ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুপার মুন

চাঁদের হাসির বাঁধভাঙ্গা আলোর বন্যা

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

চাঁদের হাসির বাঁধভাঙ্গা আলোর বন্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মঙ্গলবার রাতের আকাশে যে চাঁদ উঠেছিল তা ছিল অন্যদিনের চেয়ে ব্যতিক্রমী। এ রাতে ছিল চাঁদের হাসির বাঁধভাঙ্গা উছলেপড়া আলো। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘সুপার মুন’। তারা বলছেন এদিনে উদিত চাঁদ যেমন অন্যদিনের চেয়ে আয়তনে ছিল ১৪ গুণ বড় আর আলোক উজ্জ্বলতা ছিল ৩০ গুণ। সন্ধ্যার পরই আকাশে দেখা মেলে সুপার মুনের। এর আগে গত জানুয়ারিতেও একবার সুপার মুনের আবির্ভাব হয়েছিল দেশের আকাশে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন এ বছর তিনবার সুপার মুনের দেখা মিলবে। মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো দেখা যায়। অবশ্য অনেকটা মেঘমুক্ত থাকায় এটি পরিষ্কারভাবেই দেখা গেছে। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাতটা ৫৩ মিনিট থেকে আকাশে সুপার মুন স্পষ্ট হতে থাকে। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বড় আর উজ্জ্বলতা রাত বাড়ার সঙ্গেই বাড়তে থাকে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানান, চাঁদ ওঠার কিছুক্ষণ পরই সুপার মুন দেখার সবচেয়ে সেরা সময়। এ ধরনের সুপার মুনকে ‘পূর্ণ বরফ চাঁদ’ বলা হয়ে থাকে। এ সময় পৃথিবীর বেশিরভাগ অঞ্চলে তুষারপাত বেড়ে যায় বলেই এমন নাম। এছাড়াও এ চাঁদকে স্ট্রোম মুন, হাঙ্গার মুন ও বোন মুনও বলা হয়ে থাকে। তারা বলেন সুপার মুনের সময় চাঁদ পৃথিবীর কাছে চলে আসে। এদিন চাঁদ পৃথিবী থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থান করে বলে জানিয়েছেন মহাকাশ গবেষকরা। চাঁদকে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৪ দশমিক ১ ভাগের বেশি উজ্জ্বল দেখায়। জোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন চাঁদ পৃথিবী থেকে ২ লাখ ২২ হাজার মাইল থেকে ২ লাখ ৫২ হাজার মাইল দূরত্বে থেকে প্রদক্ষিণ করে থাকে। পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের এই প্রদক্ষিণকালে চাঁদ কখনও পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসে, আবার কখনও দূরে চলে যায়। দূরে চলে গেলে রাতে চাঁদের আলোর উজ্জ্বলতা যেমন কমে যায়, তেমনি আকারও অনেক ছোট হয়ে যায়। আবার যখন একেবারে কাছে চলে আসে তখন চাঁদের উজ্জ্বলতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় আকারেও অনেক বড়। মঙ্গলবার প্রদক্ষিণকালে চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে অবস্থান করে। ফলে এর আলোক উজ্জ্বলতা অনেক বাড়ে। মহাজাগতিক এই নিয়ম মেনে মঙ্গলবার চাঁদ চলে আসে পৃথিবীর খুব কাছাকাছি। চাঁদকে দেখা যায় স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বড়। মঙ্গলবার যে সুপার মুন নাম চাঁদটি আকাশে উঠেছিল তা ’১৯ সালের দ্বিতীয় সুপার মুন। এর আগে ২১ জানুয়ারি বছরের প্রথম সুপার মুন দেখা গিয়েছিল। ২০ থেকে ২১ জানুয়ারির ওই চাঁদকে বলা হয়েছে ব্লাড ওলফ সুপার মুন ছিল বেশ রক্তাভ আর উজ্জ্বল। মঙ্গলবারের সুপার মুনটি রক্তাভ না হলেও তা ছিল খুবই উজ্জ্বল। পরের সুপার মুন দেখা যাবে আগামী ২১ মার্চ। নাসা বলছে, মঙ্গলবার পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ছিল দুই লাখ ২১ হাজার ৭৩৪ মাইল (তিন লাখ ৫৬ হাজার ৮৪৬ কিলোমিটার)। সাধারণত পৃথিবী থেকে চাঁদের স্বাভাবিক দূরত্ব তিন লাখ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। চাঁদ পৃথিবীর কাছে আসার পাশাপাশি নাসা বলছে এবারের চাঁদ অনেক উজ্জ্বল দেখার আরও একটি বড় কারণ সুপার মুন যখন ঘটে ঠিক তখনই লিও নক্ষত্রপুঞ্জির তারা রেগুলাসও একই সঙ্গে আলো ছড়ায়। রেগুলাসও বেশ উজ্জ্বল বলে এর আলো চাঁদের আলোর সঙ্গে মিশে উজ্জ্বলতা বাড়ায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন প্রকৃতপক্ষে চাঁদ যখন পৃথিবীর খুব কাছে আসে তখন মাসের অন্য সময়ের চেয়ে চাঁদকে বেশি উজ্জ্বল দেখায়। আর সে রকম চাঁদকে সুপার মুন বলে। চাঁদের বুকে যে কালো ছায়া অথবা মেঘের মতো বস্তুগুলো আছে তাও আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে চাঁদটি কাছাকাছি আসার কারণে। অনেকে এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করলেও এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে উল্লেখ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
×