ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ঢাকার দিনরাত

আসন্ন উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী ডামাডোল বেশ জমে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে, অন্তত আমি যেখানে থাকি সেই উত্তরাতে। কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরাই সবচেয়ে সক্রিয়। মহিলারাও পিছিয়ে আছেন বলে মনেই হচ্ছে না। প্রতিদিনই খবরের কাগজের ভেতরে পাচ্ছি প্রার্থীদের সাদাকালো ছোট্ট প্রচারপত্র। ফল আর খেলার উপকরণের মার্কাধারী দুই প্রার্থী সম্ভবত একটু বেশি সক্রিয় প্রচার কর্মকা-ে। ঘরের ভেতরেই কানে আসছে মাইকে তাদের প্রচার। গানের সুরে সুরেও চলছে এই প্রচার। তাছাড়া ঘরের বাইরে গেলে মনে হচ্ছে আকাশ বুঝি আড়ালে পড়ে যাবে তাদের ঝুলন্ত পোস্টারের কারণে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে মাস দেড়েক আগের জাতীয় নির্বাচনের তুলনায় কোন দিক দিয়েই কম জৌলুস আর উৎসবের নয় এই নির্বাচন। কবির বিদায় একে একে পঞ্চাশের সব ক’জন প্রধান কবিই চোখের আড়াল হলেন। শামসুর রাহমান আশি পেরোননি। আল মাহমুদ অবশ্য আশি পেরিয়েছিলেন কয়েক বছর আগেই। তবু মনে হতো আরও কয়েক বছর তিনি এই ঢাকা শহরে থাকবেন। টগবগে যৌবনদিনে, সুকান্ত কথিত সাহস ও সৌন্দর্যের বয়স আঠারোতে এসেছিলেন ঢাকায়। মৃত্যুর পর তাঁর ঢাকা থেকে প্রস্থান। শুক্রবার রাত এগারোটার পরে তিনি পৃথিবীর মায়া কাটান। শুক্রবার দিনটিতেই তাঁর বিদায় হোকÑ এমন একটি আকাক্সক্ষা প্রকাশ করেছিলেন একটি কবিতায়। পরদিন শনিবার সকালে জনকণ্ঠ কার্যালয়ে গেলে সহকর্মী লেখক তাপস মজুমদার বললেন, আজ হয়তো আপনাকে কবি আল মাহমুদকে নিয়ে সম্পাদকীয় লিখতে হবে। আমাদের এই এক নিয়তি। বিদায় নেয়া কবির জন্য একটু স্মৃতিকাতর হওয়ার ফুরসত মেলে না, মেলে না প্রয়াত কবিকে নিয়ে নিজ কবিমহলে একটু আলাপচারিতার সুযোগ। যা হোক, সম্পাদকীয় সভায় আমাদের নির্বাহী সম্পাদক, সাহিত্যিক স্বদেশ রায় কবি আল মাহমুদকে নিয়ে সম্পাদকীয় রচনার কথাটিই বললেন। অনুমোদন পাওয়া গেল উপদেষ্টা সম্পাদকের কাছ হতেও। দুই তিনটির বেশি পত্রিকা কি কবিকে নিয়ে সম্পাদকীয় লিখবে? জনকণ্ঠ বিশেষ ব্যতিক্রম। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলÑ এই দুই কবির জন্ম ও প্রয়াণবার্ষিকীতে সম্পাদকীয় লেখার রেওয়াজ রয়েছে। কবিতাপ্রেমী হিসেবে বরাবরই বিষয়টি আমার ভাল লাগে। সে যাক, দুপুরে লিখতে বসে যাওয়া। সেদিন আবার বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে কবিতা পড়তে যেতে হবে। কবিতা পড়ার আগে কবি আল মাহমুদের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করবÑ এমনটা ভেবে রেখেছি। এই সুযোগে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর