ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চীনা বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার

বদলাতে হবে না পেসমেকারের ব্যাটারি

প্রকাশিত: ১২:২৭, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বদলাতে হবে না পেসমেকারের ব্যাটারি

হার্টের স্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা হয়। এই ছোট্ট যন্ত্রটি আমাদের জীবন বাঁচায়। তবে এই পেসমেকার চিরস্থায়ী নয়। প্রতি পাঁচ থেকে ১২ বছর অন্তর এটির ব্যাটারি বদলাতে হয়। প্রতিবার ব্যাটারি বদলের সময়ও আমাদের শরীরে বড় ধরনের অস্ত্রোপচার করতে হয়। তবে চীনা বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরনের পেসমেকার তৈরি করেছেন যেটির ব্যাটারি লাগবে না। এই পেসমেকার আপনা-আপনি শক্তি উৎপাদন করতে পারবে এবং হার্টের স্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হবে। সাংহাইয়ের প্রখ্যাত ‘ন্যাশনাল কি ল্যাবরেটরি’র বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণার পর এই ধরনের পেসমেকার তৈরি করেছেন। এই পেসমেকারটি হার্টের উষ্ণতা থেকে এটির চলার মতো শক্তি গ্রহণ করতে পারে। উল্লেখ্য, ১৯৫০-এর দশক থেকে বিশ্বব্যাপী পেসমেকার ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এতদিনে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে শক্তি উৎপাদনের মতো কোন পেসমেকার ছিল না। বর্তমান সময়ে হার্টে প্রতিস্থাপিত পেসমেকারটি সরিয়ে ফের অপর একটি পূর্ণ চার্জযুক্ত পেসমেকার বসানো হয়। এই প্রক্রিয়ায় সংক্রমণের ঝুঁকি এবং সমস্যা থেকেই যায়। হৃদরোগীদের জন্য প্রক্রিয়াটি বেশ ঝামেলাপূর্ণ। এভাবে খরচও হয় অনেক বেশি। বর্তমানে একটি পেসমেকারের দাম ক্ষেত্রবিশেষে ১৯ হাজার ডলার থেকে ৯৬ হাজার ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর সঙ্গে অস্ত্রোপচারের খরচ তো রয়েছেই। তবে চীনা বিজ্ঞানীদের তৈরি এই নয়া পেসমেকারটি এই ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা মুক্ত। একটি নরম প্লাস্টিকের কাঠামোর মধ্যে পেসমেকারের যন্ত্রগুলো বসানো হয়েছে। যন্ত্রগুলো ঠিক এমনভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে যাতে এটি হার্ট থেকে সহজেই শক্তি গ্রহণ করতে পারে। ওই প্লাস্টিক কাঠামোর ভেতরে চাপ প্রয়োগ করতে পারে এমন কয়েকটি ইলেকট্রিক বস্তুর সেন্সর বসানো হয়েছে। এই সেন্সরগুলোই মূলত শক্তি উৎপাদন করে। শরীরের অভ্যন্তরের স্বচ্ছ পদার্থ (ক্রিস্টাল), ডিএনএ এমনকি হাড় পর্যন্ত বৈদ্যুতিক শক্তি গ্রহণ করতে সক্ষম। এই কথা মাথায় রেখে পেসমেকারটির অভ্যন্তরে একাধিক ইলেকট্রিক বস্তুর সেন্সর বসানো হয়েছে। কয়েকটি শূকরের হার্টে পেসমেকারটি বসিয়ে ভাল ফল পেয়েছেন সাংহাইয়ের ‘ন্যাশনাল কি ল্যাবরেটরি’র বিজ্ঞানীরা। ন্যাশনাল কি ল্যাবরেটরির গবেষক এবং গবেষণা দলটির প্রধান বিন ইয়ান বলেন, হার্ট সচল রাখতে পেসমেকারে শক্তি উৎপাদনের জন্য আমাদের এই পেসমেকারটি সঠিকভাবে কাজে আসবে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে এটির কাঠামোটি একটু বড় মনে হচ্ছে। এ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। এটি মানুষের শরীরে বসানোর আগে পরীক্ষামূলকভাবে আরও কয়েকটি প্রাণীর দেহে বসানো হবে বলে জানান বিন ইয়ান। অবশ্য ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসের ‘হার্ট রিদম ইনস্টিটিউট’ একবার ব্যাটারি ছাড়া পেসমেকার তৈরি করতে গবেষণা করেছিল। ওই সময় প্লুটোনিয়াম দিয়ে পেসমেকারে শক্তি উৎপাদনের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানান কানসাসের হার্ট রিদম ইনস্টিটিউটের প্রধান ধনঞ্জয়া লাক্কিরেড্ডি। তিনি এই নতুন ডিভাইসটিকে অন্যতম আবিষ্কার হিসেবে আখ্যা দেন। তবে এটি নিয়ে আরও পরীক্ষা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। -সায়েন্স ডেইলি ও ডেইলি মেইল অবলম্বনে।
×