ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালীর ভাষা আন্দোলন যুদ্ধ শুরুর ইতিহাস

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বাঙালীর ভাষা আন্দোলন যুদ্ধ শুরুর ইতিহাস

(গতকালের পর) এ দেশের মানুষের নিজের ভাষার ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ ও শ্রদ্ধাবোধের গভীরতা সম্পর্কে পশ্চিম পাকিস্তানীদের ন্যূনতম ধারণা ছিল না। সে ভালবাসা এতটাই গভীর ও নিখাদ যে, এ জন্য মানুষ নিজের জীবনকেও তুচ্ছ করেছে। মাতৃভাষার জন্য পৃথিবীর অন্য কোন জাতিকে রাজপথে সংগ্রাম করে জীবন দিতে হয়নি। এখানেই বাঙালী জাতির অবস্থান অন্য সকল জাতিগোষ্ঠীর চেয়ে অনেক ওপরে। সহজেই অনুমেয় যারা মাতৃভাষার অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংগ্রামরত জনতার রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছে তাদের অবস্থান এই পৃথিবীতে কোথায়! সে জন্যই আজ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মান দেয়া হয়েছে। এই স্বীকৃতি মি. জিন্নাহর ১৯৪৮ সালের দম্ভোক্তির যথাযথ প্রত্যুত্তর। মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধাচরণ করে কখনই তাদের সঙ্গে নিয়ে বসবাস করা যায় না। বাংলাদেশের পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার জন্য এ দেশের মানুষের ধারাবাহিক সংগ্রাম ও পরিণতিতে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে নিয়ে আসা এবং শত্রুকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করার যে ইতিহাস বাঙালী জাতি সৃষ্টি করেছে, তা বিশ্বের সকল স্বাধীনতাকামী জনগণের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে চিরকাল। জিন্নাহ্র উত্তরসূরিরা পাকিস্তানের ধ্বংসকে ত্বরান্বিত করেছে একজন দূরদর্শী নেতার গুণাবলীর অন্যতম হচ্ছে মানুষের আচরণের মাধ্যমে প্রকাশিত তার মনোভাব বুঝতে পুরোপুরি সক্ষম হওয়া এবং সেভাবেই নিজের রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করা। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই যে, পাকিস্তানের কোন নেতাই এ গুণে গুণান্বিত ছিলেন না। পূর্ব বাংলায় এসে মি. জিন্নাহ প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন, যে কোনভাবে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করিয়ে নেয়া যায় কী-না। এ উদ্দেশ্যেই তিনি ১৯৪৮ সালের ঢাকা সফরের আগেই খাজা নাজিমুদ্দীনকে নির্দেশ দেন সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সেই স্বীকৃতি আদায় করে নেয়ার জন্য। জিন্নাহর প্রত্যাশা ছিল যে, ঢাকার অবাঙালী খাজা নাজিমুদ্দীন উর্দুর পক্ষে এ ধরনের একটি চুক্তি করতে সক্ষম হবেন! কিন্তু বাস্তবে সবকিছু ঘটলো সম্পূর্ণ অন্যরকম। খাজা নাজিমুদ্দীন বরং সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সকল দাবি মানতে বাধ্য হলো। স্বভাবতই তা ছিল মি. জিন্নাহর জন্য হতাশাব্যাঞ্জক। পরবর্তী সময়ে খাজা নাজিমুদ্দীন জিন্নাহর নির্দেশে পরিষদের সঙ্গে করা চুক্তির সকল শর্ত অস্বীকার করে এবং মি. জিন্নাহর বাংলা সফরের আগেই চুক্তিটিকে বাতিল বলে ঘোষণা করে। উপরন্তু নাজিমুদ্দীন প্রস্তাব দেন যে, বাংলাকে পাকিস্তানের নয় শুধু পূর্ব বাংলার দাফতরিক ভাষার স্বীকৃতি দেয়া হবে এই শর্তে যে, এই প্রদেশে ইংরেজীর সকল প্রকার ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলোতে যথারীতি সকল ভাষাই প্রযোজ্য থাকবে। খাজা নাজিমুদ্দীনের নতুন প্রস্তাব ছিল বিশ্বাসঘাতকতার নামান্তর। এ ধরনের চুক্তির বরখেলাপ পাকিস্তানী শাসকেরা বাংলার মানুষের সঙ্গে বার বার করেছে। ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া, আইয়ুব খানের শাসনামলের নিষ্পেষণ, বাংলার সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার, সত্তরের নির্বাচনের পর আলোচনার নামে বিশ্বাসঘাতকতা ও বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা হস্তান্তরের বদলে তাঁকে বন্দী করে পাকিস্তানের কারাগারে অন্তরীণ করা এবং ২৫ মার্চের পর থেকে নির্বিচারে গণহত্যা চালানো। এমন আরও হাজারো বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাসে জর্জরিত পাকিস্তানের রাজনীতি। এ ধরনের রাজনীতিই পাকিস্তানে শোষণ ও বৈষম্যের অন্যতম প্রধান কারণ। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পর বাহ্যিক কিছু পরিবর্তন ব্যতীত পাকিস্তানের রাজনীতির মৌলিক চরিত্রের বিশেষ কোন পরিবর্তন বা কোন নীতিগত উত্থান পরিলক্ষিত হয়নি, বিশেষত রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত বিষয়ে। ঢাকার অবাঙালী মুসলিম লীগার ও পশ্চিম পাকিস্তানী ক্ষমতা বলয়ের একান্ত বিশ্বাসভাজন খাজা নাজিমুদ্দীন গবর্নর জেনারেল হন, আর আরেক তাবেদার নুরুল আমিনকে নিযুক্ত করা হয় পূর্ব বাংলার চীফ মিনিস্টার হিসেবে। ফলত রাষ্ট্রভাষার বিষয়টির কোন ইতিবাচক সুরাহা ঘটে ওঠার সম্ভাবনা আপাতত বিলুপ্ত হয়। পাকিস্তানী শাসকেরা নীতিগতভাবেই পূর্ববাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের পরিপন্থী উদ্যোগ গ্রহণে মনোনিবেশ করে। অপরদিকে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সাল নাগাদ রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত দৃশ্যমান কোন বড় সংঘাত বা উদ্যোগ পরিলক্ষিত না হলেও বাংলার মানুষের মাঝে বিভিন্নভাবেই ভাষাগত ও জাতিগত ঐক্য গঠন প্রক্রিয়া সুস্পষ্ট রূপ ধারণ করতে থাকে। এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে থাকে ১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগের বিপরীতে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের মাধ্যমে। বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গনের এই পরিবর্তনই মূলত পরবর্তী সময়ে বাংলার মানুষের বিশাল রাজনৈতিক সংগ্রামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। তরুণ নেতা হওয়া সত্ত্বেও শেখ মুজিবুর রহমান এই বিশাল পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। যদিও রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত বিষয়টি আপাতদৃষ্টে কিছুকালের জন্য স্তিমিত হয়ে পড়ে পাকিস্তানের অন্যান্য রাজনৈতিক ডামাডোলের কারণে, তথাপি বাংলার মানুষ কখনই এই ইস্যুকে বর্জন করেনি। পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে এর স্বীকৃতির বিষয়টি বাংলার মানুষের মানসপটে ছিল সদা জাগরুক। বরং আপাতদৃষ্টে শান্ত পরিশে ছিল এক মহাপ্রলয়ের পূর্বাভাস। জনতা ধীরে ধীরে একদিকে জাগরিত হচ্ছিল জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে, অপরদিকে একটি রাজনৈতিক মেরুকরণের পথে অগ্রসর হচ্ছিল বাংলার রাজনীতি। মুসলিম লীগের তরুণ নেতৃত্বে যেখানে শেখ মুজিবের উত্থান ঘটছিল ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে, সেই নেতৃত্ব সেক্যুলার মতবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে অগ্রসরমাণ ছিল। ফলত ১৯৪৯ সালেই বাংলার মাটিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে মুসলিম লীগের পতন শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের গোড়াপত্তন ও তারপর তরুণ শেখ মুজিবের উদ্যোগে এই দলের অসাম্প্রদায়িক নীতির বিকাশ এবং আওয়ামী লীগ নাম ধারণ বাংলার রাজনীতিকে এ দেশের গণমানুষের রাজনীতিতে পরিণত করে। অনাদিকালের সম্প্রীতির সমাজ নিজের অবস্থান বুঝে নেয় ও ধর্মান্ধ পাকিস্তানী ভাবধারাকে প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ববাংলায় মুসলিম লীগের ভরাডুবি হয়, যা পাকিস্তানী শাসকদের করে তোলে আরো হিংস্র ও প্রতিশোধপরায়ণ। পাকিস্তানের পরবর্তী ইতিহাসের গতিধারা প্রবাহিত হতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানীদের ষড়যন্ত্র ও হিংস্রতার বিরুদ্ধে বাংলার মানুষের নিজের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের রাজনীতিতে। ১৯৪৮ সালের ২৭ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান দশ দিনের সফরে ঢাকা এলে ডাকসুর তরফ থেকে তাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। এই সমাদরের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে বাংলার চলমান দাবিটিকে আবার স্মরণ করিয়ে দেয়া। ছাত্ররা এই উদ্দেশ্যে লিয়াকত আলীতে যে স্মারকলিপি প্রদান করে তার ভাষান্তর ছিল এ রকম : অমরা যদিও উর্দুকে ষরহমঁধ ভৎধহপধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি, তথাপি আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, দেশের সর্ববৃহৎ প্রদেশের জনগণের মাতৃভাষা হিসেবে এবং পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে উর্দুর সঙ্গে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হোক। অন্যথায় আমরা পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকেরা সর্বদাই প্রতিকুলতা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে থাকব। ছাত্রদের এই দাবির প্রতি লিয়াকত আলী খান ছিলেন অনমনীয় ও সম্পূর্ণ অবিচলিত। তাঁর আচরণে এটাই প্রকাশিত হলো যে, বিষয়টি মীমাংসিত এবং এ বিষয়ে কোন আলোচনার অবকাশ নেই। এভাবেই মি. জিন্নাহর উত্তরসূরিরা ধারাবাহিকভাবে ঘটনা পরম্পরায় জিন্নাহ ঘোষিত অর্বাচীন সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে যাওয়ার পথে চলতে থাকে। বাংলা ভাষার আরবীকরণের প্রচেষ্টা বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে সবচেয়ে মারাত্মক প্রচেষ্টার একটি ছিল আমাদের চিরসুন্দর বাংলা অক্ষর পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত। আমাদের অক্ষরের স্থলে আরবী হরফে বাংলা লেখার পাকিস্তানী সিদ্ধান্ত। ‘ইসলামের স্বার্থে বাংলা ভাষার আরবীকরণের’ এই প্রস্তাবের উত্থাপক ছিলেন বাংলাভাষী শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান। আজ অবাক বিষ্ময়ে ইতিহাসের পাতায় পাতায় আমরা বার বার খুঁজে পাই এই নির্মম সত্য যে, বাংলার মাটিতেই জন্ম হয়েছে কত শত বিশ্বাসঘাতকের। মীরজাফর থেকে শুরু করে মোশতাক-জিয়া, কত বিদেশী চরের পদচারণায় কলঙ্কিত হয়েছে আমাদের মাতৃভুমি। ফজলুর রহমান তার কুখ্যাত ‘বাংলা ভাষার আরবীকরণের’ প্রস্তাবটিকে