ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারের সর্বশেষ তথ্য সংসদকে জানালেন অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারের সর্বশেষ তথ্য সংসদকে জানালেন অর্থমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বাংলাদেশের পক্ষে মামলার সর্বশেষ তথ্য সবিস্তারে তুলে ধরলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যংকের রিজার্ভ চুরি যাওয়া ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের পক্ষে মামলা করেছে দেশটির একটি আইনি প্রতিষ্ঠান। নির্দিষ্ট সময়ে মাঝে আমরা মামলাটি দায়ের করতে পেরেছি। চুরি যাওয়া রিজার্ভ অর্থ উদ্ধারের কাজ এখনো চলমান আছে। এবিষয়ে যখনই কোন আপডেট তথ্য পাওয়া যাবে তখনই স্পীকারের মাধ্যমে সংসদকে আমি তা অবহিত করবো। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে কার্যপ্রণালী বিধির ৩০০ বিধিতে এসংক্রান্ত এক বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের ব্যাংকসমূহ এবং আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনায় আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ব্যবস্থা তারাই করে থাকেন। বাংলাদেশের ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভটি যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্কে অবস্থিত ফেডারেল ব্যাংক অব নিউইয়র্কে সংরক্ষণ করা হয়। মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের রিজার্ভই এখানে সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, ২০১৬ সালে জানুয়ারিতে হ্যাকিং এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংকে সংরক্ষিত আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের একটি অংশ শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে পাচার করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির অপব্যহারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক হ্যাকররা ৭০টি ভুয়া এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৯৫১ মিলিয়ন ইউএস ডলার পাচারের চেষ্টা করা হয়। এরমধ্যে ৫টি মিথ্যা চেকের মাধ্যমে ১০১ মিলিয়ন ডলার ট্রান্সফার করার পর নিউইয়র্কের ফেডারেল ব্যাংকের সন্দিহান হলে বাকী পেমেন্টগুলো করতে পারেনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, রিজার্ভ চুরির বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সরকার চুরি হয়ে যাওয়া অর্থ উদ্ধার, চুরি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিতকরণ ও ভবিষ্যতে চুরি রোধে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্ণর ড. ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি দ্রুত সরকারের কাছে একটি রিপোর্ট পেশ করেন। পাশাপাশি সিআিইডিকে অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিআইডি’র তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, ফৌজদারী কার্যকরে যেন কোন প্রভাব না পরে সেজন্য রিপোর্টটি এখনো প্রকাশ করা হয়নি। রিজার্ভ চুরির বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ এবং বিদেশী একাধিক প্রতিষ্ঠান জড়িত আছে। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে ইউএসের এফবিআই এবং ফিলিপাইন সরকার তদন্তে নামে। এরই ধারাবহিকতায় শ্রীলঙ্কা থেকে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করা হয় এবং ফিলিপাইন থেকে ১৪ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত আনা হয়েছে। বাকি ৬৬ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্ধারে এখনো কার্যক্রম চলমান আছে। বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, এফবিআই নিজ দেশের হ্যাকারদের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং ফিলিপাইনে এন্ট্রি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল মানিলন্ডারিং এ জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করে। এখান থেকে আমরা পর্যাপ্ত প্রমাণাদি পেয়েছি এবং প্রমাণাদিসহ ২০১৮ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি আইনি প্রতিষ্ঠান ‘কোজেন অব অনারকে’ দায়িত্ব দেওয়া হয়। যারা গত জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পক্ষে মামলা দায়ের করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, নির্দিষ্ট সময়ে মাঝে আমরা মামলাটি দায়ের করতে পেরেছি। চুরি যাওয়া রিজার্ভ অর্থ উদ্ধারের কাজ এখনো চলমান আছে। এবিষয়ে যখনই কোন অগ্রগতি হবে এই সংসদকে অবহিত করব।
×