ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দখল দূষণে অবরুদ্ধ প্রমত্তা ডাকাতিয়া

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দখল দূষণে অবরুদ্ধ প্রমত্তা ডাকাতিয়া

প্রদীপ কুমার রায়, রায়পুর,লক্ষ্মীপুর ॥ লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে দখল আর দূষণে অবরুদ্ধ হয়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে একসময়ের পপ্রত্তা ডাকাতিয়া নদী। নদীর বুকে ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, বাঁধ দিয়ে অবৈধ মাছ চাষ, ময়লা-আবর্জনায় পানিদূষণের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পানির প্রবাহ অবরুদ্ধ হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে সব নৌ-চলাচল। এতে করে এখান থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে মালামাল পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সুবিধা-বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন এ অঞ্চলের লাখো মানুষ। নদীটি খনন করে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে দেওয়া ও দখল উচ্ছেদ করে প্রতিবন্ধকতা দূর করলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নদীকেন্দ্রিক লাখো মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। জানা যায়, ডাকাতিয়া নদীটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে, কুমিল্লা-লাকসাম-চাঁদপুর হয়ে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌর শহরের ওপর দিয়ে হাজিমারায় মেঘনা নদীতে গিয়ে মিশেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৪১ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬৭ মিটার। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দখলে-দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে নদীটি। স্বাধীনতার পরও রায়পুর-হায়দারগঞ্জ সড়কে নদীর ওপর ছিল একটি কাঠের সেতু। কিন্তু এখন রাস্তার দৃশ্য দেখে বোঝার উপায় নেই যে এখানে একটা নদী ছিল। কারণ সেতুর দুই পাশে ইজারা নেওয়ার নামে বড় বড় স্থাপনা ও দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। উত্তর পাশেই ছিল রায়পুর বাজার লঞ্চঘাট, যেখানে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে লঞ্চ ও বড় বড় নৌকা আসা-যাওয়া করত। এ নদী দিয়ে বরিশাল, ভোলা, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মালামাল পরিবহন করা হতো বলে স্থানীয়রা জানান। নদীর ওপর রাস্তা ও ভূমিদস্যূদের স্থাপনা নির্মাণের কারণে স্বাভাবিক গতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় এখন বন্ধ হয়ে গেছে সব নৌ-চলাচল। একইভাবে রায়পুর মহিলা কলেজের সামনে নদী ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে একাধিক কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সুপারি ভেজানোসহ বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে নদীর পানি দূষিত হয়ে গেছে বেশ কয়েক মাস ধরে। রায়পুর পৌর শহর থেকে ও সোলাখালী ব্রিজ এলাকাসহ প্রায় ১৬ কিলোমিটার জুড়ে এমনই চিত্র নদীটির। ফলে নদীর পানি ব্যবহার, মাছ ধরা ও নদীপথে চলাচল করতে পারছেন না এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষক, বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, নদীটি খনন করে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে দেওয়া ও দখল উচ্ছেদ করে প্রতিবন্ধকতা দূর করা। তাহলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নদীকেন্দ্রিক লাখো মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন তারা। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা দখলবাজদের কোনো তালিকা দিতে না পারলেও নদীটি খনন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জনকন্ঠকে জানান। তিনি বলেন, দখল উচ্ছেদের বিষয়ে সরকারি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দখল উচ্ছেদের কাজ শুরু হবে। রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পী রানী রায় জানান, নদী দখলমুক্ত করার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। নতুন করে কেউ দখল করতে চাইলে তা করতে দেওয়া হবে না।
×