ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভুটানকে হারিয়ে শেষ চারে বাংলার বাঘিনীরা

প্রকাশিত: ১০:৫১, ১৫ মার্চ ২০১৯

ভুটানকে হারিয়ে শেষ চারে বাংলার বাঘিনীরা

রুমেল খান ॥ ‘লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’ ... এই প্রবাদটির সার্থকতা প্রমাণ করা বড়ই দুঃসাধ্য। তবে বৃহস্পতিবার ‘বৃহস্পতি তুঙ্গে’ ছিল দ্য বেঙ্গল টাইগ্রেস ফুটবল দলের দুই অধিনায়কের। একজন মূল অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, আরেকজন সহ-অধিনায়ক মিশরাত জাহান মৌসুমী। মৌসুমীর আনন্দ একটু বেশিই। কেননা আন্তর্জাতিক ফুটবলে এটাই তার ‘প্রথম’ গোল। আর ‘গোলমেশিন’ সাবিনার এটি জাতীয় দলের জার্সিতে ২৪তম গোল। এই দুই অধিনায়কের গোল-নৈপুণ্যেই সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের প্রথম গ্রুপ (‘এ’) ম্যাচে ভুটানকে ২-০ গোলে হারিয়ে দিল লাল-সবুজের বাংলাদেশ। নেপালের বিরাটনগরের শহীদ রঙ্গশালায় (নেপালী ভাষায় স্টেডিয়ামকে ‘রঙ্গশালা’ বলা হয়) বঙ্গকন্যারা মাতলো জয়ের উচ্ছ্বাসে। সেই সঙ্গে এক ম্যাচ হাতে রেখেই পৌঁছে গেল সেমিফাইনালে, পূরণ করলো প্রাথমিক লক্ষ্য। এই হারে আসর থেকে বিদায় নিল ভুটান। এর আগে তারা নেপালের কাছে ৩-০ গোলে হেরেছিল। ১ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। তাদের মতো সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট স্বাগতিক নেপালেরও, তারা আগেই সেমির টিকেট কনফার্ম করেছিল। তবে গোলগড়ে এগিয়ে থাকায় নেপাল আছে এক নম্বরে। আগামী শনিবার নেপালের বিরুদ্ধে গ্রুপসেরা হওয়ার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবে গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যারা। ‘দেশ থেকে আসার সময় আমরা সেমিফাইনাল লক্ষ্য স্থির করেছিলাম, সেটা পূরণের জন্য এই জয়টা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জিতেই আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছেছি। এ জন্য আমরা খুশি। প্রত্যেকে নিজেদের সর্বোচ্চটা দেয়ায় এবং কঠোর পরিশ্রম করে জেতায় আমি খুশি।’ কথাগুলো সহ-অধিনায়ক মিশরাত জাহান মৌসুমীর। তিনি আরও যোগ করেন, ‘প্রতিপক্ষ দল সবসময় কঠিনই হয়। ভুটানকেও আমরা সহজভাবে নেইনি। তারা তাদের পারফর্মেন্স দেখিয়েছে। আমরাও হাল ছেড়ে দেইনি, আক্রমণাত্মক খেলা চালিয়ে গিয়েছি। শেষ মিনিট পর্যন্ত আমরা সেটা করতে পেরেছি বলেই জয়লাভ করেছি।’ জাতীয় দলের হয়ে প্রথম গোল করা প্রসঙ্গে মৌসুমীর ভাষ্য, ‘দলের জন্য প্রথম গোল করতে পেরে খুব ভাল লাগছে। দলের জন্য ওই গোলটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গোলটা অন্য কারুর মাধ্যমেও হতে পারতো। আমাকে দিয়েই সেটা হয়েছে বলে আমি খুশি।’ ভুটানকে চার গোলে হারালে পরের ম্যাচে নেপালের সঙ্গে ড্র করলেই গ্রুপসেরা হয়ে সেমিতে ভারতকে এড়াতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু বৃহস্পতিবার গোলসংখ্যা কম হওয়াতে সেটা বাংলাদেশের জন্য অনেক কঠিন হয়ে গেল। কারণ এর আগে সাফে কখনই নেপালের বিরুদ্ধে জেতেনি বাংলাদেশ (২ ম্যাচের প্রতিটিতেই হার)। এ নিয়ে মৌসুমীর মন্তব্য, ‘ভুটানের সঙ্গে কম গোল করেছি বলে এ নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই। নেপাল এই গ্রুপের সেরা দল। ওরা ওদের সেরাটা দিয়েই প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ৩ গোলে হারিয়েছে। আমরাও সুযোগ তৈরি করেছিলাম, কিন্তু গোলগুলো হয়নি এই যা। এখন নেপালের সঙ্গে আমাদের ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ।’ জয়ের পর কেমন ছিল বাংলার বাঘিনীদের দ্রোণাচার্য গোলাম রব্বানী ছোটনের প্রতিক্রিয়া? ‘আমাদের আজকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল। জয়লাভ করার দরকার ছিল এবং আমরা জিতেছি। সেমিতে উঠেছি। মেয়েরা ৯০ মিনিটই চেষ্টা করেছে তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে খেলার জন্য। আমি মনে করি পুরো ম্যাচেই তারা আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে। ভুটান মোটামুটি ডিফেন্ডিংয়ের মধ্যে ছিল। বল পজিশন পুরোপরি আমাদের ছিল। মেয়েদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ ছোটন আরও বলেন, ‘প্রথম ম্যাচ ... অবশ্যই কঠিন ছিল। আসলে দক্ষিণ এশিয়ায় এখন সবাই ফুটবল চর্চা করে। সবাই উন্নতি করছে। গ্রুপে দল মাত্র তিনটা দল। এ জন্য সেমিতে যাওয়া আরও কঠিন। তবে আমাদের প্রস্তুতি ছিল। মেয়েদের প্রতি যে নির্দেশনা দেয়া ছিলÑ প্রথম মিনিট থেকেই তারা তা বাস্তবায়ন করেছে। যেমন বল পজেশন, সেট-পিস। তবে গোল আরও হওয়া উচিত ছিল। কেননা মেয়েরা অনেক সুযোগ তৈরি করেছিল।’ আবহাওয়া ছিল প্রচ- গরম (৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস)। তাছাড়া চোট পাওয়ায় দলের নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার কৃষ্ণারানী সরকার এই ম্যাচে খেলতে পারেননি। এ নিয়ে ছোটনের অভিমত, ‘কৃষ্ণা অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। ম্যাচে কৃষ্ণা থাকলে আরও ভাল হতো। আশাকরি পরের ম্যাচে ওকে আমরা পাব।’ নেপাল ও বাংলাদেশের কাছে টানা দুই ম্যাচেই হেরে ও শূন্য পয়েন্ট নিয়ে এই আসর থেকে বিদায়ঘণ্টা বেজে গেল ‘ড্রাগনগার্লস’ খ্যাত ভুটান দলের। এ নিয়ে টানা পাঁচটি সাফেই দলটি গ্রুপপর্বের গ-ি পেরোতে পারলো না। বয়সভিত্তিক আসরে ভুটানের বিরুদ্ধে শতভাগ জয়ের ধারা বজায় রাখলো বাংলাদেশ। এছাড়া কোন গোল হজম না করার কৃতিত্বও ধরে রেখেছে তারা। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ১২৫। সেক্ষেত্রে ভুটানের কোন র‌্যাঙ্কিং নেই। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ দল মোট আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে ২৯টি। এর মধ্যে তারা জিতেছে ১২টিতে। ড্র করেছে ১টিতে। আর হেরেছে ১৬টিতে। ৪৬ গোল করার বিপরীতে গোল হজম করেছে ৬৩টি। বাংলাদেশের ১২ জয়ের ৩টি এবং ৪৬ গোলের ১২টি হচ্ছে ভুটানের বিরুদ্ধে। প্রতিটি জয়ই এসেছে এই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেই। ২০১০ সাফে বাংলাদেশ গ্রুপপর্বে ভুটানকে ৯-০ গোলে এবং ২০১২ সাফে গ্রুপপর্বে ১-০ গোলে হারায়। ২০১৪ ও ২০১৬ সালে ভুটানের মুখোমুখি হয়নি। ফলে ভুটানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সাত বছর পর আবারও জয় কুড়িয়ে নিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দল ॥ রূপনা চাকমা, মাসুরা পারভীন, শিউলি আজিম, আঁখি খাতুন, সানজিদা আক্তার (তহুরা খাতুন), মারিয়া মান্দা, মিশরাত জাহান মৌসুমী (সহ-অধিনায়ক), মনিকা চাকমা, ইশরাত জাহান স্বপ্না, শামসুন্নাহার সিনিয়র এবং সাবিনা খাতুন (অধিনায়ক)।
×