ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দক্ষিণাঞ্চলে দখল দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে নদী ও খাল

প্রকাশিত: ০২:৪২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দক্ষিণাঞ্চলে দখল দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে নদী ও খাল

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখল ও দূষণে নাব্যতা হারিয়ে ক্রমেই অস্তিত্ব হারাতে বসেছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের এক সময়ের খরাস্রোতা নদী ও খাল। দখলকারীদের রাক্ষুসে থাবা এখনই থামানো না গেলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে নদী মাতৃক এ অঞ্চলের অধিকাংশ নদী ও খাল। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জেলার গৌরনদী উপজেলার মধ্যদিয়ে বহমান খরাস্রোতা পালরদী নদী দখল ও দূষণে এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। অস্তিত্ব হারাতে বসেছে গৌরনদীর ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ আড়িয়াল খাঁ নদীর শাখা পালরদী নদী। নাব্যতা হ্রাসের কারণে নদীর কোথাও এখন হাঁটু পানি। ঢাকা থেকে যাত্রীবাহি লঞ্চ এখন আর গৌরনদী হয়ে তার শেষ গন্তব্যস্থল দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত ব্যবসায়ীক বন্দর টরকীতে যেতে পারছেনা। সূত্রমতে, গতবছরের নবেম্বর মাস থেকে লঞ্চ থাকে টরকী থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দুরবর্তী কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া স্টেশনে। পালরদী নদীতে এখন আর চলতে পারছেনা বড় কোন নৌযান। ২০/২৫ বছর ধরেই শুকনো মৌসুমে এ অবস্থা চলছে। ফলে টরকী বন্দর, কসবা গো-হাট, গৌরনদী বন্দরের ব্যবসায়ীরা গবাদী পশু ও বিভিন্ন মালামাল আনা নেয়ার ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্ভোগে পরেছেন। লঞ্চ যাত্রীরাও পরেছেন মহাবিপাকে। আগে টরকী থেকে গৌরনদী হয়ে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ রুটে প্রতিদিন ছয়টি লঞ্চ আসা-যাওয়া করতো। নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে শুধুমাত্র এ রুটে মাত্র দুইটি লঞ্চ যাতায়াত করছে। গত কয়েক বছর যাবত গৌরনদীর হোসনাবাদ বাজার থেকে নদী খনন শুরু করে নৌপরিবহন অধিদপ্তর কিন্তু এ কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর উভয় তীরে জেগে ওঠা চর দখল করে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন ঘর-বাড়ী, দোকান-পাটসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। তারা জাল কাগজপত্র তৈরী করে সরকারী খাস জমির মালিকানা দাবী করছেন। এমনকি কয়েকজন প্রভাবশালীরা গৌরনদী, টরকী বন্দরসহ বিভিন্নস্থানে নদী দখল করে পাকা দালান তৈরী করেছেন। ময়লা আবর্জনা ফেলে নদী দুষন করা হচ্ছে। সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছেন স্থানীয় প্রশাসন। এ কারণে জনসাধারনের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পালরদী নদী দখল ও দুষনের বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদা নাছরিন বলেন, নদী দখল ও দুষনকারীদের কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। এদের বিরুদ্ধে সারাদেশের ন্যায় অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। অপরদিকে বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী জেল খালসহ অধিকাংশ খাল কতিপয় প্রভাবশালীর আগ্রাসী থাবায় দখল হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া খালের মধ্যে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে এখন ময়লার ভাগাড় হয়ে দাঁড়িয়েছে অধিকাংশ খাল। নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির জেলার আহবায়ক এনায়েত হোসেন বলেন, নদী ও খাল দখলকারীরা যতো বড়ই প্রভাবশালী হোক না কেন অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। নতুবা খুব শীঘ্রই নদী ও খালের জেলা বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ নদী ও খাল মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
×