প্রশংসা করতে চাই। তিনি কবি বলেই বোধকরি প্রতিদিন কবিদের স্বকণ্ঠে কবিতা শোনানোর রীতিটি চালু করলেন। আরেকটি কাজও তিনি করেছেন। প্রতিদিন পাঁচজন করে লেখক তাঁদের নতুন বই নিয়ে আলাপচারিতার সুযোগ পাচ্ছেন। এর ভেতর দিয়ে লেখক-পাঠক যে সাঁকো গড়ে উঠবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। বাংলা একাডেমিতে কবি আল মাহমুদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হলে তিনি শ্রদ্ধা জানালেন। ভাবছিলাম কবি আল মাহমুদকে নিয়ে সম্পাদকীয় রচনার তুলনায় প্রবন্ধ লিখে ফেলাই হয়তো সহজ। তাঁর কবিতা থেকে বেশি উদ্ধৃতি দেয়াও কি ঠিক হবে? যা লিখলাম সেখান থেকে একটি স্তবক এখানে তুলে দিতে ইচ্ছে করছে : ভাষার জাদুকরই ছিলেন তিনি। কোত্থেকে যে তুলে আনতেন চমক লাগানো ছন্দোময় বিদ্যুল্লতা, গ্রামবাংলার অকৃত্রিম নান্দনিক ছবি তাতে কথা বলে উঠতো। পাওয়া যেত নদী ও নদীকুলের সৌরভ, নরনারীর একান্ত সম্পর্কের বিবিধ বিচিত্র ধ্বনি। আঞ্চলিক শব্দও যে আধুনিক কবিতার মূলস্রোতে এসে আছড়ে পড়তে পারে অবিনাশী ঢেউয়ের মতোÑ তা চমৎকারভাবে প্রথম বোঝা গেল আল মাহমুদের কবিতায়। মানুষের অন্তরের অন্তস্তলে তাঁর কবিতার চরণ তুলতো অনুরণন। তাঁকে অভিধা দেয়া হয়েছিল ‘সোনালী কাবিনের কবি’ বলে। আপন কাব্যের নামে অভিধা পাওয়া কবির নিজেরও প্রিয় ছিল ওই সনেটগুচ্ছ। লিখেছিলেন, ‘সোনার দিনার নেই, দেনমোহর চেয়ো না হরিণী/যদি নাও, দিতে পারি কাবিনবিহীন হাত দুটি। একটি বিষয় আমরা লক্ষ্য না করে পারি না যে, কবির মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়ার পক্ষে-বিপক্ষে চলেছে তুমুল আলোচনা। বলা যায় বাদ-প্রতিবাদ লেগেছে। আমরাই এমন একটা নিয়ম চালু করে ফেলেছি লেখক-সংস্কৃতিজনের মরদেহ সেখানে নেয়ার। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে মরদেহ নেয়া বা না নেয়ার প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়। এইসব আলাপ-সালাপের ভেতর মনের ভেতর উঁকি দিয়ে গেল একটি কথাই- সত্যিকারের লেখক-শিল্পীরা কি এর মুখাপেক্ষী থাকেন? এসব ভাবনা বাদ দিয়ে বরং কবির বিদায়ে কবি ও কবিতানুরাগীদের প্রতিক্রিয়া পাঠই আমার কাছে জানার বিষয় হয়ে উঠল। কয়েকটি মন্তব্য পাঠকের সঙ্গে শেয়ার করা যেতে পারে। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলছেন : ‘সোনালি কাবিন’-এর অমর ¯্রষ্টা, বাংলা কবিতার এক চিরায়ত কণ্ঠ আল মাহমুদ এখন চিরজীবিতের দলে। তাঁর সৃষ্টিশীল নান্দনিকতা উত্তরকালের সতর্ক মনোযোগের বিষয়। তিনি বাংলা কবিতার এক স্বতন্ত্র শৈলী। আমরা তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করি।’ কবি-কথাসাহিত্যিক কাজল শাহনেওয়াজ লিখেছেন : ‘সকালে উঠেই খবরটা পেলাম। আমার মনটা কবির মৃত্যু সংবাদে তারপর থেকে যারপরনাই ব্যথিত, ব্যথিত, ব্যথিত। আল মাহমুদকে আমি কাছ থেকে দেখেছি, দূর থেকে দেখেছি। কবিতায় দেখেছি। গল্পে, উপন্যাসে, আড্ডায়। রাজনৈতিকভাবে, সময়ের সাক্ষী হিসেবে, কথা বলায়, না বলায়। কিভাকে একজন কবি শুধু তাঁর কবিতার জন্য কতদূর প্রেম পেতে পারেন, একজন কবি কত অনায়াসে ম্যাজিক তৈরি করতে পারেন, একজন কবি কত সহজে তার কৌমসমাজকে স্পষ্ট করতে পারেন একটি মাত্র জীবদ্দশায়, তাঁকে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। ভুল ও শুদ্ধ দুই প্রকার শক্তির কাছ থেকেই নিয়ত নিয়েছেন কবিতা। গ্রাম আর শহর থেকে পাঠ করেছেন মানুষকে। আসমানী ও মনুষ্য জ্ঞান নিয়ে কাজ করেছেন উনি। কিন্তু তার অশক্ত দুটি হাত ভর্তি ছিল কবিতার কৌশল। তাঁর সজল চোখ দুটি হৃদয়ের সঙ্গে সরাসরি লাগানো ছিল। তার ভাষা অস্তিত্ব ছিল দেশাত্ববোধক। রাজনীতির কারেক্টনেস শত শত বছর লাগে প্রমাণ করতে। আজ-কাল-পরশু দিয়ে সব কিছু যাচাই করা কঠিন। সেটা আল মাহমুদ বুঝেছেন কী বোঝেন নাই, আমরা তো মর্ত্যরে মানুষ সে সব বলার সাধ্য আমাদের নাই। লেখক আলমগীর শাহরিয়ারের বক্তব্য ভেবে দেখার মতো। তিনি লিখেছেন: ‘বিএনপি জামানায় জামায়াতীদের রমরমা অর্থনৈতিক অবস্থায় চরম অর্থকষ্টে থাকা আল মাহমুদ তাদের আর্থিক সহযোগিতা নিয়েছেন। জামায়াত-শিবিরের অনেক অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের মিডিয়ায় তাঁর সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। অথচ তাঁর লেখা ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’...পড়লে দেখি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মোড়াইল গ্রামে জন্ম নেওয়া মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ কৈশোরেই বাম রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়েন। শুধু কবি হবেন বলে ঢাকা শহরে ফুল আঁকা একটি টিনের ট্রাঙ্ক হাতে নিঃস্ব অবস্থায় এসেছিলেন। লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য নাগরিক জীবনে মোহান্ধ কবি লিখেছিলেন, ‘যদি পায়ে পড়ে কহ, তবুও ছেড়ো না শহর।’ প্রশ্ন ওঠে কৈশোরেই প্রগতিশীল রাজনীতির দীক্ষা নেওয়া কবি স্বাধীনতা উত্তর সময়ে প্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়ায় আশ্রয় নিলেন কেন? উচ্চশিক্ষা নিতে না পারা কবিকে নাগরিক জীবনে পদে পদে কতিপয় ফাঁপা জাত্যাভিমানে ভরা উচ্চশিক্ষিতদের অবহেলার শিকার হতে হয়েছে, বঞ্চিত হয়েছেন তাঁর প্রাপ্য সম্মান থেকে, তাঁর সহজাত প্রতিভা, সৃজন ও সৃষ্টিশীলতাকে পাশ ঠেলে গ্রাম্য কবি বলে নিগৃহ ও অবহেলার শিকারও হয়েছেন জীবনভর...এসব কী তাকে প্ররোচিত করেছিল সুযোগসন্ধানী প্রতিক্রিয়াশীলদের সহানুভূতি ও সম্মান নিতে? এ নিয়ে সহজে কোন উপসংহারে পৌঁছানো যাবে না। নিশ্চয়ই আরও আলোচনা ও বিতর্ক হবে।’ বইমেলায় বৃষ্টি সাধারণত মাঘের শেষে একটু বৃষ্টি হয়। এবার হলো ফাল্গুনে। আর ঢাকায় ঝড়-বৃষ্টি হলে আমার প্রথমেই বইমেলার কথাই মনে পড়ে। মনে হয়- আহা সেখানে আমাদের কত কত বই পড়ে আছে। সেসব ভিজে একসার হয়ে গেল নাতো! প্রকাশক সাহেবের যে আর্থিক ক্ষতি হয়ে যাবে। এখন উদ্যানের ভেতর মেলা হওয়ায় আরও বেশি করে দুশ্চিন্তা হয়। সাবধানী মানুষ বৃষ্টির প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। আবহাওয়া বার্তার দিকে নজর রাখেন। ফলে তাদের ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। রবিবার সকালে ঢাকায় কালো মেঘ করে বজ্রসহ বৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টির ঝাপটা ভালই লেগেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার বইয়ের স্টলগুলোতে। অনেক দোকানের বই ভিজে গেছে। বৃষ্টির পর দোকানের কর্মীরা এসব ভেজা বই শুকাতে দেয়ার কাজে লেগে যান। নতুন ঔপন্যাসিকের উপন্যাস আগস্ট আবছায়া একুশে চলে এলেও এ বছর এই কলামে একটি বইয়ের কথাও যে উল্লেখ করিনি, সেটি ভেবে বিস্মিতই হচ্ছি। আজ মঙ্গলবার যে নতুন ও বিশেষ একটি উপন্যাস বইমেলায় আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে একটু কিছু বলা যেতে পারে। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট রাতের মিনিট বাই মিনিট উল্লেখ আছে আগস্ট আবছায়া উপন্যাসে। তার আগে সামান্য ভূমিকা। বইমেলা উদ্বোধনের ঠিক নয়দিন আগের কথা। মাসরুর আরেফিনের ফোন পেলাম, আজকেই তাঁর কর্মস্থলে যেতে হবে। দাবি আছে বিলক্ষণ, তাই এমনভাবে ডাকতে পারেন। সকালের কাগজে মাসরুরের ছবি দেখেছি। সব কাগজেই নিশ্চয়ই থাকার কথা। খুব গতিময় আর সৃজনশীল একটি সেরকারী ব্যাংকের শীর্ষপদে আসীন হয়েছেন তিনি, সে খবরটিই ছবিসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সেদিন। আমার যেতে একটু দেরি হয়ে গেল। এমন দিনে না যাওয়াই ভাল, এই দোটানায় ভুগতে ভুগতে। কত মানুষ যে আসছেন ফুলের কেয়ারি হাতে অভিনন্দন জানাতে। তাঁর কক্ষ থেকে বিদেশী ক’জন বেরিয়ে যাওয়ার পর আমাকে ডেকে নিলেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কক্ষ যতটা বড় হয়, তার চেয়েও কি খানিকটা বেশি বড় এটি? আমাকে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে মহাআসনটি পিছনে ঠেলে সহাস্যে এগিয়ে এসে আলিঙ্গনে বাঁধলেন। আমি তাঁর আবেগ অনুধাবন করতে পারছিলাম বেশ। সেই নব্বুই দশকের গোড়া থেকেই তো তাঁকে চিনি। পড়তেন ভারতে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী সাহিত্যে। আমি সদ্য সাহিত্য পত্রিকা মাটি তৈরির আনন্দযজ্ঞে যুক্ত হয়েছি। মাসরুর চিঠি লিখে জানালেন বিশ্বসাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ পাঠাচ্ছেন