ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাকিদ হায়দার

আত্মজৈবনিক ॥ কি যেন হারিয়ে এলাম

প্রকাশিত: ১২:১৬, ১৫ মার্চ ২০১৯

আত্মজৈবনিক ॥ কি যেন হারিয়ে এলাম

পূর্ব প্রকাশের পর হারুর নির্দেশ মতো ক্লাসে ঢুকতেই দেখি, আমার আর শেখ আব্দুল হাদীর বইগুলো, কে বা কারা পেছনের বেঞ্চে রেখে দিয়েছে অথচ ফাস্ট বেঞ্চ একেবারে ফাঁকাও, কারও বই খাতা কিছুই নেই, এমনকি ক্লাস রুমে সহপাঠী কাউকে না দেখে যখন ফিরে আসছিলাম শাজাহানের চিনেবাদামের দোকানের দিকে, তখন দেখি পাথর তলার নিমাই সাহা আমাকে দেখে মিষ্টি করে হাসছে। ওর কাছাকাছি যেতেই নিমাই বললো দোগাছির প্রশান্ত সাহা আর কেষ্টপুরের আব্দুর রউফ ঐ দু’জন মিলে তোর আর হাদির বই খাতা পেছনের বেঞ্চে রেলে ওরা দু’জন লুকিয়ে আছে আশপাশে। তুই আর হাদী যদি লাস্ট বেঞ্চে হেঁটে গিয়ে ফাস্ট বেঞ্চে বইপত্র রাখিস, তাহলে আমাদের ক্লাসের গুন্ডা, কেস্টপুরের আব্দুর রউফ তোর সঙ্গে মারামারি করবে, তুই নাকি দিন কয়েক আগে প্রশান্ত সাহার বই খাতাপত্র, ফার্স্ট বেঞ্চ থেকে সরিয়ে পেছনের বেঞ্চ রেখে, হাদীর বইপত্র রেখে দিয়েছিলি ফার্স্ট বেঞ্চে। প্রশান্ত নাকি প্রতিবাদ করায় তুই মোদের ফজলি আম বাগানের সামনে প্রশান্ত সাহাকে বাঁশ দিয়ে মাথায় মারতে গিয়েছিলি, প্রশান্তর ভাগ্য ভালো বাঁশের আঘাত ওর মাথায় লাগেনি। আজ তারই প্রতিশোধ নেয়াবো ঐ শালা রউফকে দিয়ে। রউফকে, প্রশান্ত ৪ আনা পয়সা দিয়ে ভাড়া করেছে তোকে পেটানোর জন্যে। পেটানোর সূত্রপাতই হবে ঐ বইখাতাগুলো পেছনের বেঞ্চে রেখে দিয়েছে, প্রতিবাদ করলেই, রউফ তোকে আর হাদীকে পেটাবে। রউফের বিশেষ বন্ধু, আটুয়ার কামালকে রউফ ভাড়া করেছে ২ আনা নগদ দিয়ে এবং চিনেবাদম ও লোকোনদানা প্রশান্ত নিজেই কিনে দিলো, কামাল আর রউফকে তোকে যেন ঠিকমতো পেটায়। আমার সহপাঠী পাথর তলার নিমাই যা বললো, সবই সত্যি কথা, দিন কয়েক আগে, আমি আর আমার উস্তাদ মোতালেব হোসেন ফনি ভাই, আমাদের ফজলি আম বাগানের সামনে ঐ প্রশান্ত সাহার মাথায় বাঁশের আঘাত করতে গিয়েছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে প্রশান্ত সেদিন বেঁচে গেলেও আজকে রউফ আর কামালের হাত থেকে রক্ষা পাবার তেমন কোন লক্ষণই দেখছি না। হাদীও কাছে কিনারে কোথাও নেই। হাদী এসেই স্কুলে থেকে পালিয়ে গিয়ে পাবনা জজকোর্টের সামনে গিয়ে গফুর সাপুড়ের সাপের খেলা দেখে। স্কুলের সময় শেষ করে না করেই আজ ১৫-২০ জন এক সঙ্গে না গিয়ে, আমি একাই চলে যাবো। ফনি ভাই থাকলে, কোন বিপদই হতো না, ফনি ভাইকে আমি কেন অনেকেই ওস্তাদ মানতেন, কেননা ফনি ভাই একই ক্লাসে দুই তিন বছর থাকলেও তাতে তার কোন বিচার ছিল না বরং তাকে খুশিই মনে হতো, তিনি যেদিন বেশি খুশী থাকতেন, সেদিন তিনি নিজের পয়সায় লোকোনদানা, চিনেবাদাম চুরমুর খাস্তাতো খাওয়াতেনই, সেই সঙ্গে তিনি দুইটি সিজার সিগারেট কিনতেন একটি আমার জন্য, আরেকটি তার জন্য।’ তিনিই আমাকে সিগারেট খাওয়া শিখিয়েছিলেন বলেই, এখনো এই বয়সে এসে তাকে আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গেই ওস্তাদ বলে সম্বোধন করেই জানিয়ে দেই, সেই ফেলে আসা স্কুল জীবনের স্মৃতিময়, সুখময় পেছনের দিনগুলোর কথা, ষাটোর্ধŸ ফনি ভাই, হাসতে হাসতে বলেন, তখনকার দিনের ক্যাপিস্টেন একটা সিগারেট খেলে পাড়ার সকলেই জানতো ক্যাপিস্টান সিগারেট খাচ্ছে কেউ না কেউ, দাম ছিলো এক প্যাকেটের মাত্র দশ আনা সেই ফনি ভাই আমার ওস্তাদ যদি স্কুলে থাকতো তাহলে ভয়ের আর কোন কারণ ছিল না। নিমাই আমাকে সাহস দিয়ে বললো, ঐ যে হারু আর শামসুল আসছে, তোরা ৩ জন এক সঙ্গেই থাকিস, কোথাও যাসনে। যাসনে বলেই প্রায়ই এক দৌড়ে আমাদের ক্লাসে গিয়ে পেছনের বেঞ্চ থেকে আমার বই পত্র খাতাপত্র এনে দিয়ে হারুকে বললো, মাকিদকে আজ পেটাতে, রউফ আর কামাল, প্রশান্ত সাহা ঐ দুইজনকে নগদ ৪ আনা পয়সা দিয়েছে ওকে পেটানোর জন্য কেন পেটাবে কালকে বলবো। হারুদাস খুব গম্ভীর হয়ে বললো, অতো সহজ নয়, সহজ নয় বলেই আমার দিকে তাকিয়ে বললো শামু ভর্তি হয়ে গেছে আর তোকে রউফ মারবে না আমি বলে দিচ্ছি রউফকে। শুকনো চোয়াল ভাঙ্গা রউফ, আর আমার সহপাঠী, আমার নানার বাড়ির দক্ষিণ দিকের একতলা বাড়ির যিশু ভাইয়ের ছোট ভাই কামাল, আমাকে মারবে শুনেই, আমার আরেক সহপাঠী কেস্টপুরে আমার নানার বাড়ির পশ্চিম দিকের বাড়ির ছেলে আলকাতরা* নজরুল। নজরুলের পালক বাবা, পাবনা কালেক্টরেটের আকমল খন্দকার সম্পর্কে আমার মায়ের মামা, সেই সম্পর্কে নজরুলের পালক বাবা আমার নানা। আর সেই নানার পালক ছেলে আলকাতরা নজরুল যখন শুনলো, যে তাদেরই পাড়ার রউফ আর কামাল আমাকে মারবে প্রশান্ত সাহার পক্ষ নিয়ে, তখনই নজরুল হারুকে আর নিমাইকে শুনিয়ে বললো। শালা কামাল আর আমি গত বুধবারে মাকিদদের দোহাপাড়ার বাড়িতে দুপুরে গিয়ে, ওর আব্বা হাকিম উদ্দিন দুলাভাইয়ের সঙ্গে, ওদেরই রান্না ঘরে ভাত খেয়ে এলাম। আর সেই শালা কামাল আজকে মাকিদের গায়ে হাত তুলতে চায়, শালা তুলে দেখুক না, শালার কতো বড় সাহস হয়েছে আজ দেখে নেবো। উত্তেজিত আলকাতরা নজরুলকে হারু থামিয়ে দিয়ে বললো, চিন্তার কোন কারণ নেই, রউফকে বলে দেবো তারপরেও যদি মারামারি করে তাহলে, ওর চাচা বাণী সিনেমা হলের লাইনম্যান, যার ডানহাতটা বোমা বানাতে গিয়ে নাকি উড়ে গিয়েছিলো। সেই চুনু চাচাকে বলে দেবো রউফের মারামারির কথা, আর বাবাকে বলে দেবো, টর্চ লাইটের এভারেডি ব্যাটারি না দিতে, চুনু চাচা, মেয়েদের মুখের দিকে টর্চ মারে, আর