ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মীরের মায়েরা কি সন্তানদের ফেরাতে পারবেন?

প্রকাশিত: ০০:২৫, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

কাশ্মীরের মায়েরা কি সন্তানদের ফেরাতে পারবেন?

অনলাইন ডেস্ক ॥ ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলার পাঁচদিনের মাথায় মঙ্গলবার কাশ্মীরের মায়েদের প্রতি সন্তানদের জঙ্গীবাদ থেকে ফেরানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এক ঘোষণায় জানানো হয়েছে, কাশ্মীরের কোনও যুবক হাতে বন্দুক তুলে নিয়েছে এমনটা দেখামাত্রই তাকে গুলি করে হত্যা করা হবে। খবর বিবিসির। কাশ্মীরি মায়েদের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানিয়ে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তারা যেন তাদের ছেলেদের বন্দুক ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য বোঝান। ভারতে সামরিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কাশ্মীরে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জঙ্গীদের বাবা-মাকেও সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে কাশ্মীরিরা নিজেরাই বিশ্বাস করেন না যে, এ ধরনের আবেদনে আদৌও কোনও কাজ হবে। পুলওয়ামায় গত বৃহস্পতিবারের আত্মঘাতী হামলায় আধা-সামরিক বাহিনী সিআরপিএফ-এর ৪০ জনেরও বেশি সদস্য নিহত হওয়ার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো প্রথম প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ খুলল। শ্রীনগরে এক সংবাদ সম্মেলনে ফিফটিন কোরের কমান্ডার লে. জেনারেল কানওয়ালজিৎ সিং ধিলোঁ প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরেই কাশ্মীরি জঙ্গীদের বাবা-মায়েদের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। জেনারেল ধিলোঁ বলেন, কাশ্মীরি যুবকদের বাবা-মায়েদের, বিশেষ করে মায়েদের আমি একটা কথা বলতে চাই। আমি জানি, কাশ্মীরি সমাজে মায়েদের ভূমিকা অনেক। তাই তাদেরই অনুরোধ জানাব, আপনাদের যে ছেলেরা সন্ত্রাসবাদের রাস্তায় গেছে তাদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে বলুন। নইলে কাশ্মীরে যে হাতে বন্দুক তুলে নেয়া হবে আমরা কিন্তু তাদের নির্মূল করব। আর এটাই কাশ্মীরি মায়েদের প্রতি আমাদের বার্তা, আমাদের অনুরোধ। জঙ্গীরা বন্দুক ফেলে আত্মসমর্পণ করলে তারা ভাল সুযোগ সুবিধা পাবেন এবং সরকার তাদের সব রকম সহায়তা করবে। সেনা কর্মকর্তারা এ কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু হাতে বন্দুক তুললেই মরতে হবে? এ কথা বলে ভারতীয় সেনারা কি কাশ্মীরে নতুন কোনও কঠোর নীতির ইঙ্গিত দিচ্ছেন? দিল্লিতে ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের প্রধান এবং সাবেক মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি কাশ্মীরে বহু দিন ধরে ডিভিশনাল কমান্ডের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি অবশ্য এমন কিছু মনে করেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটাকে আমি ঠিক মানবিকতাবিরোধী পদক্ষেপ বলব না, বরং বলব এটা একটা খুব জোরালো পরামর্শ। কারণ ছেলে-মেয়ে যদি ভুল পথে চলে যায় তাহলে তার দায়-দায়িত্ব বাবা-মাকে অবশ্যই কিছুটা হলেও নিতে হয়। তারা যদি এখন বন্দুক নিয়ে দেশের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নামে তাহলে নিজেদের তারা কত বড় বিপদ আর ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছে, সেটা বাবা-মার পক্ষেই সবচেয়ে ভালভাবে বোঝানো সম্ভব। কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বরাবরের নীতি হলো উইনিং হার্টস অ্যান্ড মাইন্ডস অব পিপল। কিন্তু অনেক সময় যখন সেনাদের বিরুদ্ধে বড়সড় হামলা হয়ে যায় তখন হয়তো এই নীতি সব সময় বজায় রাখা যায় না। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, সার্বিকভাবে কাশ্মীরি যুবকদের মন জয় করাটাই কিন্তু সামরিক অভিযানের মূল লক্ষ্য থেকে যায়। আর সেটা এখনও থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস।
×