ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের জন্য মসজিদে মসজিদে দোয়া

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের জন্য মসজিদে মসজিদে দোয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চকবাজার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে মসজিদে মসজিদে দোয়া হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার করুনা প্রাপ্তির জন্য দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে মসজিদে মসজিদে ছিল কান্নার রোল। দোয়া শেষে চোখ মুছতে মুছতে মসজিদ ছেড়েছেন আগত মুসল্লিরা। ছোট্ট শিশু থেকে বয়োজেষ্ঠ্য সবাই চেয়েছেন নিহতের আত্মার শান্তি। একই সাথে এই অগ্নিকাণ্ডে যারা এখনো যন্ত্রনায় হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য হওয়ার দোয়াও করা হয়। নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনায় বঙ্গভবন জামে মসজিদ, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, ধানমন্ডি, জিগাতলা, কলাবাগান, ইস্কাটন, কারওয়ান বাজারসহসহ দেশের মসজিদগুলোতে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত হয়েছে বলে জানা গেছে। রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার জুমার নামাজের পর ওই বিশেষ মোনাজাতে চুড়িহাট্ট ট্র্যাজেডিতে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এই মোনাজাতে অংশ নেন। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বঙ্গভবন জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম মাওলানা এনামুল হক। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ শেষে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মোনাজাত হয়। এতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আগুনের ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনাসহ আহতদের দ্রুত আরোগ্য লাভের প্রার্থনা করা হয়। পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের শোক কাটিয়ে ওঠার জন্য মোনাজাত করা হয়। এ সময় দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনা করে দোয়া করা হয়। পরে মসজিদের দক্ষিণ পাশে গায়েবানা জানাজায় অংশ নেন হাজারো মানুষ। গায়েবানা জানাজা পরিচালনা করেন মাওলানা আবদুল হালিম সিরাজী। গায়েবানা জানাজায় ও মোনাজাতে হাজারো মুসল্লির সাথে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ, ধর্মসচিব মো. আনিছুর রহমান অংশ নেন। এদিন পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার দৃশ্য ছিল বেদনাবিধুর। দুহাত তুলে বাচ্চা শিশুরা যখন মোনাজাতে হাত তুলে তখন গাল গড়িয়ে টল টল জল পড়ছিল। এছাড়াও মধ্য বয়সী থেকে বৃদ্ধ সবাই কেউ নিবৃত্তে কেউবা উচ্চস্বরেই কেঁদে উঠেন। প্রতিদিনের চেনা জানা মুখগুলোই বারবার ভেসে উঠছিল মনের আয়নাতে। পুড়ে যাওয়া ভবনের ১৫ ফিট উত্তরে অবস্থিত চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদ। অসংখ্য মানুষ এখানে নামাজে অংশ নেন। জুমার নামাজের মোনাজাতে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের ইমাম বলেন, ‘হে আল্লাহ যারা এ ঘটনায় পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন তাদেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। তাদের পরিবারকে শোক সহ্য করে ধৈর্য ধরার ক্ষমতা দান করুন।’ এছাড়াও যারা এখনো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তাদের সুস্থতার জন্যও দোয়া করেন মসজিদের ইমাম। এদিকে, রাজধানীর ইস্কাটন জামে মসজিদে নামাজ শেষে মোনাজাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়। এসময় অসংখ্য মুসল্লি কান্নাবেজা কণ্ঠে ‘আমিন’ ‘আমিন’ বলতে থাকেন। জিগাতলা গাবতলা মসজিদের ইমাম জুমার নামাজের পর মোনাজাতে সবাইকে চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহতদের জন্য সবাইকে দোয়া করতে বলেন। মসজিদের ইমাম মোনাজাতেয় বলেন, ‘হে আল্লাহ যারা চকবাজার অগ্নিকা-ের ঘটনায় পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন তাদের জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। তাদের পরিবারকে শোক সহ্য করে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুন। আগুনের ঘটনায় যারা মারা গেছেন তাদের সকলকে শহীদের মর্যাদা দান করুন।’ এদিকে, অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও নিহতদের শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। সকালে বিভিন্ন গির্জা ও পেগোডায় নিহতদের শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। এছাড়া, দুপুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরেসহ বিভিন্ন মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। এর আগে, বৃহস্পতিবারই ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজপ্তিতে অগ্নিকা-ে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শুক্রবার দেশের সব মসজিদে বাদ জুম্মা বিশেষ মোনাজাতের অনুরোধ করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনার অনুরোধ জানান। প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ৬৪ নম্বর ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটের প্রায় ২০০ কর্মী স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই ঘটনায় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মোট ৬৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানায় ঢাকা জেলা প্রশাসন। আহত ও দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪১ জন। তাদের মধ্যে দুজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র আইসিইউতে রাখা হয়েছে। বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
×