ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে এ বার শুরু হল ধরপাকড়

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে এ বার শুরু হল ধরপাকড়

অনলাইন ডেস্ক ॥ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়েছিল আগেই। এ বার শুরু হল ধরপাকড়।কাশ্মীরে সরাসরি বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে নামল কেন্দ্রীয় সরকার। শুক্রবার রাতে অতিরিক্ত বাহিনী নামানো হয় সেখানে। গ্রেফতার করা হয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ) নেতা ইয়াসিন মালিককে। বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে জামাত-ই-ইসলামি সংগঠনের আরও অনেক নেতাকে। দক্ষিণ এবং মধ্য কাশ্মীরের আরও অনেক এলাকায় তল্লাশি অভিযান চলছে। আগামী কয়েকদিন ধরে তল্লাশি অভিযান চলবে বলে রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তার পরেই অতিরিক্ত ১০০ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী পাঠানো হয় কাশ্মীরে। আধাসামরিক বাহিনীর এক একটি কোম্পানিতে সাধারণত ৮০-১৫০ জন সেনাকর্মী থাকেন। সেই হিসাবে গতকাল রাতে কাশ্মীরে প্রায় ১০ হাজার সৈনিক উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে খবর। যার মধ্যে রয়েছে, সিআরপিএফ-এর ৪৫টি কোম্পানি, সীমান্তরক্ষীর ৩৫ এবং সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি) ও ইন্দো-তিব্বত সীমা পুলিশের (আইটিবিপি) ১০টি করে কোম্পানি। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের তরফে এই অভিযানকে রুটিন তল্লাশি বলে চালানোর চেষ্টা করা হলেও, বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন তেহরিক-ই-হুরিয়ত এবং তার শাখা সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে এত বড় অভিযান এই প্রথম। শুক্রবার রাতেশ্রীনগরে মইসুমার বাড়ি থেকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয় ইয়াসিন মালিককে। তার পর হানা দেওয়া হয় সামাজিক তথা রাজনৈতিক সংগঠন জামাত-ই-ইসলামির বাকি নেতাদের বাড়ি ও ডেরায়। এই মুহূর্তে জামাতের নেতৃত্বে রয়েছেন আব্দুল হামিদ ফায়াজ। পেশায় আইনজীবী জাহিদ আলি সংগঠনের মুখপাত্র। গভীর রাতে বাড়ি থেকে আটক করা হয় তাঁদের। আটক করা হয়েছে সংগঠনের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক গোলাম কাদির লোনকেও। এছাড়াও রাজ্য পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন জেলা ইসলামাবাদের জামাত নেতা আব্দুর রউফ, পহেলগাঁও তেহসিলের নেতা মুদাসির আহমেদ, দিলগাঁওয়ের বখতওয়ার আহমেদ, ত্রালের মহম্মদ হায়াত, চাদুরার বিলাল আহমেদ, চক সাংরানের মহম্মদ দার-সহ আরও অনেকে। অনন্তনাগ, পহেলগাওঁ, দিলগাঁও, ত্রাল-সহ দক্ষিণ কাশ্মীরের নানা জায়গায় হানা দিয়ে তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গত সপ্তাহে দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে হামলা চালায় পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ। উপত্যকার বাসিন্দা ২০ বছরের আদিল আহমেদ দারের মাধ্যমে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। তাতে ৪৯ জন জওয়ান প্রাণ হারান। সেই ঘটনার পর জম্মু-কাশ্মীরের নিরাপত্তা আঁটোসাটো করা হয়। কাশ্মীর উপত্যকার একাধিক জায়গায় মোতায়েন করা হয় নিরাপত্তা বাহিনীকে। শুরু হয় জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযানও। যার জেরে চলতি সপ্তাহের শুরুতেই সেনার সঙ্গে সঙ্ঘর্ষে মৃত্যু হয় পুলওয়ামার ষড়যন্ত্রকারী তিন জঙ্গির। কিন্তু গভীর রাতে বাড়ি বাড়ি নিরাপত্তা বাহিনীর হানার তীব্র সমালোচনা করেছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, ৩৫-এ ধারা নিয়ে এখনও পর্যন্ত রায় শোনায়নি সুপ্রিম কোর্ট। তার আগে উপত্যকায় গণ গ্রেফতারি শুরু করে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। নিশ্চয়ই এর পিছনে অন্য অভিসন্ধি রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। যাতে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের অনুপস্থিতিতে ওই ধারাটিকে ইচ্ছামতো বিকৃত করতে পারে। ১৯৫৪ সালে তত্কালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদের নির্দেশে জম্মু-কাশ্মীরের জন্য সংবিধানের ৩৭০ ধারায় ৩৫-এ অনুচ্ছেদটি যোগ করা হয়। যার আওতায়, কারা জম্মু-কাশ্মীরের স্থায়ী নাগরিক হিসাবে বিবেচিত হবেন, তার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় রাজ্য বিধানসভার হাতেই। দেশের অন্য কোনও রাজ্যের বাসিন্দাদের সেখানে সম্পত্তি কেনাবেচা ও স্থায়ীভাবে বসবাস নিষিদ্ধ হয়। এই ৩৫-এ অনুচ্ছেদ নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। সেটি বাতিল করতে ২০১৪ সালে শীর্ষ আদালতে পাঁচটি আবেদন জমা পড়ে। চলতি সপ্তাহের বুধবার সেই নিয়ে রায় শোনানোর কথা ছিল সুপ্রিম কোর্টের। তবে বিশেষ কারণে বাতিল হয়ে যায় সেটি। আগামী সোমবার পরবর্তী শুনানি স্থির হয়েছে। তার আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে কাশ্মীরে সেনা অভিযান শুরু হল। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×