ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বহু বিষয়ে লেখা বই, কৌতূহলী পাঠক

প্রকাশিত: ১১:০৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বহু বিষয়ে লেখা বই, কৌতূহলী পাঠক

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ পূর্ণ যৌবন লাভ করেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। অধিকাংশ বই চলে এসেছে। আসছে আরও অনেক নতুন বই। কত বিষয়ে যে লেখা! গল্প কবিতা আছে। প্রচুর বিক্রি হচ্ছে উপন্যাস। আছে স্মৃতিকথা। মুক্তিযুদ্ধের কম উচ্চারিত প্রসঙ্গ বই হয়ে মেলায় এসেছে। এভাবে বই আর বই। হ্যাঁ, যা তা বইও আছে। সে আলোচনা তোলা থাক। নানা বিষয়ে লেখা বইয়ের কথা হোক আজ। অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৯তম দিনে মেলায় ঘুরে অনেকগুলো বইয়ের খোঁজ পাওয়া গেল। মেলায় এসেছে শামসুল আরেফিন খানের স্মৃতিকথা ‘নানা রঙের দিনগুলি।’ ভাষা সংগ্রামী সাংবাদিক ও লেখক কাজ করেছেন প্রশাসনেও। সেসব অভিজ্ঞতার কথা লিখতে গিয়ে ইতিহাসের বিস্মৃতপ্রায় অধ্যায়গুলোকে সামনে এনেছেন তিনি। প্রবাসী লেখকের বই প্রকাশ করেছে ইন্তামিন প্রকাশন। মঙ্গলবার মেলায় বইয়ের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করা হয়। একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের বই ‘সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদমুক্ত বাংলাদেশ।’ শিরোনাম থেকেই বই সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়ে যাবেন পাঠক। হ্যাঁ, এ বইতে সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদ মুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে কিছু করণীয় তুলে ধরা হয়েছে। বইয়ের পরিচিতি পর্বে একে বলা হয়েছে ‘ব্যবস্থাপত্র।’ অনন্যা থেকে প্রকাশিত বইয়ের মূল্য ২২৫ টাকা। সময় প্রকাশন থেকে এসেছে চৌধুরী শহীদ কাদেরে বই ‘মুক্তিযুদ্ধে ভারতের চিকিৎসা সহায়তা।’ বইতে একেবারেই কম উচ্চারিত প্রসঙ্গ। শরণার্থী শিবিরের অসুখ বিসুখ ও যোদ্ধাহতদের চিকিৎসা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একাত্তরের পশ্চিমবঙ্গ ত্রিপুরা অসম ও মেঘালয় রাজ্যের চিত্র পাওয়া যাবে বইতে। জার্নিম্যান বুকস প্রকাশ করেছে সাদিকুর রহমান পরাগের নতুন বই ‘মানুষ।’ এ মানুষ মানে, ব্যক্তিগতভাবে লেখকের দেখা মানুষ। সমরেশ মজুমদারের ‘মেয়েরা যেমন হয়’ পড়া আছে? নিজের পরিচিত নারী চরিত্রগুলো নিয়ে লিখেছিলেন পশ্চিম বঙ্গের খ্যাতিমান লেখক। পরাগ ঠিক তা করেননি। আবার করেছেনও। নিজের চার পাশের নারী নয় শুধু, বাস্তব সব চরিত্রকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন তিনি। কারও সঙ্গে স্লোগান মুখর রাজপথে ছিলেন। কেউ প্রতিদিনের চেনা। বন্ধুজন। দেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্বরা যেমন পরাগের লেখার বিষয় হয়ে উঠেছেন। বাদ যাননি অতি সাধারণ মানুষটিও। এভাবে মানুষে মানুষে যে বৈচিত্র্য, ভিন্নতা, যে মিল অমিল, যে স্বাতন্ত্র্য পরাগ তা একমলাটে গেঁথে নিয়েছেন। বিষয় বৈচিত্র্যের কারণে বইটি নজর কাড়ছে পাঠকের। ১২৮ পৃষ্ঠার বই। মূল্য ৩৮০ টাকা। মেলার একেবারে শুরুর দিকেই প্রকাশিত হয়েছে শামসউজজোহার প্রথম উপন্যাস ‘নয় নম্বর শান্তিকুঞ্জ।’ আবৃত্তির শামসউজজোহা একইসঙ্গে কবিতা লেখেন। এবার লিখলেন উপন্যাস। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হয়ে এসেছেন একজন কবি। তবে উপন্যাসটি রাজনৈতিক। