ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দগ্ধ ১৬, অর্ধশতাধিক আহত

চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড

প্রকাশিত: ১৪:৩৪, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর চকবাজার থানা সংলগ্ন উর্দু রোডের চুড়িহাট্টায় বহুতল ভবনের কেমিক্যাল গোডাউন ও আরও দুটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে এদের মধ্যে ২০ জন দগ্ধ হয়েছে। তাদের ১৬ জনকে দগ্ধ অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে ও চারজনকে দগ্ধ অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, দগ্ধদের একজনের ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। বাকিদের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এছাড়া লাফিয়ে নামতে গিয়ে কারও হাত-পা ভেঙ্গেছেন। কারও মুখম-ল ও শরীরের বিভিন্নস্থানে মারাত্মক জখম হয়েছে। রাত ২টার দিকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বহুতল ভবনে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের ৩৩টি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার মিজানুর রহমান জানান, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন উর্দু রোডে চুড়িহাট্টা পাঁচতলা আবাসিক ভবনে ও তার নিচতলার একটি কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং ফায়ার সার্ভিস কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে। এরপর হঠাৎ আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। ওই পাঁচতলা আবাসিক ভবনের নিচতলায় কেমিক্যাল গোডাউনে থাকায় আগুন হঠাৎ বেড়ে ওঠে। এতে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে বেগ পেতে হচ্ছে। আগুন আশপাশের ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ভবনগুলো খালি করে সেখানকার বাসিন্দাদের অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চকবাজার শাহী মসজিদের পাশের উর্দু রোড চুড়িহাট্টায় পাঁচতলা আবাসিক ভবনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালায়। এ সময় আগুনে ছোট ছোট বিস্ফোরণ হয় দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। রাত ২টার দিকে ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত কর্মকর্তা মাহফুজ রিবেন বলেন, ভবনটির নিচে কেমিক্যালের গোডাউন রয়েছে। আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা এক ঘণ্টার মধ্যে আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণ আনেন। কিন্তু হঠাৎ আগুন বিকট আওয়াজে বিস্ফোরিত হয়ে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। এর কিছুক্ষণ পর আগুন পাশের আরেকটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবনটির নিচে পাউডারের মার্কেট রয়েছে। এর ওপরের ফ্ল্যাটগুলোতে ২০-২২টি পরিবার থাকত। তাদের সবাইকে নিরাপদে নামানো হয়েছে। তবে আরও কেউ আছে কিনা? তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পানির গাড়ি, ল্যাডারসহ এ্যাম্বুলেন্স নেয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি স্থানীয়রা আগুন নেভাতে সাহায্য করছেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশের মসজিদ থেকে পানি নিয়ে আগুনে নেভাতে দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওয়াহেদ ম্যানসনের সামনে একটি ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরিত হয়ে একটি প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। এ সময় প্রাইভেটকারের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ভবনে আগুন লাগে। তবে স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, ওয়াহেদ ম্যানসনের পাশে দুটি হোটেল রয়েছে। সেই হোটেল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুনের ভয়াবহতা বাড়ছে বলেও স্থানীয়রা জানান। এদিকে আগুনের ঘটনায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মোট ৫০ জন চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এদের মধ্যে ১৬ দগ্ধ হয়েছেন। ঢামেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, দগ্ধদের মধ্যে রেজাউল (২১) ও জাকির হোসেনের (৫০) অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিরা হচ্ছেন সেলিম (৪৫), আনোয়ার (৫০), মোস্তাফিজ (৪০), জাহিদুল (২৮), ইভান (৩০), মাহমুদ (৫৭), রামিম (১২), সালাউদ্দিন (৫০), মোজাফ্ফর হোসেন (৩২), সোহাগ (২৬), সোহান (৩৫), ফজর আলী (২৫), হেলাল (২৫) ও সুজন (৪০)। এদের সবাইকে হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আহত অবস্থায় অন্তত ৪০ জনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তারা হচ্ছেন আল-আমিন (৩৫), কাউছার (৩০), জাহাঙ্গীর (২৩), ছালাম (৩০), রবিউল (৪০), সালাউদ্দিন (৩৪), আনিছুর রহমান (৫০), তানজিল (১৪), রমজানসহ (১২) আরও অনেকে। এছাড়াও আশঙ্কাজনক অবস্থায় দগ্ধ চারজনকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক সিদ্দিকুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে আব্দুল মান্নান (৬০) এবং হেলাল উদ্দীন (১৮) নামে দু’জন মারাত্মক দগ্ধ হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঢামেক হাসপাতালে আহতরা জানিয়েছেন, একটি পুরনো ভবন ধসে তারা চাপা পড়েন। সেখানেই তারা অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। একটি চারতলা ও একটি পাঁচতলা ভবনে আগুন জ্বলছে। এগুলোর নিচে খাবার হোটেল এবং ত্রিশটির বেশি প্লাস্টিক ও কেমিক্যালের দোকান রয়েছে। তবে কীভাবে আগুন লেগেছে। তা জানতে পারিনি। ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান বলেন, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এই আগুন লাগে। প্রয়াত ওয়াহিদ চেয়ারম্যানের চারতলা ওই ভবনে প্রথমে আগুন লাগলেও বিস্ফোরণের পর তা পাশের রাজমনি নামে একটি রেস্তরাঁ এবং সরু রাস্তা উল্টো দিকের দুটি ভবনে ছড়ায়। রাত দেড়টার দিকে ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক আলী আহাম্মেদ খান জানান, মোট চারটি ভবনে আগুন লেগেছে। তার বাহিনীর ৩৩টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে। সরু ওই সড়কে আগুন নেভানোর কাজ করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর কর্মীদের। মসজিদের ভেতর থেকে পানি এনে আগুনে ছিটাচ্ছেন তারা। ওয়াহিদ চেয়ারম্যানের বাড়ির দোতলায় আগুন জ্বলছিল রাত দেড়টায়ও, পাশের দুটি ভবনেও শিখা দেখা যাচ্ছিল। তবে আগুনের তেজ কমে এসেছে। ডিজি আলী আহাম্মেদ জানান, আগুন এখন ছড়াচ্ছে না, তবে ভবনগুলোর ভেতরে কিছু কিছু জায়গায় আগুন জ্বলছে।
×