কিছু দিনের মধ্যে। ডাকে এসে গেল প্রবন্ধ। এরপর আর থামাথামি নেই- মার্কেজ, কাফকা, স্যঁ ঝন পের্স- কী নয়! ছুটিতে ঢাকায় এসেই মাটি পত্রিকায় আমার সঙ্গে দেখা করে গেলেন। তারপর... থাক সেসব কথা। সাহিত্যপাঠকমাত্রই জানেন, আমাদের এই মাসরুর আরেফিন বাংলা ভাষায় কাফকার গল্পসমগ্র অনুবাদ করেছেন; করেছেন হোমারের ইলিয়াড। অনুবাদ অনেকেই করেন, কিন্তু তাঁর বিশ্লেষণ টিকাভাষ্য এবং বিশদ পাঠ-পর্যালোচনা দেন ক’জন? মাসরুর আজ কেন ডেকেছেন আমি অনুমান করতে পারছি। প্রথম উপন্যাস ‘আগস্ট আবছায়া’ মাত্র শেষ করেছেন। সেটি নিয়ে কথা বলবেন। কথা তো অনেক হলোই, তবে সেটিই সব নয়। স্পাইরাল বাইন্ডিং করা ঢাউশ একটি কম্পোজকৃত পা-ুলিপি আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন... সে যাক। কথা যেন ফুরোয় না। এই উপন্যাস নিয়ে তাঁর কত কথা! দুতিনটে অধ্যায় থেকে পড়েও শোনালেন খানিকটা করে। শিহরিত হলাম। এমন লেখা কি আগে পড়েছি? প্রথম উপন্যাসের মাধ্যমেই মাসরুর বাংলা সাহিত্যে একটা সমীহ-জাগানো আসন করে নেবেন- এমনটা বিশ্বাস জন্মাল। পরদিন রাজশাহীতে কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হককেও তিনি পা-ুলিপির একখানা কপি পাঠালেন। এ ফোর সাইজের প্রায় ৩০০ পাতা পড়তে সময় তো লাগবেই। ছাপালে এটি ৪৫০ পাতা হবে নিশ্চয়ই। ঘুমোনোর সময় ছাড়া ওটি আমার চোখের সামনেই থাকতে লাগল। অফিসে যাওয়া-আসার পথেও পড়ি; দেখলাম এর এমন আকর্ষণ যে অফিসের কাজ ঠেলে সরিয়ে রেখে, এমনকি বাসায় ফিরে ওয়াশরুমে না গিয়ে, ঘরের পোশাক না পরেই সোফায় বসে বইটি পড়ে চলেছি। এমনই এক ঘোর আর টান। উপন্যাসখানা তখনও আমার শেষ হয়নি। হাসান ভাই কি পড়তে শুরু করেছেন? ক’দিন পর ফোনে উপন্যাসটার কথা জিজ্ঞেস করলে একটানা অনেকক্ষণ এটি নিয়ে বলে গেলেন তিনি। সেই বক্তব্যের ভেতর থেকে কয়েকটা লাইন যদি গুছিয়ে বলতে চাই তবে তা হবে এমন- ‘অসাধারণ উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যে এমন লেখা আছে বলে আমার মনে হয় না। মাসরুরের পা-িত্য, বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞানের পরিধি- সব মিলিয়ে আমি মুগ্ধ। প্রত্যেক পাঠকের জন্যে এ অনন্যগ্রন্থটি অবশ্যপাঠ্য।’ একজন ঔপন্যাসিকের জন্ম প্রত্যক্ষ করার মধ্যে আশ্চর্য এক বিস্ময় ও বিরল আনন্দ রয়েছে। এ বছর আমি একটু অনিয়মিত বইমেলায় যাচ্ছি। প্রথমা প্যাভিলিয়নের আশপাশ দিয়েও হাঁটি। কিন্তু জানি, যেদিন আগস্ট আবছায়া আসবে, সেদিন সকালবেলায় ফোন পাব মাসরুরের। সেদিন বইমেলায় নিশ্চয়ই যাব, দূর থেকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখব মাসরুর আরেফিনকে, যেমন বহু বছর আগে কাফকা বেরুনোর দিন করেছিলাম...। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ [email protected]
×