরা। পাঁজরের ইনজুরির কারণে মুশফিকুর রহীম এবং হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ায় টানা দুই অর্ধশতক হাঁকানো মোহাম্মদ মিঠুনের খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই শেষ মুহূর্তে টেস্ট দলের অন্যতম সদস্য মুমিনুল হক খেলতে পারেন। এবার নিউজিল্যান্ডে গিয়ে বাংলাদেশের দুর্গতির মূল কারণটা ব্যাটিং ব্যর্থতা। আর এর পেছনে কারণ হিসেবে তুলে আনা যেতে পারে, সম্প্রতিই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) টি২০ ফরমেটে খেলে যাওয়া ক্রিকেটাররা ওয়ানডে ফরমেটের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে পারেননি। এছাড়া নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া, পরিবেশ ও গতি-বাউন্সে ভরপুর উইকেটে তাল মেলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। তবে এসবের পরেও আলোচনায় আসে মিঠুনের দুর্দান্ত ব্যাটিং। নির্ভরযোগ্য ওপেনার তামিম ইকবাল যেখানে দুই ম্যাচেই ৫ রান করে সাজঘরে ফিরে গেছেন, সেখানে মিঠুন এখন পর্যন্ত দলের একমাত্র হাফ সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে দুই ম্যাচে করেছেন ৬২ ও ৫৭ রান। এছাড়া সমালোচিত সাব্বির রহমান এবার দলে জায়গা পেয়ে বিতর্কিত হলেও দুই ম্যাচে করেছেন ১৩ ও ৪৩ রান। সেখানে অপরিহার্য মুশফিকুর রহীমও ব্যর্থ। তিনি ৫ ও ২৪ রান করেছেন দুই ম্যাচে। আর মিডলঅর্ডারের নির্ভরতা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ করেছেন ১৩ ও ৭ রান। আর এই তিন ক্রিকেটারের ব্যর্থতায় গত দুই ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে ফেলেছে কঠিন চাপে। এরপরও সৌম্য সরকার (২২ ও ৩০), মিঠুন, সাব্বির ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের দৃঢ়তায় সম্মানজনক সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু সেই স্বল্প পুঁজি নিয়ে লড়াইয়ের আভাসটাও দেখাতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। নিউজিল্যান্ডে পেসবান্ধব উইকেট। তবে সেখানে কিভাবে বোলিং করলে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করা যায় সেটি কিউই বোলারদের চেয়ে বিশ্বের আর কেউ বেশি জানেন না। নিয়মিতই এখানে তারা খেলে যাচ্ছে। নিজেদের মাটিতে সুবিধাজনক পরিবেশ পেয়ে একেবারে জ্বলে উঠেছেন তারা তীব্র গতির বোলিংয়ে। আর বিরূপ পরিবেশে গতির লড়াইয়ে-ই পিছিয়ে পড়েছে সফরকারী বাংলাদেশ দল। কিউই পেসারদের গতির সঙ্গে তুলনায় অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশী পেসারদের গতি। আর বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা গতিময় উইকেটে গতিময় বলে যতটা অনভ্যস্ত, তেমনি কিউই ব্যাটসম্যানরা একেবারেই সিদ্ধহস্ত এবং অভিজ্ঞ। সে কারণেই বাংলাদেশ দল আগের দুই ম্যাচে ব্যাটিং করতে গিয়ে যতখানি হিমশিম খেয়েছে, কিউইরা ব্যাটিংয়ে নামার পর মনে হয়েছে এরচেয়ে ভাল ব্যাটিং উইকেট আর হয়ই না। তাছাড়া নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা বেশ ফর্মেও আছেন সম্প্রতি। পরিস্থিতি যখন এমন, এর সঙ্গে আবার শুরু হয়েছে ইনজুরির দুঃশ্চিন্তা। একে তো হোয়াইটওয়াশ থেকে বাঁচার চ্যালেঞ্জ, তার মধ্যে আবার ফর্মে থাকা মিঠুন ও মুশফিকের ইনজুরি ধাক্কা। মুশফিক ১০ ফেব্রুয়ারি ৫০ ওভারের প্রস্তুতি ম্যাচে পাঁজরে আঘাত পেয়েছিলেন। সেই ব্যথায় সোমবার সকালে অনুশীলন করতে গিয়ে ব্যথায় আর চালিয়ে যেতে পারেননি। তার খেলা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাটিংয়ের সময় হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লেগেছিল মিঠুনের। তার গ্রেড ওয়ান পর্যায়ের ইনজুরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেটি সত্য হলে ৭ দিন তাকে মাঠের বাইরে থাকতে হবে। সত্য না হলেও বুধবারের ম্যাচটি খেলতে পারবেন না সেটি প্রায় নিশ্চিত। তাই বাধ্য হয়ে টেস্ট স্পেশালিস্ট মুমিনুলকে ডানেডিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি গত ৬ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ড গেছেন এবং ক্রাইস্টচার্চে টেস্ট সিরিজের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। সবমিলিয়ে তাই বুধবার মাশরাফিদের জন্য অনেক বড় অগ্নিপরীক্ষা। সেই কঠিন পরীক্ষায় জেতার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জই উতরে যেতে হবে বাংলাদেশ দলকে। ইতোমধ্যে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ১১ ওয়ানডে খেলে কোন সুবিধা করতে না পারা দলটি কি বুধবার হুট করে আমূল বদলে যেতে পারবে? সেটি করতে হলে ব্যাটসম্যানদেরই কিছু করতে হবে।
×