মাঝে মাঝে রউফ আর তার চাচা দু’জনে মিলেই, টিকিট ব্ল্যাক করে বাবু চাচাকেও বলে দেবো। এই সব কথা রউফকে আমি বলে দেবো, অতএব তোর ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই, ঐ যে শামু আসছে শামুও ওর আব্বাকে বলে দেবো, চুনু আর রউফের টিকিট ব্ল্যাকের কথা। হারুদাস কথা শেষ না করেই দৌড়ে চলে গেলো স্কুলের পশ্চিম দিকের আম গাছ আর বাথরুমের দিকে, বেশ কিছুক্ষণ পরে সেই এক গতির দৌড়ে ফিরে এসে জানলো, ঐ শালা রউফ আর কামাল দু’জনকে পেয়ে গেলাম। আম গাছের ডালে বসে দু’জনাই সিগারেট খাচ্ছিলো, আমাকে দেখো দুজনাই বললো, যিশু ভাইকে যেন সিগারেট খাবার কথা না বলি আমি তখন বললাম, তোরা নাকি আজকে মাকিদকে মারবি? রউফ তখন বললো, আমাকে আর কামালকে দোগাছির প্রশান্ত সাহা হায়ার করেছে শালাকে মারার জন্য, প্রশান্ত আমাদের দু’জনকেই পয়সাও দিয়েছে, সেই পয়সা দিয়েই তো সিগারেট খাচ্ছি। আমি কামালকে আর রউফকে বললাম, তোরা তো জানিস, আলকাতরা নজরুল, মাকিদের মামা হয়, নজরুল ব্যাপারটা জেনে গিয়েছে,, পাঠখড়ি নিমাই সাহার কাছ থেকে, নজরুল বলে দিয়েছে মাকিদের গায়ে হাত দিলে ভালো হবে না। মাকিদের মামাত ভাই তোদেরই কেস্টপুরের মোগল ভাই যদি ব্যাপারটা জানতে পারে শেষমেষ যিশু ভাইও তোর আব্বাকে যদি বলে দেয়, অথবা তোর চুন্নু চাচাকে বলে দিলে তোরাও দুইজন বাড়িতে মার খাবি সব শেষে বললাম মোগল ভাই, পাবনা স্পোর্টিং এর ব্যাকে ফুটবল খেলে, প্রায়ই তাকে দেখি শামসুলদের দোকানের সামনে, তাকেও বলে দেবো, মোগল ভাইয়ের আপন ফুফাত ভাই, ঐ মাকিদ। আমাদেরই সহপাঠী রউফ আর কামাল আমার সঙ্গে মারামারি না করলেও খুব শাসিয়ে গেলো আমি যেন ভবিষ্যতে প্রশান্ত সাহাকে বাঁশ দিয়ে মাথায় বাড়ি না দিলে আমাকে ওরা দু’জন মিলেই মার দিবে জি.সি.আই স্কুলের মাঠে। আমাকে যখন রউফ আর কামাল কথাগুলো বলছিলো, ঠিক তখনি শামু আমার কাছে এসে বললো, মাকিদ ভাই চলেন। স্কুল থেকে আমরা যখন দল বেঁধে জজকোর্টের সামনে এসেছি, তখন দেখি আমাদের আরিফপুরের মান্নান ফকিরের বাবা রজব ফকির ভাই, তার গরুরগাড়ি নিয়ে ফিরে যাচ্ছে আরিফপুরের মুনছুর হাজীর ইটের ভাটার দিকে ইট আনতে। রজব ফকির ভাই, ইট নামাতে গিয়েছিলেন আটুয়ার হোসেন বিড়িওয়ালার বাড়িতে। সেখানে ইট নামিয়ে ফিরতেই, জজকোর্টের সামনে আমাকে দেখে ডেকে বললেন, রোকন বাড়িতে যদি যাস, তবে আমার গাড়িতে ওঠ, দেরি না করে, শামু-হারুকে বিদায় দিয়ে উঠে বসলাম রজব ভাইয়ের গরুর গাড়িতে। রজব ভাইয়ের কৃতী সন্তান আব্দুল মান্নান* তখন পাবনা জিলা স্কুলের তুখোড় ছাত্র। মান্নানের বাবা রজব ভাই আমাদের ক্ষেত চাষ করতেন, এমনকি তার অন্য দুই ভাইও আমাদের জমি বর্গা নিয়ে ফসলাদি ফলিয়ে দিয়ে যেতেন আমাদের