ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষা চেতনায় উদ্ভাসিত দিন, বইয়ের সঙ্গে উদযাপনের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ভাষা চেতনায় উদ্ভাসিত দিন, বইয়ের সঙ্গে উদযাপনের প্রস্তুতি

যে দিনটি ঘিরে মাসব্যাপী আয়োজন, এত বড় মেলা, আজ সেই আবেগঘন ঐতিহাসিক দিন। আজ বৃহস্পতিবার ভাষা চেতনায় উদ্ভাসিত ২১ ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এই দিনেই তো মহা ইতিহাসের জন্ম দিয়েছিল বাঙালী। প্রাণ দিয়ে রক্ষা করেছিল মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার। লেখার জন্য বেছে নিয়েছিল বাংলা বর্ণমালা। চির আবেগ চির শোক আর গৌরবের দিন স্মরণে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলার। এবারও ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে শুরু হয়েছে বই উৎসব। তবে মূল দিনটি ২১ ফেব্রুয়ারি। আজ ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে জাতি। জনস্রোত নামবে সেখানে। একুশের প্রথম প্রহরে নামা জনস্রোত পরে মোড় ঘুরিয়ে চলে আসবে বইমেলায়। মেলার প্রবেশদ্বারও খুলে দেয়া হবে অনেক আগে, সকাল ৮টায়। দুখিনী বর্ণমালার সঙ্গে পাঠক কাটাতে পারবেন রাত ৯টা পর্যন্ত। প্রতিবছরই এ দিনে পূর্ণতা পায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। পূর্ণতার দিনে সবচেয়ে বড় সমাগম ঘটবে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রকাশকরা। নিজেদের উল্লেখযোগ্য সব বই ইতোমধ্যে স্টলে তুলেছেন তারা। আশা করছেন, বিক্রিও হবে যে কোন দিনের চেয়ে বেশি। মেলার ২০তম দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে কথা হচ্ছিল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আগামীর কর্ণধার ওসমান গনির সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, রফিক শফিক বরকতদের রক্তে ভেজা বর্ণমালাই আমাদের শক্তি। আমরা বই প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা বর্ণমালাকে, বাংলা ভাষাকে প্রতিনিয়ত আরও আপন করে নিই। মেলা শুরুর পর থেকেই অপেক্ষা করে থাকি ২১ ফেব্রুয়ারির জন্য। বিশেষ দিবসে তাদের উল্লেখযোগ্য সব প্রকাশনা স্টলে পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। একই প্রসঙ্গে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, মেলা প্রতিদিনের। তবে ২১ ফেব্রুয়ারির মেলা পূর্ণতা পায়। সারা বছরই বই নিয়ে ছোট বড় মেলা হয়। কিন্তু সবচেয়ে সফল আয়োজনটি অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এর কারণÑ আয়োজনের সঙ্গে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের গভীর আবেগ জড়িয়ে আছে। একই কারণে মেলায় আজ সবচেয়ে বেশি লোক সমাগম ঘটবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি। বইয়ের সঙ্গে ভাষা দিবসের এই সংযোগ বাঙালীকে আরও অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় শহীদ দিবসের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখারও আহ্বান জানান একাডেমির মহাপরিচালক। এদিকে আজ সকাল থেকেই মেলায় চলবে একুশের অনুষ্ঠানমালা। সাড়ে ৭টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে আয়োজন করা হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে সভাপতিত্ব করবেন কবি অসীম সাহা। বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘অমর একুশে বক্তৃতা’। বিশেষ এই বক্তৃতা করবেন ভাষাসংগ্রামী জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। সন্ধ্যায় থাকবে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কবিতা ও গানে গানে ভাষা আন্দোলন ও একুশের চেতনাকে আগামী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা হবে। ১৩৮ নতুন বই ॥ মেলার ২০তম দিনে বুধবার নতুন বই এসেছে ১৩৮টি। লেখক বলছি ॥ এদিন ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের সদ্য প্রকাশিত বই নিয়ে কথা বলেন কবি মাসুদুজ্জামান, কবি মুজতবা আহমেদ মোরশেদ, কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা, প্রাবন্ধিক শীলা মোস্তফা প্রমুখ। মেলা মঞ্চের সেমিনার ॥ মেলা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘সওগাত পত্রিকার শতবর্ষ : ফিরে দেখা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. ইসরাইল খান। আলোচনা করেন ড. হাবিব আর রহমান এবং ড. আমিনুর রহমান সুলতান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সামাদ। প্রাবন্ধিক বলেন, সওগাত-যুগের অবসান ঘটেছে বটে, কিন্তু এখনও তার প্রভাব অনুভব করা যায়। সওগাতের প্রগতিবাদী সুচিক্কন সাহিত্যরুচির অনুসারী পত্রিকা তরুণদের মধ্যে থেকে এখনও বের হচ্ছে। ভুললে চলবে না আজ বইমেলার লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে তরুণদের যে সাহিত্যিক মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে- তারাতো সওগাত-কল্লোল-কালিকলম-প্রগতি-বুলবুল-চতুরঙ্গ-ছায়াবীথি-গুলিস্তাঁরই প্রতিনিধি। তিনি বলেন, সওগাত বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাসের গতি পরিবর্তন করে দিয়েছে। ‘সওগাত’ তাই কালের দাবি পূরণকারী ইতিহাসের গতি-নিয়ন্ত্রক একটি সাহিত্য-পত্রিকা। আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্য বক্তারা বলেন, সওগাত পত্রিকা বাঙালী মুসলিম সমাজে প্রগতিশীলতার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। এ পত্রিকা নারীস্বাধীনতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে যেমন ভূমিকা রেখেছে তেমনি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উদার আবহ সৃষ্টিতে এই পত্রিকার ভূমিকা ঐতিহাসিক গুরুত্বের দাবি রাখে। তারা বলেন, সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন এই পত্রিকার মধ্য দিয়ে কাজী নজরুল ইসলামসহ বাঙালী মুসলমান সাহিত্যিক প্রতিভা বিকাশ, পরিচর্যা ও লালনে যে ভূমিকা রাখেন তা এক কথায় অবিস্মরণীয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ॥ এদিন মেলা মঞ্চে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন আসাদ চৌধুরী, নাসির আহমেদ, মারুফুল ইসলাম এবং ওবায়েদ আকাশ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া আহমেদ এবং অলোক বসু।
×