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরের ২৫ বছরকে এতে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে। শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে আসা উপন্যাসের মূল্য ২৫০ টাকা। লেখক বলছি ॥ এদিন ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের সদ্য প্রকাশিত বই নিয়ে কথা বলেন মতীন্দ্র মানখিন, ফারুক মঈনউদ্দীন, ওবায়েদ আকাশ, রেজা ঘটক, আলতাফ শাহনেওয়াজ এবং বদরুল হয়দার। মেলা মঞ্চের সেমিনার ॥ মেলা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশের ছড়াসাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন বড়ুয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আলম তালুকদার, আসলাম সানী, লুৎফর রহমান রিটন, আমীরুল ইসলাম এবং আনজীর লিটন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ। প্রাবন্ধিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ একটি বাতিঘর। সব জাতির জীবনে এমন আলোকবর্তিকা অর্জনের সৌভাগ্য হয় না। সে ক্ষেত্রে বাঙালী সৌভাগ্যবান জাতি। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে বিশ্বে এমন দেশই-বা কয়টি আছে? সুতরাং মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য আমাদের গর্ব, আমাদের পরিচয়। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালী জাতিসত্তাকে উজ্জীবিত করেছে নতুনভাবে। শিল্প-সংস্কৃতির অন্যান্য শাখার মতো ছড়াসাহিত্য ঘটেছে এর উজ্জ্বল প্রতিফলন। বিশেষত স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে স্বতন্ত্র সাহিত্য-মাধ্যম হিসেবে ছড়াসাহিত্য পেয়েছে পূর্ণ মর্যাদা। মুক্তিযুদ্ধই বাংলাদেশের ছড়াসাহিত্যকে দিয়েছে মৌলিক ভিত্তি। আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্য বক্তারা বলেন, ছড়া কেবল শিশুতোষ বিষয় নয়। ছড়ার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয় জাতির আত্মা। বাংলাদেশের ছড়াসাহিত্যে এদেশের মহান মুক্তিসংগ্রাম উদ্ভাসিত হয়েছে অনন্য ব্যঞ্জনায়, আবার ছড়াই আমাদের মুক্তিসংগ্রামকে দিয়েছে বিপুল বেগ; কারণ ছড়ার সহজাত আবেগ সাধারণ মানুষকে স্পর্শ করে বিপুলভাবে। তারা বলেন, বাংলাদেশের ছড়াকাররা এ আবেগকে কোন স্থূল অর্থে ব্যবহার না করে একে সংযুক্ত করেছেন গণমানুষের মুক্তির শাশ্বত সংগ্রামে। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, বাংলাদেশের ছড়াসাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রূপায়িত হয়েছে নানা মাত্রায়। লোকায়ত ধারা থেকে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত এদেশের ছড়াসাহিত্যের মৌল মর্মে রয়েছে জনমানুষের মুক্তির চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বাংলাদেশের ছড়াসাহিত্য তাই এক অভিন্ন অনুভবের নাম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ॥ এদিন মেলা মঞ্চে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন রবীন্দ্র গোপ, মতিন বৈরাগী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রেজিনা ওয়ালী, এনামুল হক বাবু। এগনেস র‌্যাচেল প্যারিসের পরিচালনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগ ‘গীতিনাট্য’ পরিবেশন করেন এবং শাহাবুদ্দিন আহমেদ দোলনের পরিচালনায় ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন : ‘সুর ধারা সঙ্গীতায়ন’-এর পরিবেশনা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী শারমিন সুলতানা, সুমন চন্দ্র দাস এবং মোঃ জাকির হোসেন।
×