বাড়িতে। আর আমাদের পুকুরে আরিফপুরের অনেক লোক গোসল করতেন, তার ভেতরে রজব আলী ফকির থেকে শুরু করে মান্নান ফকির, মগরেব আলী, আকবর ফকির, আবু ফকির, এমনকি কালো গেদনকেও দেখতাম মাঝে মাঝে গোসল করতে। মেধাবী মান্নান ফকিরকে চাচা বলে ডাকতাম আর মাঝে মাঝে তার কাছ থেকে অংক শিখতাম। মাঝে মাঝে মারামারি হতো কাঁচের গুলি খেলা নিয়ে, তার পরও মান্নানের সঙ্গে হৃদ্যতা কম হয়নি বরং বেড়েই ছিল। আমার আব্বা, মা, বড় ভাই বোন, এমনকি পাড়ার সকল মুরব্বিই ঐ মান্নানকে স্নেহ করতেন ভাল ছাত্র হবার সুবাদে। সেই মান্নানই ১৯৬০ সালে পাবনা জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে স্টারমার্ক নিয়ে যখন পাস করল, তখন আমাদের আরিফপুর দোহারপাড়া ব্রজনাথপুর এমনকি বলরামপুরের অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন মান্নানের পরীক্ষার ফলাফল জেনে। অথচ মান্নান চাচা যখন ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেয়, সে তখন আমারই রাইটার কলম দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল, ব্যাপারটা রজব ভাই জানতেন, তাই তিনি যখন জজকোর্টের সামনে আমাকে দেখতে পেয়েই ডাক দিলেন এবং গরুর গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে এসে পৌঁছলেন আমাদের দোহার পাড়ার বাড়ির সামনেই। রজব ভাইদের বাড়িটিও আমাদের বাড়ির উল্টো দিকেই। গরুর গাড়ি থামিয়ে দিয়ে জানতে চাইলেন, তোর সঙ্গে আরও যে তিন-চারটি ছেলেকে দেখলাম ওরা কারা। রজব ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তর দিতেই তিনি বললেন, একটি মোটা, সুন্দর ছেলেকে দেখলাম, সুন্দর জামা কাপড় পরেছে ওই ছেলেটির নাম কি? বললাম শামসুল হক শামু। রজব ভাই বললেন, ছেলেটি যে ভদ্রলোকের ছেলে দেখলেই বোঝা যায় আর যে সুন্দর জামা গায়ে দিয়েছে, একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলেই বলেছিলেন, আমার যদি সামর্থ্য থাকত, তবে আমি আমার মান্নানকেও ঐ রকম শীতের লাল সোয়েটার কিনে দিতাম, দিতাম জামা-জুতা। সহপাঠী রউফ আর কামালের সঙ্গে মারামারির পরিবর্তে সপ্তাহ খানেকের ভেতরেই আবার ভাব হয়ে গেল, এমনকি যে প্রশান্ত সাহাকে একদিন মারতে গিয়েছিলাম তার সঙ্গেও ভাব হয়ে গেল, ভাবটা করিয়ে দিল রউফ, নিমাই, হারু, আশিষ, গোপাল এবং আমাদের সেই সহপাঠী ডি. আই ওয়ান সাহেবের ছেলে শাহরিয়ার। * আব্দুল মান্নান পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে পাবনা মিউনিসিপ্যালিটিতে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে অবসর জীবনযাপন করছেন নিজ বাড়িতে সেই শাহরিয়ারই একদিন এক খুব মোটা তাজা ফর্সা চামড়ার এক ছেলেকে আমাদের ক্লাসে