ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ বোরিং ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম

মোয়াজ্জেমুল হক/ হাসান নাসির ॥ এ যেন বাস্তবিক অর্থেই স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। আওয়ামী লীগ সরকার অতীতে এবং বর্তমানে এ চট্টগ্রামকে ঘিরে একের পর এক বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে মেগা প্রকল্প। বিপরীতে ব্যয় হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আজ রবিবার শুরু হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ প্রকল্পের বোরিং কার্যক্রম ও লালখান বাজার থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা সাড়ে ১১টায় এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। মেগা এই দুই প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতেঙ্গা এলাকার টানেল প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে প্রকল্পের খনন কাজের পাশাপাশি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন। এরপর তিনি সাগর পাড়ের আউটার রিং রোড এলাকায় একটি সুধী সমাবেশেও বক্তব্য রাখবেন। চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই তার চট্টগ্রামে প্রথম আগমন। এ উপলক্ষে প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সুধী সমাবেশে সীমিতসংখ্যক আমন্ত্রণপত্র দেয়া হলেও আগ্রহী মানুষের ব্যাপক সমাগম ঘটবে বলে আশা করছে প্রশাসন ও সরকার সমর্থিত রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ। চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর তলদেশে হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সুড়ঙ্গ পথ। এর মাধ্যমে নদীর দুপাড়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হবে, যা চট্টগ্রামকে উন্নীত করবে ওয়ান সিটি টু টাউনে। টানেল নির্মিত হলে দক্ষিণ পাড়েও গড়ে উঠবে শহর ও শিল্পাঞ্চল। স্বপ্নের এ প্রকল্প বাস্তবে রূপ লাভ করবে তিনবছরের মধ্যেই। টানেলের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হবে দীর্ঘ এক মেরিন ড্রাইভ, যা এক পর্যায়ে পরিণত হবে মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দীর্ঘ এক মেলবন্ধনে। কর্ণফুলী টানেলের নামকরণ হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল।’ এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। প্রকল্পের ৩২ শতাংশ কাজ এরমধ্যেই শেষ হয়েছে। তবে মূল বোরিং কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে আজ রবিবার। চীন থেকে আগেই এসে গেছে প্রয়োজনীয় ভারি যন্ত্রপাতি। এই টানেল ধরেই অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের যোগাযোগ সম্প্রসারিত হবে মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত। পতেঙ্গার নেভাল এলাকা থেকে এ সুড়ঙ্গপথ শুরু হয়ে তা কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে বের হবে আনোয়ারায় অবস্থিত কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) ও চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) মাঝামাঝি স্থান দিয়ে। ১১ মিটার দূরত্বে নির্মিত হবে দুটি টিউব। চারলেন বিশিষ্ট মূল টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার। একটি টিউব দিয়ে শহর থেকে যানবাহন যাবে নদীর ওপারে, আরেকটি টিউবে প্রবেশ করবে চট্টগ্রাম শহরে। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, টানেলের টিউব স্থাপিত হবে নদীর তলদেশ হতে ১৮ থেকে ৩১ কিলোমিটার গভীরে। চার লেনের এই টানেলে চলাচল করতে পারবে ভারি যানবাহনও। কর্ণফুলীর তীর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর দীর্ঘ এলাকা সাজবে দৃষ্টিনন্দন সাজে। প্রাচ্যের রানী চট্টগ্রাম ফিরে পাবে তার নান্দনিক চেহারা। কর্ণফুলী টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে থাকবে মোট ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার এপ্রোচ সড়ক। একই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এই টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে বলে আশা করছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, এপ্রোচসহ এর দৈর্ঘ্য হবে ৯ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার। জি টু জি (সরকার টু সরকার) ভিত্তিতে মূল টানেলের সমুদয় অর্থ যোগান দিচ্ছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত এক্সিম ব্যাংক। সার্বক্ষণিক বিদ্যুত সুবিধার জন্য থাকবে ১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পাওয়ার স্টেশন। চীন থেকে আমদানি করা সকল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের শুল্ককর প্রদান করবে বাংলাদেশ সরকার। কর্ণফুলী টানেলের মূল খনন কাজ শুরু করার সকল প্রস্তুতি চূড়ান্ত। মাটি খুঁড়ে টিউব প্রবেশে চীন থেকে এসে গেছে ৯৪ মিটার দৈর্ঘ্যরে ও ২২ হাজার টন ওজনের বোরিং মেশিন। দুটি টিউবের মধ্যে প্রতিটি টিউব চওড়ায় হবে প্রায় ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা হবে প্রায় ১৬ ফুট। প্রতিটি টিউবে দুটি স্কেল থাকবে, যানবাহন চলাচল করবে দুই লাইনে। পাশে থাকবে একটি সার্ভিস টিউব। টিউব দুটির মাঝখানে দূরত্ব থাকবে ১১ মিটার। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রবিবার একইসঙ্গে উদ্বোধন করবেন ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত হবে এই উড়াল সড়ক। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ককে যানজট থেকে মুক্তি দিতেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এই মহাপ্রকল্প। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। এরমধ্যেই নগরীর মুরাদপুর থেকে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার নির্মাণের যে কাজটি লালখান বাজারে এসে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই শুরু হবে বিমানবন্দর অভিমুখী এই উড়াল সড়ক। এর মাধ্যমে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর ও দ্রুততর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের মধ্যে এ কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও কিছুটা সময় বেশি লাগতে পারে, এমনই ধারণা দেয়া হয়েছে চউক সূত্রে। চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা তিনি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করছেন। তিনি জানান, সয়েল টেস্ট, এলাইনমেন্টসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অনেক কাজ এরমধ্যেই এগিয়ে রাখা হয়েছে। উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যাবে বিরাট এ কর্মযজ্ঞ। প্রকল্পে আওতায় এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের প্রতিটি জংশনে অর্থাৎ টাইগারপাস, আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং, নিমতলা, চট্টগ্রাম কাস্টম, চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, কাটগড়, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত মোড়সহ বিভিন্ন জংশনে যানবাহন ওঠানামার জন্য ১৮টি র‌্যামের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এছাড়া টাইগারপাস, আগ্রাবাদ, কাস্টম, ইপিজেড এবং কাটগড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জংশনসমূহে বাস-বে নির্মাণেরও সুবিধা থাকছে। চউক চেয়ারম্যান আরও বলেন, এক সময়ের অবহেলিত চট্টগ্রাম এখন উন্নয়নের মহাযজ্ঞে রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার অতীতে এবং বর্তমানে এই চট্টগ্রামে হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে হাত দিয়েছে। যা চট্টগ্রামকে বদলে দেয়ার স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন। সুধী সমাবেশ ॥ প্রকল্প দুটি উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন। বেলা সাড়ে ১১টায় পতেঙ্গা রিং রোড এলাকায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রায় দেড় হাজার সুধীকে সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে আগ্রহী মানুষের বিপুল সমাবেশ ঘটবে বলে আশা করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে নৌকার আদলে বিশাল মঞ্চ। ব্যাপকসংখ্যক মানুষ যেন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শ্রবণ করতে পারেন সে জন্য এলাকাজুড়ে পর্যাপ্তসংখ্যক মাইক ও সাউন্ডবক্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রকল্প দুটি উদ্বোধন এবং সুধী সমাবেশে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন, বাস্তবায়নকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকবেন।
×