ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ সড়ক নিয়ে কিছু কথা

প্রকাশিত: ০৯:২২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 নিরাপদ সড়ক নিয়ে  কিছু কথা

নিরাপাদ সড়ক নিশ্চিত করতে হলে ৫টি অঙ্গকে নিরাপদ রাখতে হবে। তার মধ্যে প্রথম অঙ্গটি হচ্ছে ড্রাইভিং, দ্বিতীয় অঙ্গটি হচ্ছে- গাড়ি বা যানবাহন, তৃতীয় অঙ্গটি হচ্ছে- রাস্তা, ৪র্থ অঙ্গটি হচ্ছে- ট্রাফিক পুলিশ এবং ৫ম অঙ্গটি হচ্ছে- বিআরটিএ। যদি এই ৫টি অঙ্গের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় তাহলে বাংলাদেশের সড়ক নিরাপদ হবে। ড্রাইভিং, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মানুষের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলেই গাড়ি চালানো শিখে ফেলে। কেউ পেশাদার ড্রাইভারের উপর নির্ভর করে না। এই দেশে পুরুষ-মহিলা, যুবক-যুবতী, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, ৯০ বছরের মানুষকেও গাড়ি চালাতে দেখা যায়। তাই শুধু পেশাদার ড্রাইভারদের উপর নির্ভর না করে সবারই গাড়ি চালানো শেখা দরকার। অফিস আদালতে যারা চাকরি করেন তাদের সবারই ড্রাইভিং শেখা বাধ্যতামূলক করে দিলে অফিসের গাড়ি আর পেশাদার চালক দিয়ে চালাতে হবে না। প্রত্যেক চাকরি প্রার্থীর ড্রাইভিং শেখা বাধ্যতামূলক করে দিতে হবে। ট্রাফিক পুলিশ, পার্কিং পুলিশ, দুর্ঘটনায় উদ্ধার কাজ এবং হাসপাতালে রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য একটি টিমের ব্যবস্থা এলাকাভিত্তিক রাখতে হবে। যেসব ড্রাইভার রাতে গাড়ি চালান তাদের বলছি, যেহেতু রাতে গাড়ি চালানোর সময় যে কোন ড্রাইভিং সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আপনি যতদূর দেখেন তার উপর ভিত্তি করে তাই রাতে গাড়ি চালানোর সময় সাবধানে চালান। বেশিদূর দেখতে পারছেন না, বয়স বাড়ার ফলে দৃষ্টিশক্তি কমে এসেছে এরূপ সমস্যা থাকলে গাড়িচালকদের রাতে গাড়ি চালানো উচিত নয়। রাতে গাড়ি চালানোর সময় আগে থেকে যে দূরত্ব এবং সাইডে দেখার কথা তা কমে যায়। তাই দিনে যে গতিতে গাড়ি চালান তার চেয়ে কম গতিতে রাতে গাড়ি চালানো উচিত। বিশেষ করে অজানা এবং আঁকাবাঁকা ও সরু রাস্তায়। যানবাহন নিয়ম আনুযায়ী সূর্যাস্তের আধা ঘণ্টা পরে এবং সূর্য উঠার আধা ঘণ্টা পূর্বে গাড়ির হেডলাইট জালানো থাকবে। যখন দৃষ্টি ১০০০ ফিট হয় এবং যখন গাড়ির বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করেন তখন হেডলাইট জ্বালানো থাকবে। ডিফেন্সিভ ড্রাইভিং বা আত্মরক্ষামূলক ড্রাইভিং সবচেয়ে ভাল। বিভিন্ন কারণে যেমন- আবহাওয়া খারাপ থেকে, যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে, কোন সড়ক দুর্ঘটনা হলে, সড়ক অন্ধকার থাকার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা হতেই পারে। তাই এক্ষেত্রে আত্মরক্ষামূলক ড্রাইভিং করাই ভাল। সব সময় সতর্ক থাকুন, সামনের দিকে তাকান, সঠিক গতিতে গাড়ি চালান, ব্রেক করার সময় সিগনাল দেখান, লাইন পরিবর্তনের সময় সিগনাল দেখান, নিজের জন্য জায়গা রাখুন, সিটবেল্ট পরিধান করুন, অসুস্থ হলে কখনও গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকুন। মেডিসিন সেবন করলে, বা মদ খেয়ে গাড়ি চালাবেন না। ক্লান্ত এবং ঝিমঝিম ভাব নিয়ে গাড়ি না চালানোই শ্রেয়। ক্লান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো হচ্ছে- আপনার চোখ বন্ধ হয়ে আসবে, মাথা সোজা রাখতে কষ্ট হবে, আপনার বিভিন্ন চিন্তা আসবে, আপনি যে কত মাইল ড্রাইভিং করেছেন তাও ভুলে যাবেন। যেসব ড্রাইভার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ড্রাইভিং করেন তারা প্রায়শ ঘুম থেকে বঞ্চিত এবং ক্লান্ত থাকেন, কোন বিশ্রাম ছাড়াই দীর্ঘপথ গাড়ি চালান। যারা রাতে, বিকেলে, সন্ধ্যার সময় গাড়ি চালান, একা গাড়ি চালান, যারা গ্রামীণ সড়কে একটানা অনেক সময় গাড়ি চালান তাদের ড্রাইভিংও ঝুঁকিপূর্ণ। জরুরী বা ইমারর্জেন্সি ড্রাইভিং টায়ার পাংচার হলে কি করবেন-ভীষণ শব্দ হলে বুঝতে হবে যে টায়ার ব্লআউট হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি সড়কের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে ধীরে ধীরে স্টপ করুন। যদি বুঝতে পারেন যে, টায়ার ব্লআউট হয়েছে তখন শক্ত করে স্টিয়ারিং ধরে রাখুন গ্যাসপ্যাডেল থেকে আপনার পা সরিয়ে নিন। তারপরও যদি আপনার গাড়ি স্লিপ কেটে সরে যাচ্ছে দেখেন তাহলে বরফের মধ্যে চালানোর সময় যেভাবে চালান ঠিক সেভাবে চালান। গাড়ির ব্রেক ব্যবহার করবেন না যতক্ষণ না আপনার গাড়ি নিয়ন্ত্রণে না আসে। রাস্তার নিরাপদ স্থানে গাড়ি নিয়ে যান যখন উপযুক্ত মনে করেন। ব্রেক ফেল করলে- যদি দেখেন আপনার ব্রেক মেঝেতে পরে গেছে, চেষ্টা করেন যাতে করে প্রেসার তৈরি করতে পারে। যদি এটা কোন সাহায্য না করে তাহলে জরুরী অথবা পার্কিং লাইট ব্যবহার করুন। নিচের গিয়ার ব্যবহার গাড়ির গতি কমাতে আপনাকে সাহায্য করবে। হেডলাইট ফেল করলে- হেডলাইট যদি হঠাৎ চলে যায় তখন ৪ উয়ে ফ্লাশের পার্কিং লাইট সিগনাল ব্যবহার করুন। এটা তখনও কাজ করবে এবং যথেষ্ট আলো দেবে সড়কের নিরাপত্তার জন্য।ফুটপাথে গাড়ি উঠে গেলে, স্টিয়ারিং পেছন দিকে টান দেবেন না, আপনার পা প্যাডেল থেকে বিচ্ছিন্ন করুন। দেখবেন আস্তে আস্তে গাড়ির গতি কমে যাবে। কিছু সাধারণ সমস্যা আপনিও চেক করতে পারেন- গাড়ি চালাতে গিয়ে কিছু সমস্যা হতে পারে। এগুলো নিজে থেকে সমাধান করতে পারেন। কোন মেকানিকের প্রয়োজন হয় না। যেমন ব্রেক, টায়ার, লাইট,স্টিয়ারিং, হর্ন, গ্লাস ইত্যাদি। গাড়ির ব্যাটারি দুর্বল হলে কি করবেন- বিভিন্ন কারণে গাড়ির ব্যাটারি কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। এমন হতে পারে ব্যাটারির মেয়াদ শেষ। ব্যাটারি ড্রাইসেল হোক বা ওয়েট ব্যাটারি, সবারই একটা নির্দিষ্ট আয়ু আছে। আপনি হয়ত যত্নের মাধ্যমে এর জীবনকাল বাড়াতে পারেন। তাছাড়া আপনার গাড়ির ব্যাটারি যদি আগে থেকেই দুর্বল থাকে তবে শীতের সময় গাড়ি চালু করতে বাড়তি চার্জ প্রয়োজন হবে। আপনার গাড়ি যদি কয়েক বছর পুরনো থাকে তবে এটা চালু করতে আপনার শক্তিশালী এএইচ ব্যাটারি দরকার হবে। এ ধরনের কাজ বেশিদিন চালু রাখলে আপনার গাড়ির ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাবে। অনেক সময় কোন তারের থেকে বিদ্যুত লিক করতে থাকলেও গাড়ির ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার কখনও নতুন ব্যাটারিতেও সারারাত কোন কিছু প্লাগ ইন করে রাখলে সকালে সেই গাড়ি আর চালু হবে না। গাড়ির নিয়মিত কিছু রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন হয়। দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য এগুলো সময়মতো করে নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসবের মধ্যে রয়েছে মোবিল পরিবর্তন, বিভিন্ন ফিল্টার পরিবর্তন, ট্রান্সমিশন ফ্লুইডসহ নানা ফ্লুইড পরিবর্তন। এসব কাজের জন্য প্রত্যেক গাড়ি নির্মাতাই তাদের গাড়ির জন্য নির্দিষ্ট একটি মাপকাঠি সেট করে দেয়। