ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি আজও পাননি গনি মিয়া

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি আজও পাননি গনি মিয়া

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। ১১নং সেক্টরে থেকে নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রশিক্ষণও। খুব ভাল রান্না করতে পারতেন বলেই যুদ্ধের পাশাপাশি ক্যাম্পের রান্না করতেন প্রায় সময়। বিভিন্ন অপারেশনে গোলাবারুদ কাঁধে তুলে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন গন্তব্যে। স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও মেলেনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। হাজারো সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার ভিরে নিভৃতে সময় কাটছে এই সহজ-সরল মানুষটির। দিনে তিনি কাপড়ের দোকানের সামান্য কর্মচারী। আর রাতে গোপনে পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। কুড়িগ্রামের উলিপুর শহরের পরিচিত মুখ আব্দুল গনি মিয়া (৬৭)। দেশ স্বাধীনের আগে ভারতসহ বিভিন্ন জায়গায় ফুটবল খেলে কুড়িয়েছেন সুনাম। ক্রীড়ামোদী এই মানুষটি জীবন সায়াহ্নে এসে নিজ উদ্যোগে উলিপুর বড় মসজিদে করছেন পরিচ্ছন্নতার কাজ। এই কাজ করে খুশি তিনি। প্রতিদিন রাত ৯টার পর চলে আসেন মসজিদ কমপ্লেক্সে। ঝড়-বৃষ্টি-শৈত্যপ্রবাহ তাকে আটকে রাখতে পারেনি। এখানে এসে হাতে তুলে নেন ঝাঁড়ু। নিজে ক্রয় করা সামগ্রী দিয়ে মসজিদের অজুখানা, প্র¯্রাবখানা, অপরিষ্কার ড্রেনসহ ক্যাম্পাস পরিষ্কার করেন। এখানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা কাজ করে বাসায় গিয়ে গোসল সেরে ঘুমিয়ে পড়েন। এভাবে ৭-৮ বছর ধরে এই সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে ৬ সন্তানের জনক তিনি। ৩ ছেলে ও ৩ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সবাই যার যার সংসারে ব্যস্ত। জেলার উলিপুর উপজেলার পৌর এলাকার নারিকেলবাড়ি কাজিরচক গ্রামে তার বাড়ি। উলিপুর দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় দুই যুগ ধরে। আব্দুল গনি মিয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন ডানপিটে স্বভাবের। খেলাধুলার প্রতি ছিল অসম্ভব টান। দেশ স্বাধীনের আগে ভারতের মাইনকারচর, বকবান্দাসহ কুড়িগ্রাম, রংপুর, রাজশাহীর বিভিন্ন জায়গায় ফুটবল খেলে পরিচিতি লাভ করেন। এখনও ভালবাসেন ফুটবলকে। স্থানীয়ভাবে লাল দল ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। দুস্থ খেলোয়াড়দের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে যে ভাতা প্রতি বছর দেয়া হয় তা তিনি পেয়েছেন কয়েকবার। শহরের কেপি সাহা এ্যান্ড বস্ত্রালয় কাপড়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দোকানের কাজ শেষ করে তিনি ছুটে যান বড় মসজিদে। তিনি আরও জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশ মাতৃকাকে মুক্ত করতে ১১নং সেক্টরের প্রশিক্ষক নজরুল ইসলামের কাছে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও ওই সময় জেলার উলিপুর ও চিলমারীতে বিভিন্ন অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ বহন এবং ক্যাম্পে রান্নাবান্নার কাজ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। সাবেক উলিপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমডি ফয়জার রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি গনি মিয়ার নাম অন্তর্ভুক্ত করে কেন্দ্রে প্রেরণ করেছে। যুদ্ধকালীন তার ভূমিকার জন্য ১১নং সেক্টরের প্রশিক্ষক নজরুল ইসলাম ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের প্রত্যয়নপত্র তার রয়েছে। -রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম থেকে
×