ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানববর্জ্য ছড়িয়ে থাকে ‘ভিআইপি স্থানেও’

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মানববর্জ্য ছড়িয়ে থাকে ‘ভিআইপি স্থানেও’

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাজধানী ঢাকার পরিবেশ কেমন হওয়া চাই। এককথায় উত্তর দিলে বিশে^র উন্নত শহরের আদলে একটি মডেল সিটির প্রত্যাশা সবার। ঢাকা নগরীকে ঘিরে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তাতে বলাই চলে সামনের দিনগুলোতে একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নগরী হয়তো অপেক্ষা করছে। এখন কেমন চলছে। সবকিছুতে এগিয়ে গেলেও এখনও নগরীর কিছু বিষয় দৃষ্টিকটু রয়েই গেছে। গোটা রাজধানী ঘুরলে হাতেগোনা কয়েকটি এলাকা ছাড়া বাদবাকি সব সড়ক-ফুটপাতে মলমূত্রের ছড়াছড়ি। খোলা রাস্তাকে পাবলিক টয়লেট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংসদ ভবন, উচ্চ আদালত, রেল স্টেশন, উদ্যান, পার্ক, টার্মিনালসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগের কারণে। যা সরাসরি নগরীর সার্বিক পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সংক্রমিত হচ্ছে রোগ বালাই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেখানে সেখানে মল ত্যাগের কারণে পরিবেশ দূষণ হয়। পাশাপাশি পানি ও ধুলোর সঙ্গে মলমূত্র মিশে মানবদেহে নানা ধরনের রোগ হয়ে থাকে। তবে ঢাকায় পাঁচটি রোগের অন্যতম কারণ মানব বর্জ্য। এ কারণে সারা বছরেই এসব রোগে আক্রান্তের সংখ্যা লেগেই থাকে। তাই স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে যেখানে সেখানে মানব বর্জ্য ত্যাগ করা বন্ধ করার পরামর্শ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। ভুক্তভোগি সাধারণ মানুষের বক্তব্য হলো, দেড় কোটির বেশি মানুষের এই শহরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক টয়লেট নেই। যা একজন নাগরিকের পথচলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় রকমের প্রতিবন্ধকতা। অথচ উন্নত শহরগুলোতে রাস্তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্থায়ী এমনকি মোবাইল টয়লেট রাখা হয়। ভাসমান মানুষদের জন্য বিনামূল্যে টয়লেটের ব্যবস্থা থাকে। রাজধানী শহরে এরকম সুবিধা পর্যাপ্ত না হওয়ায় মানব বর্জ্যরে পরিমাণ বাড়ছে। অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও সাধারণ মানুষ টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ পান না। তাই ইচ্ছামতো বর্জ্য ত্যাগ করতে বাধ্য হন। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হাইকোর্ট-সুপ্রীমকোর্ট। অথচ রাষ্ট্রীয় এই স্থাপনার চারপাশের দেয়ালজুড়ে নোংরা পরিবেশ ভারি। দুর্গন্ধ। ভাসমান মানুষের বসবাস ফুটপাথ আর দেয়াল ঘেষে ও মাজারের মাঠজুড়ে। ফুটপাতে মলমূত্র থাকলেও পরিষ্কারের কোন বালাই নেই। প্রেসক্লাবের সামনে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাতে ভাসমান মানুষ যারা ফুটপাতে থাকে তারাই এখানে বর্জ্য ত্যাগ করে। আমাদের চোখের সামনে হলে বারণ করি। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ভাসমান মানুষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। অথবা আশপাশে ভাসমান মানুষের জন্য বিনামূল্যে মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা করারও পরামর্শ দেন পুলিশ সদস্যরা। একই চিত্র কার্জন হলের সামনের ফুটপাথ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকা, বুয়েটের কিছু রাস্তা, ঢাকেশ^রী এলাকাতেও এমন দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের চারপাশেও অবাধে মল, মূত্র রয়েছে। রাজধানীর বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত মতিঝিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ও সামনের কিছু অংশে, সেনা কল্যাণ ভবনের দেয়ালের একপাশেও প্রকাশ্যে ভাসমান মানুষদের মল, মূত্র ত্যাগ করতে দেখা গেছে। ফকিরাপুল পানির ট্যাংকি এলাকাতেও এ চিত্র। জাতীয় প্রেসক্লাবের দেয়াল, শিক্ষা