ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘নিপা রোগে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি’

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

‘নিপা রোগে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কাঁচা খেজুরের রস খেলে বাদুড়বাহিত নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা বলেছেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও গাছ থেকে সংগ্রহ করার আগে পর্যন্ত বাদুড়ের হাত থেকে খেজুরের রস নিরাপদ রাখার পদ্ধতি বের করা যায়নি। এ বিষয়ে নানা গবেষণা হয়েছে, সফল হয়নি। আর গাছে থাকা অবস্থায় ব্যয়বহুল পদ্ধতিতে বাদুড়ের হাত থেকে রস নিরাপদ রাখার ব্যাপক ব্যবস্থা করা গ্রামের মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে কাঁচা রস গরম করে খেলে কোনো ঝুঁকি থাকে না। মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইইডিসিআরের সম্মেলন কক্ষে আইইডিসিআর আয়োজিত ‘ নিপা বিস্তাররোধে জনসচেতনতা : গণমাধ্যমের ভূমিকা ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে আইইডিসিআর’র জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ, সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান উজ্জল, বর্তমান সহ সভাপতি জান্নাতুল বাকেয়া কেকা, নির্বাহী সদস্য শিশির মোড়ল ও সাধারণ সম্পাদক নিখিল মানখিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। রাজধানীসহ সারাদেশে মানুষের মধ্যে রীতিমতো উৎসবের আয়োজন করে খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এভাবে কাঁচারস পানের ফলে যে কারো বাদুড়বাহিত মরণব্যাধি নিপা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এ রোগে আক্রান্তদের দের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি হওয়ায় নীরবে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে। আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, নিপা রোগে মৃত্যুঝঁকি অনেক বেশি। চলতি বছর নিপা ভাইরাসে দুজন আক্রান্তের একজন মারা গেছেন। আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত গাছ থেকে কাঁচা খেজুরের রস সংগ্রহ করা হবে। তিনি কাঁচা খেজুরের রস পান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে প্রয়োজনে রস আগুনে ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দেন। গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, গত ১৯ বছর ধরে দেশে নিপা রোগটি রয়েছে। ২০০১ সাল থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৩০৫ জন নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। আক্রান্তদের মধ্যে ২১২ জনের মৃত্যু হয়। ২০০১ থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আক্রান্ত যথাক্রমে ১৩, ০, ১২, ৬৭, ১৩, ০, ১৮, ১১, ৪, ১৮, ৪২, ১৮, ২৬, ৩৮, ১৮, ০, ২ ও ৩ জনসহ মোট ৩০৫জন। একই সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান যথাক্রমে ৯, ০, ৮, ৫০, ১১, ০, ৯, ৯, ০, ১৬, ৩৬, ১৩, ২২, ১৫, ১১, ০, ১ ও ১ জন। শতকরা হিসাবে এই রোগে মৃতের হার দাঁড়ায় প্রায় ৭০ ভাগ। অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা আরও বলেন, খেজুরের রস গাছে হাড়িতে থাকার সময় বাদুড় সেখানে খায়, প্রস্রাব করে। গোপন ক্যামেরার মাধমে তারা দেখেছেন, হাড়ির চারপাশ জাল বা অন্য কিছু দিয়ে ঢেলে দিলেও বাদুর প্রস্রাব করেই। তাই খেঁজুরের রস পান কোনোভাবেই নিরাপদ নয় বলে জানান পরিচালক। আলোচকবৃন্দ বলেন, দেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে। নিপা একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক রোগ, যা বাদুড় থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। আবার আক্রান্ত মানুষ থেকে মানুষেও সংক্রমিত হতে পারে। বাদুড় খাওয়া কাঁচা খেজুরের রস খেয়ে ওই সময় নিপা ভাইরাস আক্রান্ত হয় অনেক মানুষ। কাঁচা খেজুরের রস এবং বাদুড় খাওয়া ফলমূলের অংশ বিশেষ খেলে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ রোগে আক্রান্তদের মস্তিস্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়। নিপা একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক রোগ, যা বাদুড় থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। এর প্রধান লক্ষ্মণগুলো হচ্ছে- জ্বর সহ মাথাব্যথা, খিঁচুনি, প্রলাপ বকা, অজ্ঞান হওয়াসহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট।
×