ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফেসবুক ডিজিটাল গ্যাংস্টার!

প্রকাশিত: ১১:৪১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ফেসবুক ডিজিটাল গ্যাংস্টার!

ফেসবুক উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও প্রতিযোগিতা আইন ভঙ্গ করেছে এবং দ্রুত এটিকে আইনের অধীনে আনা উচিত বলে পার্লামেন্টারি এক রিপোর্টে বলা হয়েছে। ওই রিপোর্টে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ও এর নির্বাহীদের ‘ডিজিটাল গ্যাংস্টার’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। ফেসবুকের বিরুদ্ধে বিকৃত তথ্য ও ভুয়া সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগ বিষয়ে ডিজিটাল, কালচার, মিডিয়া ও স্পোর্ট কমিটি ১৮ মাস তদন্ত করে। কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ফেসবুকের বিরুদ্ধে তদন্তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং রাশিয়া নির্বাচন প্রভাবিত করার যে চেষ্টা করেছে সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। কমিটির চেয়ারম্যান ড্যামিয়েন কলিন্স সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত যেসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করি তার মাধ্যমে অজ্ঞাত সূত্র থেকে ‘ডার্ক এ্যাডভারটাইজমেন্ট’ ছড়ানো হয়েছে। এর ফলে গণতন্ত্র ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কারণ নাগরিকদের মধ্যে এসব বিকৃত তথ্য ছড়ানো হচ্ছে শত্রুতামূলকভাবে। কমিটির রিপোর্টে ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট অবমাননার অভিযোগ করা হয়েছে। কারণ তার কাছে তিনটি পৃথক দাবির বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এর পরিবর্তে তিনি একজন জুনিয়র কর্মকর্তাকে পাঠান যিনি কমিটির প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি। রিপোর্টে সতর্কতা উচ্চারণ করে বলা হয়, গণতন্ত্র ব্যাহত করতে রুশ সরকারের এজেন্টসহ অন্য যেসব বিদেশী কুশীলব হস্তক্ষেপ করতে চায় তাদের প্রতিহত করতে ব্রিটিশ নির্বাচনী আইন উপযুক্ত নয়। রিপোর্টে ২০১৭ সালের সাধারণ নির্বাচন, ২০১৬ সালের ইইউ গণভোট ও ২০১৪ সালের স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষের গণভোটে ‘বিদেশী প্রভাব, বিকৃত তথ্য, অর্থায়ন, ভোটারদের নিয়ন্ত্রণ ও তথ্য আদান-প্রদান’ বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। লেবার পার্টি ওই কমিটির রিপোর্টের ফল দ্রুত অনুমোদন করে। লেবার পার্টিও উপনেতা টম ওয়াটসন ঘোষণা করেন, ‘লেবার কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত- টেক কোম্পানিগুলোর নিজস্ব বিধি-বিধান দ্বারা পরিচালিত যুগের অবশ্যই দ্রুত অবসান হওয়া দরকার।’ তিনি বলেন, ‘যেসব অপশক্তি গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে টেকনোলজি ব্যবহার করছে তাদের প্রতিরোধে এবং পুঁজিবাদের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রবণতা ঠেকাতে ব্যাপক ক্ষমতা প্রয়োগ ও নিষেধাজ্ঞার সুযোগ রেখে স্বতন্ত্র আইন চাই।’ সামাজিক মাধ্যমের ফলে কী ক্ষতি হচ্ছে- এ বিষয়ে আলোচলা করতে সংস্কৃতিমন্ত্রী জেরেমি রাইট এ সপ্তাহেই মার্ক জাকারবার্গের সাক্ষাত করবেন। জাকারবার্গের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ফেসবুক নিয়ে কমিটির উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরতে তিনি চাপের মধ্যে থাকবেন। ১০৮ পৃষ্ঠার ওই রিপোর্টে ফেসবুকের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীদের অধিকারের চেয়ে শেয়ারহোল্ডারদের মুনাফাকে প্রাধান্য দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। ফেসবুক কোম্পানিকে অভিযুক্ত করে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, তথ্যের নিরাপত্তার চেয়ে ফেসবুক মুনাফার দিকে বেশি নজর দিয়েছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘আমাদের কাছে পরিষ্কার যে, যখন কোন ঘটনা গুরুতর আকার ধারণ করে তখনই কেবল ফেসবুক পদক্ষেপ নেয়।’ ব্যক্তিগতভাবে জাকারবার্গকেও সমালোচনা করেছে কমিটি। কারণ তিনি দাবি করেছিলেন, ফেসবুক কখনও ব্যবহারকারীর তথ্য বিক্রি করেনি। এ দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে কমিটি জানায়, ‘এটি নিছক মিথ্যা।’ কলিন্স এক বিবৃতিতে জানায়, বিশ্বের অন্যতম বড় কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তার কাছ থেকে যেটা আশা করা হয়েছিল, জাকারবার্গ সেই মাপের নেতৃত্ব ও ব্যক্তিগত দায়িত্বশীলতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।’ ওয়াটসন একমত পোষণ করে বলেন, ‘মার্ক জাকারবার্গ যেভাবে আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের অবমাননা করেছেন, কিছু কিছু ব্যক্তিও একইভাবে সেটা করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘যদি আমাদের দেশের দুঃসময়ে সব দলমতের রাজনীতিবিদ এক হন, তবে এটা আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে, তাকে (জাকারবার্গ) এবং তার কোম্পানিকে বাগে আনব।
×