ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশীদের কর ফাঁকি

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 বিদেশীদের কর ফাঁকি

কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা এদেশে-ওদেশে সব দেশেই রয়েছে বলা যায়। তবে পাশ্চাত্যে কর ফাঁকি দেয়া সহজ নয় কর আদায়ের পদ্ধতির কারণে। কিন্তু বাংলাদেশে যাদের কর প্রদানের সামর্থ্য রয়েছে তারাই কর ফাঁকি দিতে সিদ্ধহস্ত বলে প্রচার রয়েছে অনেককাল ধরেই। তবে কর প্রদান পদ্ধতি ক্রমশ সহজ করে আনায় কর প্রদানে উৎসাহী হয়ে উঠছে করদাতারা। তাই দাতার সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের কর ফাঁকি রোধ করার গতি স্তিমিত প্রায়। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা-সমালোচনা হলেও অদ্যাবধি টেকসই কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। তিন বছর আগে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের কর ফাঁকি রোধে কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতায় তাতে ভাটা পড়েছে। ফলে এত বছরেও বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের বিশ্বাসযোগ্যভাবে চিহ্নিত করা, বৈধ-অবৈধ কর্মরত বিদেশী নাগরিক নির্ধারণ, তাদের প্রকৃত আয়, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে প্রকৃত আয়কর আদায় করাও সম্ভব হচ্ছে না। এই ব্যর্থতা একান্তই এনবিআরের। যদিও তারা বলছে এমন পরিস্থিতিতে বিদেশী কর্মীদের আয়কর বিষয়ে সচেতন করতে ‘লিফলেট’ বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। বিস্ময়কর মনে হতেই পারে যে কারও। বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ছাড়াও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে আয়কর বিষয়ে সম্যক ধারণা দিতে এ লিফলেট বিতরণ করা হবে। বিদেশীদের কর ফাঁকি রোধে এই পদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে এমনটা কারও কাছেই বিশ্বাসযোগ্য বলে প্রতীয়মান হবে না। দেশেবিদেশী নাগরিকদের প্রকৃত সংখ্যা চিহ্নিত করা যায়নি অদ্যাবধি। অথচ তিন বছর আগে তাদের সংখ্যা চিহ্নিত ও তাদের কাছ থেকে প্রযোজ্য কর আদায় করতে এনবিআর ‘শক্তিশালী টাস্কফোর্স’ গঠন করেছিল। এই টাস্কফোর্স কর ফাঁকিবাজ বিদেশী নাগরিকদের চিহ্নিত করতে বেশকিছু কার্যক্রম নিয়েছিল। বিদেশী নাগরিক কাজ করে এমন ২৮৬ প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিতও করা হয়েছিল। এছাড়া তাদের কর ফাঁকি ধরতে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে বিমানবন্দর ত্যাগকালে আয়কর সনদ দেখানোর বাধ্যবাধকতা আরোপ করে কর বিভাগ। এ লক্ষ্যে দেশের চারটি বিমানবন্দরে এ সংক্রান্ত ডেস্ক চালুর পর বেশ কয়েকজন কর ফাঁকিবাজ বিদেশী নাগরিককে চিহ্নিতও করা হয়। শুধু তাই নয়, তাদের কাছ থেকে এ প্রক্রিয়ায় কয়েক কোটি টাকা আয়করও আদায় করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত দেশে কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী বিদেশী করদাতার সংখ্যা ১২ হাজার ৪২১ জন। অন্যদিকে ইমিগ্রেশন কর্র্তৃপক্ষের হিসাবে ওয়ার্ক পারমিট গ্রহণকারী বিদেশী নাগরিকের সংখ্যা সাত হাজারের সামান্য বেশি। অথচ দেশে কয়েক লাখ বিদেশী নাগরিক কাজ করে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষত গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল কারখানা, বায়িং হাউস, এনজিও, বহুজাতিক কোম্পানি, অবকাঠামো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কয়েক লাখ বিদেশী কাজ করে। অথচ তাদের প্রকৃত সংখ্যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। তাদের বেতনের প্রকৃত অঙ্কও গোপন করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বর্তমান নিয়মে দেশে কোন বিদেশী নাগরিক তিন মাস অবস্থান করলে তার কর ফাইল খুলতে হয়। অনেক বিদেশী নাগরিক কর ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে তিন মাসের ঠিক আগে বাংলাদেশ ত্যাগ করে আবার ফেরত আসেন। অনেকে বছরের পর বছর পার করলেও এ প্রক্রিয়ায় কর এড়িয়ে যাচ্ছেন। এনবিআরের উচিত আলস্য ও উদাসীনতা এবং কর্তব্যে অবহেলা না করে সক্রিয়ভাবে তৎপরতা চালিয়ে কর আদায়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দেশের অর্থ রাজস্ব প্রদান ছাড়া বিদেশে নিয়ে যাওয়া অর্থ পাচারের সমতুল্য। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ দরকার বাস্তব পদক্ষেপ।
×