ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইসিইউ বাণিজ্য

প্রকাশিত: ১০:২২, ১৪ মার্চ ২০১৯

আইসিইউ বাণিজ্য

দেশের বৃহৎ হাসপাতাল তথা সরকারী স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এবার অভিযোগ উঠেছে আইসিইউ বাণিজ্যের। অর্থাৎ মুমূর্ষু রোগী, তা সে শিশু কিংবা বয়স্ক যেই হোক না কেন, হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ‘সিট নেই’ বলে বাইরের কোন বেসরকারী হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেয়ার হীন চেষ্টা। এর জন্য দালালেরও অভাব নেই হাসপাতালটিতে। দুঃখজনক হলো, দালালরা বাইরের কেউ নয়, বরং এই হাসপাতালেরই এক শ্রেণীর ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া অথবা কর্মকর্তা-কর্মচারী। এরাই প্রধানত তথাকথিত দালাল সেজে মরণাপন্ন ও বিপদাপন্ন রোগীকে জিম্মি করে রোগীর আত্মীয়স্বজনকে বাধ্য করে ঢামেকের বাইরে নিয়ে যেতে। উল্লেখ্য, ঢামেকের বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগ অতি পুরনো। ইতোপূর্বে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নিয়ে ঢামেকের বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ উঠেছে, পরে তদন্তে এর সত্যতা মিলেছে। এর বাইরেও ঢামেকে চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় প্রতিটি রোগীকে ঘিরে ডাক্তার দেখানো, মেডিক্যাল টেস্ট, ওষুধ-পথ্য, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই চলে চিকিৎসা বাণিজ্য। আর এর জন্য রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট, যারা পান থেকে চুন খসলেই যখন তখন হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় অচল করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এও সত্য যে, বৃহৎ এই হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার রোগী আসে চিকিৎসা নিতে। মরণাপন্ন ও মুমূর্ষু রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইসিইউ চিকিৎসা সেবা নেই। তাই বলে এ নিয়ে প্রতিদিন অমানবিক বাণিজ্য হবে কেন, যার সঙ্গে জড়িত থাকবে এই হাসপাতালের স্টাফরা? এটা মেনে নেয়া যায় না। তবু স্বীকার করতে হবে যে, দেশের সরকারী হাসপাতালগুলোতে অল্পবিস্তর চিকিৎসা সুবিধা মেলে। বর্তমান সরকারের আন্তরিক উদ্যোগে বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে জনবল পর্যাপ্ত না হোক, কমবেশি বাড়ানো হয়েছে। ওষুধপথ্যসহ চিকিৎসা উপকরণের সরবরাহও আশানুরূপ। এক্স-রেসহ রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ-সুবিধাও আছে। আছে ডাক্তার, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয় এমনকি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাদের বেতন-ভাতাও বেড়েছে অনেক। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এতকিছুর পরও সরকারী হাসপাতালের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ তথা রোগীদের অভিযোগের অন্ত নেই। অনুরূপ অভিজ্ঞতার প্রমাণ মেলে মিটফোর্ড, পঙ্গু, হৃদরোগ, সংক্রামকব্যাধি, ক্যান্সার, চক্ষু হাসপাতালসহ প্রায় সর্বত্র। দুঃখজনক হলো, একটি আদর্শ তথা মডেল হাসপাতাল তো দূরের কথা, মোটামুটি মানসম্মত চিকিৎসা মেলে এবং অনিয়ম-দুর্নীতিও অপেক্ষাকৃত কম, এমন একটি হাসপাতালও নেই বললেই চলে। সরকারী হাসপাতালের সব চিকিৎসক-নার্স-আয়া-ওয়ার্ডবয় খারাপ ও দুর্নীতিগ্রস্ত, এমন কথা বলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তবে অধিকাংশ খারাপ এবং অনিয়ম দুর্নীতির ভিড়ে ভালটুকু প্রায়ই হারিয়ে যায়। দীর্ঘদিন থেকে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে রোগীরা হয়ে পড়েন জিম্মি। মুষ্টিমেয় ভালরা হয়ে পড়েন কোণঠাসা। আধিপত্য বিস্তার করে অসৎরা। হাসপাতালের ওষুধপত্র পাচার হয়ে যায় বাইরে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে রোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় গুচ্ছের টাকা। রাজনৈতিক দলবাজির কারণে আরও শক্তিশালী ও অপ্রতিহত হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। প্রধানত অর্থ আত্মসাতসহ আন্তরিকতার অভাবেই ভাঙ্গা যাচ্ছে না সিন্ডিকেটের অনৈতিক প্রভাব ও আধিপত্য। রোগী ও স্বজনরা মিলে যদি একযোগে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং কঠোর হয় সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, তাহলে এর দৌরাত্ম্য কমলেও কমতে পারে।
×