ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেবাচিমের দুইজনকে বরখাস্তের সুপারিশ ॥ তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

শেবাচিমের দুইজনকে বরখাস্তের সুপারিশ ॥ তদন্ত কমিটি গঠন

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ময়লার স্তুপে ৩১জন অপরিণত শিশুর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ খুরশীদ জাহান বেগম এবং ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জ জোৎস্না আক্তারকে সাময়িক বরখাস্ত করার সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতাল পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন জানান, ৩১ অপরিণত শিশুর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। একইসাথে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যেহেতু চিকিৎসক ও নার্সদের বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের (সাময়িক বরখাস্ত) এখতিয়ার হাসপাতাল প্রশাসনের নেই, তাই বিধিঅনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অধিদপ্তরের সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। যেখানে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা উল্লেখ রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ই-মেইলের মাধ্যমে সুপারিশপত্র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি পুরো ঘটনার তদন্তের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তদন্তে যারাই দোষী প্রমানিত হবেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিধিঅনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। হাসপাতালের ৫০ বছরের ইতিহাসে এটাই প্রথম এবং লজ্জাজনক ঘটনা বলে উল্লেখ করে পরিচালক আরও বলেন, দ্বায় এড়ানোর সুযোগ কারও নেই, তবে গাইনি বিভাগের প্রধান কিংবা রেজিষ্ট্রার, সহকারী রেজিষ্ট্রার বা নার্স ইনচার্জও যদি বিষয়টি আমাদের জানাতেন তবে এমনটা হতোনা। হাসপাতাল পরিচালক জানান, অপরিণত শিশুর মরদেহগুলো গাইনী বিভাগে সংরক্ষন করে রাখা ছিলো। যা মেডিক্যালের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে আসতো। এগুলো মেডিক্যাল কলেজেও হাসপাতালের মতো একইভাবে সংরক্ষিত থাকে। দীর্ঘদিন থেকে এগুলো সংরক্ষন করায় এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। ফলে ফিটাসগুলো বাতিল হিসেবে গন্য হওয়ায় তা নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধিত করা উচিত ছিলো। কিন্তু এভাবে ময়লার স্তুপের মধ্যে উম্মুক্তভাবে ফেলা উচিত হয়নি। অপরদিকে খবর পেয়ে সোমবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোশারেফ হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশ কমিশনার জানান, উদ্ধার হওয়া ৩১ অপরিণত শিশুর মরদেহের সুরতহাল করা হয়েছে। পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত করে সমাধিত করা হবে। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম পিপিএম বলেন, হাসপাতাল প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, গাইনী ওয়ার্ডের আয়া মালেকা বেগমের মাধ্যমে ৩১ অপরিণত শিশুর মরদেহগুলো এখানে ফেলা হয়েছে। সূত্রমতে, সোমবার রাতে মরদেহ উদ্ধারের পর কাউকে কিছু না জানিয়ে ওই স্থানেই মাটি চাঁপা দেয়ার প্রস্তুতি নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার আগেই বিষয়টি চাউর হয়ে গেলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহগুলো তাদের জিম্মায় নেয়। এরআগে সোমবার দিবাগত রাত পৌনে নয়টার দিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এসব মরদেহ হাসপাতাল ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তুপের মাঝে দেখে পুলিশকে খবর দেয়।
×