ভবন, সিরডাপ মিলনায়তের দেয়াল আড়াল করে রাতদিন পথচারীদের প্র¯্রাব করতে দেখা যায়। চিত্র দেখলে মনে হবে এই স্থাপনার দেয়ালগুলো হয়ত এ কারণেই নির্মাণ হয়েছে! অথচ সিরডাপ মিলনায়তনের দেয়াল ঘেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি মোবাইল টয়লেট রয়েছে। যেটি সব সময় বন্ধ থাকে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে সেখানে সন্ধান করে পাওয়া যায়নি। টিটিপাড়া মোড় থেকে একদিকে শাজাহানপুর-খিলগাঁও চৌরাস্তাসহ সব মিলিয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনের সীমানা। স্টেশনের ভেতরে ও বাইরের চিত্র প্রায় সমান। এই এলাকায় কয়েক কিলোমিটারের বাতাস স্বাভাবিক নয়। মলমূত্র্যের গন্ধে বাতাস সব সময় ভাড়ি থাকে। স্টেশনের ভেতরে আছে ভাসমান দুই শতাধিকের বেশি মানুষের উপদ্রব। যারা রাত দিন স্টেশনেই থাকে। এতের মধ্যে একটি অংশ থাকে প্লাটফর্মের ছাদে। অপর অংশটি থাকে নিচে শহরতলী প্লাটফর্ম ও আন্তঃজেলা প্লাটফর্মে। রাত ১০টার পর স্টেশনে গেলে ঘুমিয়ে থাকা মানুষের কারণে হাঁটার জায়গা পাওয়া যাবে না। তবে স্টেশনে দুটি শৌচাগার থাকলেও ভাসমান মানুষ তা কমই ব্যবহার করে। খোলা জায়গাতে সারে প্রকৃতির কাজ। স্টেশনের ভেতর দিয়ে ফুট ওভারব্রিজে ওঠার রাস্তাটি দিয়ে মূত্রের গন্ধে একেবারেই চলা দায়। বাইরে হাতের বাম পাশ দিয়ে টিটিপাড়ার যেতে সড়কটির ফুটপাথ ব্যবহারের উপযোগী নয় একেবারেই। দেয়াল ঘেঁষে দিন-রাত হাজারো মানুষকে প্রস্রাব করতে দেখা যায় এখানে। দুর্গন্ধযুক্ত পানি গড়িয়ে রাস্তায় আসছে। কমলাপুর থেকে মাজার রোডে যেতে ডানদিকের সড়কের চিত্র একই। টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁও রেলগেট পর্যন্ত বিশ^রোডের বাম পাশের ফুটপাথ দিয়ে মল মূত্রের কারণে চলা দায়। খিলগাঁও রেলগেট থেকে উড়াল সড়কের নিচের দৃশ্যপট একই। প্রতিদিন নাকে রুমাল চেপে রাস্তা দিয়ে পথচারীদের চলাচল করতে দেখা যায়। এর বাইরে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী গোলাপবাগ এলাকাতেও রাস্তার ওপর মলমূত্র ত্যাগ করতে দেখা যায়। মহাখালী বাস টার্মিনালের ভেতরে একটি পাবলিক টয়লেট থাকলেও তা বোঝার কোন উপায় নেই আশপাশের রাস্তা ও টার্মিনালের ভেতরের পরিবেশ দেখে। টার্মিনালের বাইরে দেয়ালজুড়ে মলমূত্রের কারখানা। মানববর্জ্য গড়িয়ে রাস্তা পর্যন্ত আসছে। তাই অনেকে এখন আর ফুটপাথ ব্যবহার করেন না। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার অনেক সড়কে এমন চিত্র দেখা গেছে। ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এলাকাতেও ভাসমান মানুষ আর অসচেতন পথচারীদের কারণে আছে বায়ুদূষণ। ফার্মগেট এলাকার পার্কসহ আশপাশের রাস্তাজুড়ে রাত দিন চলছে মলমূত্র ত্যাগ। খোদ সংসদ ভবনের খেজুরবাগান এলাকা যেন মল আর মূত্রের কেন্দ্রস্থল। গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটি প্রতিদিনই দেখতে আসে হাজারো পর্যটক। তাছাড়া বিকেলবেলা সংসদভবন এলাকাজুড়ে ভিড় করেন বিনোদনপিপাসু মানুষ। তাদের একটি অংশ ইচ্ছেমতো প্র¯্রাব করেন। ভাসমান মানুষ যারা রাতদিন এই এলাকাতেই থাকে তাদের জন্য তো অবারিত সুযোগ। রমনা পার্কের চারপাশের দেয়ালজুড়ে পথচারী ও ভাসমান মানুষের মল মূত্র ত্যাগের দৃশ্য চোখে পরবে যে কোন সময়। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এলাকা, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে মানববর্জ্য গন্ধে অস্থির পরিবেশ। আমিনবাজার থেকে টেকনিক্যাল সড়ক পর্যন্ত ফুটপাথজুড়ে প্রায় সব সময় মানুষের লাইন। তাদের কাজ একটাই যখনই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয় তখনি দেয়াল আড়াল করে প্র¯্রাব করতে দেখা যায়। এ কাজটি বেশিরভাগ করে থাকেন মোটরযান শ্রমিকরাই। টেকনিক্যাল মোডের বিপরীতের সড়কটির ফুটপাতের অবস্থা একই রকমের। এছাড়া চন্দ্রিমা উদ্যান, বলদা গার্ডেন, শাহবাগ, ফুলার রোড়, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সীমানা প্রাচীর, টিএসসি থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কের পূর্ব পাশ, এফ রহমান হলের পূর্ব পাশের দেয়াল, যাত্রাবাড়ী, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচ, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর ও পুরান ঢাকাসহ অনেক এলাকায় রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা ও ফুটপাথে মূত্র ত্যাগ নিত্যদিনের চিত্র। হাতিরঝিল লেকের বিভিন্ন অংশে অবাধে প্রস্রাব করতে দেখা যায় সাধারণ মানুষসহ পর্যটকদের। দুই সিটির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যানুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২৮টি ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৩৭টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। মূত্রের বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে রাস্তায় হাঁটা-চলাই দায়। এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাজে নিয়োজিতরা বলছেন, নতুন পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে। অনেক উদ্বোধনও করা হচ্ছে। পাবলিট টয়লেটের সংখ্যা বাড়লে ফুটপাথে মল-মূত্র ত্যাগের চিত্র কমে আসবে। এদিকে মেয়র নির্বাচিত হলে নাগরিক সেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার করতে চান বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম। ‘স্মার্ট ঢাকা’ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে তিনি মঙ্গলবার রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘নাগরিকদের সেবা দিতে, নাগরিকদের সমস্যা সমাধান করতে টেকনোলজি ব্যবহার করতে চাই। যেখানে সমস্যা চিহ্নিত এবং সমাধান হবে এ্যাপের মাধ্যমে। আপনারাই নাগরিকরা মেয়রের ভূমিকা পালন করবেন। যেখানে ময়লা, আবর্জনা, ম্যানহোলের ঢাকনা নেই সঙ্গে সঙ্গে ছবি তুলে নগর এ্যাপে দেবেন। তখন সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বরত কর্মকর্তা তা সমাধানের পদক্ষেপ নেবে। সেই সমস্যা যদি সংশ্লিষ্টরা সমাধান না করেন সঙ্গে সঙ্গে মেয়রের কাছে এই বিষয় নোটিফিকেশন-ঘণ্টা বেজে উঠবে। সঙ্গে সঙ্গে মেয়র সেসব কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসবেন। সেই এ্যাপের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞরা এ্যাপসটি উন্নয়নের কাজ করছেন। সব মিলিয়ে আমি নির্বাচিত হলে সিটি কর্পোরেশনকে একটি জবাবদিহিতামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলব। জানতে চাইলে বিশিষ্ট চিকিৎসক ও হেলথ এন্ড হোপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডাঃ লেলিন চৌধুরী বলেন, মলমূত্রের মতো মানব বর্জ্য হলো রোগ জীবাণুর আঁধার। খোলা বর্জ্য শুকিয়ে ধুলো অথবা খাবারের সঙ্গে কিংবা পানিতে মিশে মানবদেহে প্রবেশ করে। এতে টায়ফয়েড, জন্ডিস, আমাশয়, ডায়রিয়া ও ক্রিমি রোগ হতে পারে। রাজধানীতে এসব রোডের প্রধান কারণ খোলা মানব বর্জ্য। তিনি বলেন, খোলা মানব বর্জ্যরে কারণে এসব রোগ রাজধানীর মানুষের সারা বছর লেগে থাকে। মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথ প্রক্রিয়ায় না হওয়ায় দিন দিন সমস্যা বাড়ছে। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। তাই পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সব রকমের ব্যবস্থা নিতে হবে। যেখানে সেখানে বর্জ্য ত্যাগ করা যাবে না। সমীক্ষায় দেখা যায়, সিটি কর্পোরেশন নির্মিত মোট পাবলিক টয়লেটের মধ্যে এখন ৪৭টি নামে টিকে আছে। বাকিগুলোর মধ্যে দুটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, ১০টি বন্ধ হয়ে গেছে এবং ১০টিতে কোন সেবা নেই। ২০১১ সালে সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ ও ওয়াটার এইড পরিচালিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় ৮০০ বর্গকিলোমিটারের এই শহরে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষের মধ্যে পাঁচ লাখ ভাসমান, রিক্সাচালক ১০ লাখ, অন্যান্য জীবিকার মানুষ ১০ লাখ, নিয়মিত পথচারী ২০ লাখ এবং ঢাকার বাইরে থেকে আসা ১০ লাখসহ মোট ৫৫ লাখ মানুষের প্রতিদিন চলাচলের সময় টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। ঢাকার বাসিন্দাদের প্রায় অর্ধেক নারী হলেও পাবলিক টয়লেটগুলোর প্রায় ৭৫ শতাংশেই নারীদের জন্য কোন আলাদা ব্যবস্থা নেই। নেই শিশু ও প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার উপযোগী টয়লেট। পাবলিক টয়লেটের স্বল্পতা, সচেতনতা আর নজরদারির অভাবে রাজধানীর অনেক ফুটপাথই মলমূত্রের গন্ধে হাঁটার জন্য অস্বস্তিকর। শহরের অলি-গলি, প্রধান সড়কের আশপাশ প্রায় সবখানেই এ চিত্র নিয়মিত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব আধুনিক টয়লেট নির্মাণ হয়েছে এর সবকটিতেই নারী-পুরুষের জন্য পৃথক ব্যবস্থা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (একিউআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা বিশে^ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এই ইনডেক্স দৈনিক বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বায়ুর গুণাগুণ পরীক্ষা করে। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষিত হয়েছে। শ^াস-প্রশ^াস প্রক্রিয়ায় বায়ুর সঙ্গে মিশ্রিত বিভিন্ন দূষিত পদার্থ ফুসফুসে গিয়ে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি করে থাকে। পরিবেশ অধিদফতরের গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকায় বায়ুদূষণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে ঢাকায় বছরে ১৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়ে থাকে। রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টায় প্রতি ঘনমিটার জায়গায় এসপিএম মিশে ২০০ মাইক্রোগ্রাম। এটা জাতীয় মানদ-ের চেয়ে দ্বিগুণ এবং বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার মানের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। অপরদিকে বাংলাদেশ এ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাতাসে ২৪ ঘণ্টায় ১০০ কেজি সিসা, তিন হাজার ৫০০ কেজি এসপিএম, এক হাজার ৫০০ কেজি সালফার-ডাই অক্সাইড, ১৪ টন হাইড্রোজেন কোরাইড ও ৬০ টন কার্বন মনোক্সাইড মেশে। এসব রাসায়নিক পদার্থ মানব স্বাস্থ্যের ভয়াবহ ক্ষতি করে যাচ্ছে। এসব ক্ষতিকর পদার্থ ঢাকার বাতাসে মিশছে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি, কলকারাখানা, ইটের ভাটায় ইট পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ার মাধ্যমে এবং হাসপাতালের অনিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। এমনকি ঢাকার বাতাসে ক্ষতিকর নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ মিশে যাচ্ছে অনিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশনের কারণেও। বায়ুসহ অন্যান্য পরিবেশদূষণের কারণে রাজধানীসহ বাংলাদেশের মানুষ নানা ধরনের রোগে ভুগছে। এর মধ্যে কার্ডিওভাস্কুলার (হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি) রোগ, অ্যাজমা (হাঁপানি), বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া এবং আইকিউ হ্রাস পাওয়ার মতো নানা ধরনের অসুস্থতায় ভুগছে। মলমূত্র ও সার থেকে বায়ুবাহী ক্ষতিকর কণা তৈরি হচ্ছে এবং তা ফুসফুসে গিয়ে ক্ষতি করছে। বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা বিশে^ পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। প্রথম অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক, দ্বিতীয় চীনের রাজধানী বেইজিং, তৃতীয় আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এয়ার্স, চতুর্থ দিল্লী এবং পঞ্চম ঢাকা। নাসার উপগ্রহ ‘অরা’য় স্থাপন করা ট্রপোস্ফেরিক ইশিন স্পেকট্রোমিটার যন্ত্রের মাধ্যমে ২০১৩ সাল থেকে বায়ুদূষণের এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এদিকে রাজধানীর বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে যারা দূষণ সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পরিবেশ অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
×