ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তৌফিক অপু

মিডিয়ায় নেতানিয়াহুর হস্তক্ষেপ চেষ্টা

প্রকাশিত: ১২:০১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মিডিয়ায় নেতানিয়াহুর হস্তক্ষেপ চেষ্টা

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। তার সমালোচনা করা পত্রিকা রিপোর্টগুলো সেন্সর করা হচ্ছে। এমনকি চ্যাপেল ও ওয়েবসাইটেও সেই সেন্সরশিপ প্রসারিত হয়েছে। ওয়াল্লা নামে ইসমাইলের এক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট আছে। সেখানকার রিপোর্টারদেরও একই বক্তব্য। তাদের রিপোর্টে নেতানিয়াহুর সমালোচনা করা হলেই সেন্সর করা হচ্ছে। ইসরাইলের রিপোর্টাররা সেকুলার উদারপন্থী। তারা তাদের রিপোর্টে সব মত ও পথের রাজনীতিবিদের ত্রুটিবিচ্যুতি ও কেলেঙ্কারি উন্মোচন করে থাকেন। জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় দলগুলোর কোয়ালিশনের নেতা নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে এই ধারণা পোষণ করে আসছেন যে সাংবাদিকরা তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে, তার পরিকল্পনা নস্যাত করতে এবং ক্ষমতা থেকে তাকে অপসারণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই তিনি মিডিয়ার চেহারা ও দৃশ্যপট বদলে দিতে উদ্যত হয়েছেন। তিনি এমন আইন ও নিয়মকানুন প্রবর্তনের প্রয়াস পেয়েছেন যাতে তার সমালোচকদের মুখ বন্ধ করা ও মিত্রদের শক্তি বৃদ্ধি করা যায়, তার সমর্থকদের মিডিয়া আউটলেট কিনতে উৎসাহিত করা যায় এবং রিপোর্টারদের ভয়ভীতির মুখে রাখা যায়। কিছু দিন আগে পুলিশ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং বেজেক নামক এক টেলিযোগাযোগ কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যানসহ আরও ৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি, জালিয়াতি ও আস্থাভঙ্গের অভিযোগ আনার উদ্যোগ নিয়েছিল। আরও অভিযোগ আছে যে নেতানিয়াহু নিয়ন্ত্রণমূলক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে বেজেককে সুবিধা দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ওয়াল্লা ওয়েবসাইটের মালিক হচ্ছে বেজেক। বেজেকের ব্যাপারে নেতানিয়াহুর ভূমিকা নিয়ে যে তদন্ত হচ্ছে সেটি হলো তিনটি তদন্তের একটি যার মধ্য দিয়ে তার পতন ঘটার আশঙ্কা আছে। তার অনুকূলে আরও বেশি কভারেজ পাওয়ার জন্য একটি পত্রিকা প্রকাশের সঙ্গে তার বেআইনী সমঝোতা হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। অন্য এক ঘটনায় নেতানিয়াহু ইসরাইলী ধনকুবের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২ লাখ ডলারেরও বেশি উপহার গ্রহণ করেছিলেন। নেতানিয়াহু অবশ্য তিনটি অভিযোগের সবটিতেই অন্যায় কিছু করেননি বলে দাবি করেন। এখন এ্যাটর্নি জেনারেলই ঠিক করবেন তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে কি না। তার ক্যারিয়ারের গোড়ার দিকে জাতিসংঘে ইসরাইলের টপবগে তরুণ রাষ্ট্রদূত হিসেবে নেতানিয়াহু মিডিয়ার উজ্জ্বল কভারেজ পেয়ে দারুণ লাভবান হয়েছিলেন। রিপোর্টাররা অনেক তার ভূমিকার প্রশংসা করে তাকে ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী বলেও উল্লেখ করেছিলেন। মিডিয়ার বদৌলতে ব্যাপক এক্সপোজার পাওয়ার ফলে লিকুদ পার্টির নেতৃত্বের ওপরের সারিতে উঠতে তার বেশি সময় লাগেনি। ১৯৮৮ সালে তিনি পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু সাংবাদিকদের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটতে সময় লাগেনি। ইজহাক রাবিনের শ্রমিক সরকার ১৯৯৩ সালে ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে ওসলো চুক্তি স্বাক্ষর করলে অধিকাংশ সাংবাদিক চুক্তিকে স্বাগত জানান। ততদিনে নেতানিয়াহু লিকুদ পার্টির নেতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এই চুক্তির প্রধান সমালোচকে পরিণত হন। দু’বছর পর এক ইহুদী ধর্মান্ধের হাতে প্রধানমন্ত্রী রাবিন প্রাণ হারালে সাংবাদিকদের বেশিরভাগই অভিযোগ করেন যে, নেতানিয়াহু তার সমর্থকদের রাবিনের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে লিকুদ পার্টি নির্বাচনী জয়ী হলে নেতানিয়াহুর সমর্থকরা ‘বৈরী সংবাদপত্রের’ কথা উল্লেখ করতে শুরু করে। ১৯৯৬ সালে নেতানিয়াহু ক্ষমতা হারালে তিনি তার যাবতীয় অর্জন ও সাফল্যকে খাটো করে দেখানোর জন্য রিপোর্টারদের দায়ী করেন। কয়েক বছর পর তিনি তার ধনাঢ্য পৃষ্ঠপোষকদের বলেন তার একটা নিজস্ব মিডিয়া দরকার। তিনি তাদের সংবাদ সংগঠনগুলোর শেয়ার কিনে নেয়ার আহ্বান জানান। আমেরিকার এক ক্যাসিনো মালিকের প্রতিষ্ঠিত ‘ইসরাইল হায়য়ুম‘ অচিরেই দেশের সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র হয়ে দাঁড়ায় যা ছিল অতিমাত্রায় নেতানিয়াহু পন্থী। ইসরাইল হায়য়ুমের জনপ্রিয়তা পুরনো পত্রিকাগুলোর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এদের অনেকের বিক্রি, বিজ্ঞাপন ও আয় কমে যায়। পরিণতিতে ইয়েদিওৎ আহরোনথ নামে এক বড় সংবাদপত্র যা ছিল নেতানিয়াহুর সমালোচক সেই পত্রিকার প্রকাশক আরনন মোজেস নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। দু’জনের মধ্যে সমঝোতা হয় যে মোজেসের পত্রিকা নেতানিয়াহুর সমালোচনা কমিয়ে দেবে। বিনিময়ে নেতানিয়াহু ‘ইসরাইল হায়য়ুমের প্রচার সংখ্যা সীমিত করতে আইনগত ব্যবস্থা করবেন। ২০১৫ সালে চতুর্থ নির্বাচনী বিজয়ের পর নেতানিয়াহু যোগাযোগ দফতরের দায়িত্ব নিজের হাতে নেন। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনাকারী প্রাইভেট টিভির সম্প্রচারকদের বিরুদ্ধে তিনি এমন আইন করেন যে চ্যানেল ১০ দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়। ওই চ্যানেলটি এখন আরেক বেসরকারী চ্যানেল রেশেটের সঙ্গে একীভূত হয়েছে এবং শোনা যায় রেশেটের প্রধান শেয়ারহোল্ডারের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্ক আছে। ২০১৭ সালের প্রথমদিকে বিরোধী দলও হাইকোর্টের চাপে নেতানিয়াহু যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দিলেও মিডিয়াকে প্রভাবিত কাজ এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×