ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমাদের আলোর পথে যাত্রা কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

  আমাদের আলোর পথে যাত্রা কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের যে বিশ্বাস আমরা অর্জন করেছি সেই বিশ্বাসের মর্যাদা আমাদের রাখতে হবে। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। ২০০৮ সালে আমরা যে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি, সেই যাত্রায় আমাদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না, বাধা দিয়ে রাখতে পারবে না। দেশের উন্নয়নের পথে আমরা এগিয়ে যাবই। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ভাষা আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতৃভাষায় কথা বলা আমাদের জন্মগত অধিকার। কেউ এই অধিকার কেড়ে নিতে পারে না। তাই তো যখনই এই অধিকারের ওপর আঘাত এসেছে তখনই বাঙালী প্রতিবাদ করেছে। কোন জাতিকে দুর্বল করতে হলে শত্রুপক্ষ প্রথমে তাদের ভাষা এবং সংস্কৃতির ওপরে আঘাত হানে। পাকিস্তানীরাও তাই করার চেষ্টা করেছিল। আমাদের ওপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের জন্য পূর্ব বাংলার মানুষের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। তখন পাকিস্তানের চেয়ে পূর্ব বাংলার জনসংখ্যা ছিল বেশি। অথচ দেশভাগের পর পরই পাকিস্তানের করাচিতে যখন সম্মেলন হয় তখন সে সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, উর্দু ভাষা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এ সিদ্ধান্তের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও গর্জে উঠেছিল। বাঙালীদের ওপর পাকিস্তানীদের দমন-পীড়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেই সময়ের মতো এখনও ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। বাংলাদেশের জনগণ ভাল থাকলে কিছু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। দেশে যদি কোন মার্শাল ল’ জারি হয়, অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতা দখল করে, তখন তারা খুব শান্তিতে থাকে। কারণ তারা ক্ষমতার বাতাস পায়। সে আশায় তারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতার শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন। উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই ভাষা আন্দোলন শুরু হয়, যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতায় তিনি নেতৃত্ব দেন। মাতৃভাষার জন্য রক্ত দেয়া জাতি বিশ্বের মধ্যে কেবল বাঙালীই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে এই বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের সব থেকে গৌরবের, ভাষার জন্য রক্ত দেয়া। সেই মাতৃভাষার ওপর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ একটি ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জাতিকে নিঃশেষ করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, এমনকি এ জাতির অস্তিত্বেই বিশ্বাস করত না। সেজন্য তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন কোন উন্নতি-অগ্রযাত্রা হয়নি এ দেশের। আর যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারল, তখনই দেশ ও জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন হয়েছে। সেজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই জনগণের প্রতি। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে যে অত্যাচার-হত্যাকা- চালিয়েছে, তা একাত্তর সালের হানাদারদের মতো। ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকানোর নামে তাদের সে তা-ব, জঙ্গীবাদী আচরণ, আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যান্ড সেই ভয়াবহ স্মৃতি সবার মনে আছে। তাদের জনগণ ভোট দেবে কেন? ২০১৩, ১৪-১৫, এ বছরগুলোতে প্রায় তিন হাজার ৮০০ থেকে ৯০০ মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। ৫০০’র মতো মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এখনও সেই অগ্নিদগ্ধ অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যারা মানুষ পুড়িয়েছে, তাদের জনগণ ভোট দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী বিএনপির কথা উল্লেখ করে আরও বলেন, তারা নির্বাচন কিভাবে করেছে, তিন শ’ সিটে তারা নমিনেশন দিয়েছে নয়শ’র কাছাকাছি অর্থাৎ একটি সিটের পেছনে দু’জন, তিনজন করে নমিনেশন দিয়েছে। যখন যাকে পেয়েছে তাকেই নমিনেশন দিয়েছে। আবার এই নমিনেশন তারা তো অকশনে দিয়েছিল। এর ফলে যে যত টাকা দিচ্ছে সে নমিনেশন পেয়েছে। যে টাকা দিতে পারছে না তার নমিনেশন ক্যানসেল হয়ে যাচ্ছে। অনেকগুলো সিট আমরা জানি যাদের দিলে তারা জিতত তারা নমিনেশন পায়নি। যারা মনোনয়ন অকশনে দেয় তারা কিভাবে জয়ের আশা করে ? যারা নির্বাচনের মনোনয়ন নিলামে উঠিয়েছে, একটি দেশের হাইকমিশন থেকে মনোনয়ন নিতে হয়েছে যাদের, তাদের জনগণ ভোট দেয়নি। সব থেকে বড় কথা হলো, তারা যুদ্ধাপরাধীদের মনোনয়ন দিয়েছে। এ দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের ভোট দেবে না, দেয়নি। যারা জীবন্ত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে, নির্বাচনের আগে মনোনয়ন দেয়ার নামে বাণিজ্য করে তারা জয়ের আশা করে কীভাবে? আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, কেউ কেউ তো আমার কাছে এসে বলেও গেছে লন্ডন থেকে ফোন এসেছে এত টাকা হলে নমিনেশন পাবেন। সে টাকা দিতে পারেনি মনোনয়ন হয়নি। আর কাউকে নমিনেশন দিয়েছে বিদেশে বসে। সে দেশে নাই, বিদেশে বসে নমিনেশন পেয়ে এ্যাম্বাসিতে গেছে নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে। এ্যাম্বাসেডর নমিনেশন পেপার গ্রহণ করবে কিভাবে? যখন এ্যাম্বাসি মনোনয়নপত্র নেয়নি বলেছে, ‘লন্ডনে এত টাকা দিলাম, বললেন এ্যাম্বাসিতে দিলেই হবে। এখন কেন দিতে পারছি না? ‘যারা নির্বাচন নিয়ে এ ধরনের ব্যবসা করেছে, বাণিজ্য করেছে তারা জেতার স্বপ্ন দেখে কিভাবে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দারিদ্র্য ও ক্ষুধা মুক্ত স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিটি গ্রামের মানুষ যেন উন্নত জীবন পায় সেভাবে আমরা দেশকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। দেশের মানুষের সহযোগিতা পেলে ২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। ’৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের মধ্যে উন্নত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা উপহার দিব। এজন্য ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ আমরা প্রণয়ন করেছি এবং এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করেছি। মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ধুমধাম করে পালন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। টানা তিনবারের মতো আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়ায় জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এ দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তর করব। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কালের কণ্ঠের সম্পাদক এমদাদুল হক মিলন, আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান, মহানগর নেতা একেএম রহমতুুল্লাহ, সাদেক খান ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপিকা মেরিনা জাহান কবিতা।
×