উপস্থাপন করে ১৯৪৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর করাচীতে অনুষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান শিক্ষক সম্মেলনে। এই উদ্ভট প্রস্তাবের সমর্থক গোষ্ঠীর মতে পাকিস্তানের ঐক্য, সংহতি এবং সাধারণ শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বাংলা অক্ষরের বিলুপ্তির প্রয়োজন এবং এর পরিবর্তে আরবী হরফ প্রবর্তন আবশ্যক। পাকিস্তানকে টিকিয়ে রেখে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এভাবেই এই দেশটির জন্মলগ্ন থেকেই এ দেশের শাসকশ্রেণী যত্র তত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যবহার করেছে। এই শাসকশ্রেণীর চেতনায় সর্বদাই এটাই বিদ্যমান ছিল এবং আছে যে, তারাই ইসলামের রক্ষক এবং তাদের এই ‘পবিত্র’ কর্ম সমাধা করার জন্য তারা যখন যেভাবে তাদের প্রয়োজন সেভাবেই মানুষের ওপর অত্যাচারের খড়গ নামিয়ে আনতে পারে। অথচ ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় যে, ইসলামের এসব রক্ষকের সবারই জীবনাচরণ ছিল প্রকৃত ইসলাম থেকে শত যোজন দূরেই শুধু নয়, বরং চরম ইসলামবিরোধী জীবনযাপনে ছিল এরা অভ্যস্ত। মি. জিন্নাহ নিজেই উত্তরাধিকার সূত্রে ছিলেন একজন শিয়া মতাবলম্বী। আর তার জীবনযাপন পদ্ধতি ছিল পুরোপুরি অনৈসলামিক। প্রত্যহ সকালের ব্রেকফাস্টে শূকরের মাংস ও মদ্যপান নিশ্চয়ই ইসলামসম্মত নয়! অথচ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতার প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় ছিল এসব আচরণ। পরবর্তী শাসকদের মধ্যে আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানসহ আরো অনেকের জীবনযাপন পদ্ধতি ছিল অনেক বেশি অনৈসলামিক। এসব শাসক সর্বদাই নিজেদের বিকৃত ও বিকারগ্রস্ত দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, গণতন্ত্র, অধিকার ও সুশাসনের বিষয়গুলো বিচার করত। এ জন্যই সে সময়ে এবং এখনও পাকিস্তানের সকল প্রদেশের সব অধিবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করা, সাম্য ও সৌহার্দ্য বজায় রাখা, সবার জন্য ন্যায়বিচার কায়েম করা পাকিস্তানের কাঠামোর অভ্যন্তরে একটি অবান্তর ধারণা হিসেবে ছিল এবং রয়ে গেছে এখনও। ১৯৪৯ সালের পেশোয়ার কনফারেন্সের পর পাকিস্তানের শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ড পাকিস্তানের সব ভাষায় কেবল আরবী হরফ ব্যবহারের সুপারিশ করে। এটা ছিল পাকিস্তানী শাসকদের আরেকটি ধূর্ত চাল। কারণ, পাকিস্তানের অন্য সব ভাষায়ই আদি থেকে আরবী হরফ ব্যবহৃত হতো। অর্থাৎ পরিবর্তনের বিষয়টি প্রযোজ্য ছিল কেবল বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে। পাকিস্তানীরা সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের কাহিনী ফাঁদল যে, বাংলা সাহিত্য এমন কি অক্ষরগুলো নাকি হিন্দুয়ানী বা পৌত্তলিকতার সঙ্গে সম্পর্কিত। কাজেই এই অক্ষরের সঙ্গে পাকিস্তানের ইসলামী হরফ মিলেমিশে থাকতে পারে না। পাকিস্তানীরা আরবীকরণের মধ্যে বাংলা ভাষার উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছিল, কিন্তু বাংলার মানুষ দেখছিল কেবলই নিজ ভাষার অপমান ও ধ্বংস। তাই এই নতুনতম ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনতার সংগ্রাম নতুন করে দানা বাঁধতে শুরু করল। চলবে... লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
×