ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিমানে উড্ডয়ন নিয়ে ভীতি কাটানো সম্ভব

প্রকাশিত: ০১:২৪, ১৪ মার্চ ২০১৯

বিমানে উড্ডয়ন নিয়ে ভীতি কাটানো সম্ভব

অনলাইন ডেস্ক ॥ বিমানে উঠতে গেলে কি ভয়ে আপনার হাতের তালু ঘামতে থাকে? বিমান টেক অফ করার সময় আপনি চেয়ারের হাতল শক্ত করে দু'হাতে আঁকড়ে ধরেন? ল্যান্ড করার আগে-আগে আপনার হৃৎকম্প বেড়ে যায়? তাহলে বোয়িং-এর জরিপ অনুযায়ী, আপনিও সেই ১৭ শতাংশ অ্যামেরিকানদের মতনই একজন যারা উড্ডয়নে ভয় পায়। সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফা বিমান দুর্ঘটনার পর উড্ডয়ন নিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক। এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্ক বা এএসএন-এর তথ্য অনুযায়ী, সারা পৃথিবীতে ৩৭ কোটি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। কিন্তু এর মধ্যে প্রতি ২৫ লাখ ২০ হাজার ফ্লাইটে একটি বিমান হয়তো দুর্ঘটনায় পড়ে। কিন্তু বিমান দুর্ঘটনা হলে যেহেতু সেটি বড় খবর হয় তাই এই নিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতির মাত্রা বাড়ে। তবে, উড্ডয়ন নিয়ে ভীতি কাটানো সম্ভব। বিভিন্ন পন্থায় ভয় কাটানো যেতে পারে। কয়েকজন সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শক্রমে ভয় কাটানোর কিছু তরিকা এখানে তুলে ধরা হলো। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম : এমন অনেকে রয়েছেন যারা উড্ডয়নে ভয় পান। হয়তো তারা আগে কখনোই বিমানে উঠেনি বা আগে তাদের কোনো নেতিবাচক অভিজ্ঞতা রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ ভার্মন্ট এর ক্লিনিকেল সাইকোলজিস্ট ম্যাথিউ প্রাইস বলছিলেন, "কেন একজন মানুষ এধরণের ভীতিতে আক্রান্ত হবেন এই নিয়ে একটা ব্যাখ্যাও নেই। তবে, এই নিয়ে বহু কারণ রয়েছে।" এটা হয়তো 'বিমান বিধ্বস্ত হওয়া সম্পর্কে জানা বা বিমানে উঠলে বদ্ধ একটা পরিবেশে বন্দী থাকার জন্যেও হতে পারে' বলে মনে করেন তিনি। কারণ যাইহোক, উড্ডয়ন নিয়ে ভীতি যেহেতু অনেকেরই রয়েছে তাই ভীতি কাটানোর উপায় হিসেব শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের কথা বলেছেন তিনি। থেরাপি : উড্ডয়নের সময় অনেকে কানে হেডফোন গুঁজে রাখেন, কেউ দুশ্চিন্তা প্রতিরোধী ওষুধ নেন আবার কেউ ধ্যানের মাধ্যমে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করেন। কেউ-কেউ অবশ্য অ্যালকোহলও পান করেন। কিন্তু ভীতির মাত্রা যদি এতই বেশি হয় যে, ভয়ে আপনি একেবারে জড়োসড়ো হয়ে পড়েছেন, বিমানে উড্ডয়নই করছেন না তাহলে আপনার জন্য কিছু থেরাপি রয়েছে। মানুষের উড্ডয়নের ভীতি দূর করবার জন্য হিপনোথেরাপি, সাইকোথেরাপি বা কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি ব্যাবহার করা হয়। ভীতির মুখোমুখি ভীতিকে জয় করার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা যে পরামর্শটি দেন সেটি হচ্ছে, যে বিষয়টিকে আপনি ভয় করেন সেই কাজটিই করার মাধ্যমে ভয় কাটানোর চেষ্টা করা। উড্ডয়নের ক্ষেত্রেও একই পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ভীতি কাটানোর জন্য নানান পদ্ধতির মধ্যে একটি হচ্ছে বিশেষ কোর্সে ভর্তি হওয়া। যেমন: 'ফ্লায়িং উইদাউট ফিয়ার' বা নির্ভয়ে উড্ডয়ন নামে একটি কোর্স রয়েছে ভার্জিন আটলান্টিকে। এই কোর্সে প্রশিক্ষিত পাইলট আপনার নানাবিধ প্রশ্নের উত্তর দেবেন, কেন আপনি ভয় পান বা কেন ভয় পাওয়া যৌক্তিক নয় সে বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তারা তুলে ধরবেন। এছাড়া যারা অযৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে থাকেন যে, 'এই বুঝি প্লেন ক্র্যাশ হতে চললো' - তাদেরকে এই প্রশিক্ষণের প্রথম সেশনে দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রনের কলা-কৌশল শেখানো হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআর এর মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কারণ বাস্তবের বিমানের মতই এখানে অনুভূতি হয় কিন্তু সত্যিকারের বিমানের চেয়ে এখানে খরচ কম। বিমান দুর্ঘটনাই কি সবচেয়ে ভয়াবহ? বিমান বিধ্বস্ত হলে তা একটি বিরাট খবরে পরিণত হয়। সর্বশেষ ইথিওপিয়ায় উড্ডয়নের ছয় মিনিট পরেই বিধ্বস্ত হয় বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ। এতে ১৫৭ জন আরোহীর সকলেই নিহত হন। তবে, নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা প্রায়শই বলেন যে, বিমান দুর্ঘটনার চেয়ে গাড়ি দুর্ঘটনা বা সড়ক দূর্ঘটনায় আমাদের মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া তথ্য মতে, ২০১৩ সালে সারা দুনিয়ায় ১০ লাখ ২৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। আর সার্বিকভাবে গাড়িতে ভ্রমণের ঝুঁকি বিমানের চেয়ে শতগুণ বেশি। এছাড়া বর্তমানে মানুষের ক্যান্সার ও হার্টের অসুখে মৃত্যুর আশঙ্কাও অনেক বেশি। ২০১৭ সাল ছিল বাণিজ্যিক এভিয়েশানের ইতিহাসে অত্যন্ত নিরাপদ বছর। সে বছর পৃথিবীতে কোথাও যাত্রীবাহী বিমান দূর্ঘটনায় পড়েনি। এভিয়েশান সেফটি নেটওয়ার্কের সিইও হ্যারো রেন্টার বলেছেন, আগের চেয়ে এভিয়েশানে নিরাপত্তা এখন অনেক বেড়েছে। ২০১৮ সালের বিমান দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি বলছিলেন, প্রতি ২৫ লাখ ফ্লাইটে হয়তো একটি করে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×