ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে কেমিক্যালের গুদাম সরাতে একাট্টা চকবাজারবাসী

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 অবশেষে কেমিক্যালের গুদাম সরাতে একাট্টা  চকবাজারবাসী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার পর ফুঁসে উঠেছে এলাকার সর্বস্তরের জনগণ। বাড়ির মালিক থেকে শুরু করে ভাড়াটিয়া, ব্যবসায়ী, দোকানি সবাই একাট্টা। তারা যে করেই হউক এলাকা থেকে কেমিক্যালের গুদাম সরাতে মরিয়া। যে বাড়িতে কেমিক্যালের গুদাম থাকবে, সেই বাড়িতে কেউ ভাড়ায় থাকবে না। তার সঙ্গে প্রয়োজনে সামাজিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে বলেও এলাকাবাসী ঘোষণা দিয়েছে। এমন দাবিতে শুক্রবার এলাকাবাসী চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনে ব্যাপক শোরগোলও করেছে। গত বুধবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে চকবাজারে ৬৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ও ৪১ জনের জীবন্ত দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে। একটি মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হওয়ার পর তা পর্যায়ক্রমে ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলায় থাকা কেমিক্যালের বড় গুদামে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি আশপাশের ভবনে থাকা প্লাস্টিকের দানার গুদামেও ছড়িয়ে যায়। এতে করে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। চোখের সামনে ছটফট করতে করতে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ৬৭টি তাজা প্রাণের। এই দৃশ্য এলাকাবাসী চোখের সামনেই ঘটেছে। তাদের মৃত্যু যেন এলাকাবাসীর মনে রীতিমতো অপরাধবোধ জাগিয়ে তুলেছে। আগুনে ছয়টি বাড়ি পুড়ে গেছে। বাড়িগুলো ইতোমধ্যেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে আগুনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির তরফ থেকে। ঘটনার পর থেকেই সারাদেশের মানুষের মধ্যে একটিই আলোচনা। বিশেষ করে চকবাজারসহ আশপাশের এলাকায় প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে আলোচনা একটিই। তা হচ্ছে, চকবাজারের ঘটনা। শুক্রবার পবিত্র জুমার নামাজের পর হতাহতদের উদ্দেশ্যে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয় দেশের প্রতিটি মসজিদে। চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের সামনেই ঘটে যায় সেই মর্মান্তিক ঘটনাটি। মসজিদের ইমাম বিশেষ দোয়া করেন। দোয়ার সময় উঠে আসে নিহতদের আর্তনাদের কথা। এ সময় মসজিদের মুসল্লিদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। তারা শোকের কাতর হয়ে পড়েন। তাদের সবার চোখ দিয়েই অঝোরে কান্না ঝরে পড়ছিল। অনেকেই মসজিদের ভেতরেই মর্মান্তিক সেই মৃত্যুর বর্ণনা দিচ্ছিলেন। নামাজ শেষে মুসল্লিদের মধ্যে নতুন করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এ সময় ২৫/৩০ মুসল্লিকে এসব বিষয় নিয়ে উত্তেজিত হতে দেখা যায়। তাদের সঙ্গে যোগদেন স্থানীয়রা। উত্তেজিত জনতা ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে উচ্চস্বরে চেঁচামেচি করতে থাকেন। তারা ওয়াহেদ ম্যানশনের বাড়ির মালিককে দোষারোপ করতে থাকেন। এলাকাবাসীর দাবি, বাড়িটিতে কেমিক্যালের গুদাম না থাকলে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটত না। এমন ঘটনার জন্য বাড়ির মালিকই দায়ী। এরপরই এলাকাবাসীর মধ্যে বাড়তি উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে গিয়ে গালিগালাজ করতে থাকেন। তারা বলেন, প্রায় সব বাড়ির মালিকেরই কেমিক্যালের আগুনের ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা আছে। এজন্য অনেক বাড়ির মালিক কেমিক্যালের গুদাম হিসেবে বাড়ি ভাড়া দেন। আর নিজেরা অন্য জায়গায় থাকেন। তবে বেশিরভাগ বাড়িওয়ালাই বাড়ির নিচতলা কেমিক্যালের গুদাম হিসেবে ভাড়া দেন। আর থাকেন ওপরের দিকে। আগুন লাগলে বা কোন ঝামেলা হলে তারা অন্য সিঁড়ি দিয়ে নিরাপদে নেমে যায়। আর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সাধারণ ভাড়াটিয়া। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। প্রয়োজনে বাড়ির মালিকরা মিলে কেমিক্যালের গুদাম সরানোর জন্য কমিটি গঠন করবেন। কমিটির সদস্যরা যেসব বাড়িতে কেমিক্যালের গুদাম থাকবে, তাদের প্রথমে সতর্ক করবে। তা না মানলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে তাদের ধরিয়ে দিবে। প্রয়োজনে তারা যদি কথা না শোনে, তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা হবে। ইতোমধ্যেই অনেক বাড়ির মালিক ভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। আবার অনেকে কেমিক্যালের গুদামের মালিককে গুদাম থেকে কেমিক্যাল সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন। রহমতগঞ্জ, চকবাজার, নন্দ কুমার রোড, চুড়িহাট্টাসহ আশপাশের সব এলাকায় এমন এলাকাবাসীর তরফ থেকে এমন অভিযান চালানো হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে এসব বিষয় নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এলাকার যুবকদের নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় কেমিক্যালের গুদাম সরানোর বিষয়ে কমিটি গঠন করা হবে। পানি, বিদ্যুত ও গ্যাস না থাকায় এলাকায় ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। যার জন্য দায়ী কেমিক্যালের গুদামের মালিক ও যেসব বাড়িতে কেমিক্যালের গুদাম রয়েছে, সেইসব বাড়িওয়ালারা। তাই মৃত্যু সামনে নিয়ে আর এলাকাবাসী বসবাস করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অনেক বাড়িওয়ালা এলাকাবাসীর এমন তৎপরতার কারণে গুদাম ভাড়া দেয়ার নোটিস ছিঁড়ে ফেলেছেন। অনেক বাড়ির মালিক এলাকাবাসীর কাছে ওয়াদা করেছেন, তিনি বাড়িতে কেমিক্যালের গুদাম ভাড়া দিবেন না বলে।
×