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ড্যাশবোর্ডের লাইটে পা না দেয়া- গাড়ি গরম হয়ে গেলে যেমন লাইট জ্বলে ওঠে তেমন আরও নানা সঙ্কেত ড্যাশবোর্ডে দেখা যায়। এসব সঙ্কেত দেখে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এসব লাইট থেকে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ নানা সমস্যা বোঝা সম্ভব হয়। আর লাইটগুলোকে গুরুত্ব না দিলে তা দুর্ঘটনারও কারণ হতে পারে। ঠিকঠাক গিয়ার পরিবর্তন না করা- গিয়ার বক্স গাড়ির একটি মূল্যবান যন্ত্র। আপনি যদি গাড়ি সামনে চলার সময় ব্যাক গিয়ার পরিবর্তন করে চাকায় শক্তি দেন তাহলে তা গিয়ার বক্সের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এ ধরনের অভ্যাসে গাড়ির গিয়ার বক্স নষ্টও হয়ে যেতে পারে। ম্যানুয়াল গাড়ির গিয়ার পরিবর্তনের সময় ঠিকঠাক ক্লাচ চেপে নেয়া উচিত। এ ধরনের বিষয়গুলো ঠিকভাবে না করলে গাড়ি দ্রুত নষ্ট হতে পারে। বাজে ড্রাইভিং- গাড়ির গতি বাড়ানো, কমানো কিংবা ঝাঁকি দেয়ার ক্ষেত্রে সব সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। যদি গাড়ির গতি বাড়ানো হয়, ট্রাফিক সিগনালে গিয়ে হঠাৎ শক্ত ব্রেক করে থামানো হয়, ভাঙ্গা রাস্তা হলেও যদি গাড়ির গতি কমানো না হয় তাহলে গাড়ি দ্রুত নষ্ট হয়। বাজে ড্রাইভিংয়ের কারণে গাড়ির সবগুলো যন্ত্রের ওপরেই বাড়তি চাপ পড়ে। এতে যন্ত্রপাতি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। সময়মতো টায়ার পাল্টানো- গাড়ির টায়ার যদি সময়মতো পাল্টানো না হয় তাহলে তা বৃষ্টি ও কাদার মধ্যে দুর্ঘটনার কারণ হয়। এতে হঠাৎ চাকা পাংচার হয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একজন নিরাপাদ ড্রাইভার যখন গাড়ি চালান তখন ড্রাইভারের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে, সড়কে চলার নিয়ম এবং সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে যাবতীয় আইন-কানুন জানা থাকতে হবে। ড্রাইভারদের নিজেদের ড্রাইভিং আচরণ সম্পর্কে ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ আছে কি-না, গাড়ি চালানোর যোগ্যতা আছে কি-না তা ড্রাইভাদের নিজেদেরকেই মূল্যায়ন করতে হবে। মদ পান করে ড্রাইভিং করা যাবে না। নিজেকে ক্লান্ত মনে হলে গাড়ি চালাবেন না। সিটবেল্ট পরে গাড়ি চালান। নিজেই প্লান করুন কিভাবে আপনি গাড়ি চালাবেন এবং সড়ক রোল মেনে চলবেন। কোন গাড়ি, যার সঙ্গে আপনি পরিচিত নন সেই গাড়িকে নিশ্চিতভাবে না যেনে চালাবেন না। সব সময় অবস্থা বুঝে উপযুক্ত গতিতে গাড়ি চালান। দিনের আলো ব্যবহার করুন, আবহাওয়া খারাপ হলে যাত্রা বাতিল করুন। ব্যবহারের পূর্বে প্রতি মুহূর্তে গাড়ি চেক করুন, যদি মালপত্র বহন করতে হয় তাহলে যাতে নড়াচড়া করতে না পারে সেভাবে রাখুন। গাড়ি চালনোর সময় ঘুম আসতে পারে, দূরের যাত্রায় অবিরাম গাড়ি চালালে রাত ২টা থেকে ভোর ৪টা এবং বিকেল ২টা থেকে ৪টা এই সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন। জরুরী মনে করলে ৩০ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে আবার গাড়ি চালান। লেখক : আহ্বায়ক: ক্যাম্পেন ফর রোড সেফ্টি, নিউইয়র্ক
×