এনে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল, ওর নাম হাবিবুল ইসলাম, সিভিল সার্জেন সাহেবের ছেলে, ওর বাবা ঢাকা থেকে বদলি হয়ে পাবনা এসেছেন। হাবিবুলদের বাসা পুরনো ব্রিজের পশ্চিম দিকের লাল দোতলা বাড়িটি। হাবিবুল আগামীকাল আমাদের ক্লাসে ভর্তি হবে। প্রথম প্রথম দিন কয়েক আমরা সকলেই নতুন ভর্তি হওয়া মোটা তাজা ফর্সা চামড়ার সেই হাবিবুলকে পাত্তা না দিলেও, তাকে পাত্তা দিল ইয়াকুব, এরশাদ সাধুপাড়া, কাছাড়িপাড়ার আরও জনাকয়েক। র‌্যালি সাইকেলে চড়ে স্কুলে যে ছেলেটি যাতায়াত করত, সেই মাহতাব বিশ্বাসকে দেখিয়ে হারু একদিন বললÑ মাহতাব বিশ্বাস, এরশাদ এবং ইয়াকুবের সঙ্গে আর আমাদের কথা বলা উচিত নয়, ঐ তিনজনই মোটা তাজা হাবিবুলের সঙ্গে আর শাহরিয়ারের সঙ্গে গল্প গুজব করে। শালা হাবিবুল, ডাক্তারের ছেলে তার ওপর এসেছে ঢাকা থেকে। ঢাকায় যেন আর কেউ থাকে না, আর আমাদের ঐ তিনজন, শালার মোটা ফর্সা খাসির নিকট থেকে নাকি প্রতিদিন চিনাবাদাম, আইসক্রিম খাচ্ছে, পয়সা দিচ্ছে হাবিবুল শালা। আর শাহরিয়ার শালা, দুজনেই তো বাপ মায়ের কাছ থেকে পয়সা চাইলেই পায়। আমি মায়ের কাছ থেকে ২ আনা পয়সা সেই কবে থেকে চাচ্ছিÑ দেই, দিচ্ছি করে আজ ৩ দিন পরে দিয়েছে, হারু প্যান্টের পকেট থেকে ২ আনা পয়সা বের করেই বলল, এই ২ আনাই দিতে হবে চিনেবাদাওয়ালা কালো শাজাহানকে। ২ আনা শোধ না করলেও চিনেবাদাম লোকোনদানা দেবে না বলে জানিয়েছে। এমন সময় শেখ আব্দুল হাদী আর ইয়াকুব কোথা থেকে প্রায় দৌড়ে এসে দাঁড়াল আমাদের কাছাকাছি। আমি, হারু, গোপাল, আশিষ, হাদী আর ইয়াকুবের সঙ্গে কোন কথা না বলে যখন হারুর সঙ্গে শাজাহানের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন দেখি হাবিবুল, শাহরিয়ার, এরশাদের সঙ্গে শামসুল হক শামুও এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে, শামুই, হারুকে থামিয়ে দিয়ে বলল, আমাদের সীতেন স্যার আজ ঐ যে লম্বা কায়েমকে খুব পিটিয়েছে, ক্লাসে পড়াত পারেই না, পড়ার কথা বললে আবার হাসে। অনেক কথার ভিড়ের মাঝখানেই বেশ কিছুদূরে তাকিয়ে দেখি আমারই চাচাত ভাই, আব্দুল কাইয়ুম দেখি আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে, কাইয়ুমের সঙ্গে আমাদেরই বাড়ির রতন, রাজা, বাবুল আর পাড়ার হাচেন আলী, আব্দুল্লাহ, আজিজুল এদের সকলকে নিয়েই এগিয়ে এলো আমার কাছে। ভেজা চোখ আমাকে দেখে কাইয়ুম তার সমস্ত রাগ অভিমান এবং অপ্রতিরোধ্য চোখের পানিতে নিজেকে ভিজিয়ে দিয়ে যে অভিযোগ করল সেটা আমরা শুনলাম এবং জানলাম, ইংরেজীর শেখ আব্দুল কাইয়ুম, খনা, আমার মাসুদ চাচার ছেলে। সীতেন স্যার, তাকে পড়া না পারার জন্য বেত দিয়ে পিটায়নি, পিটিয়েছে ঐ রাজা, রতন, বাবলুকে স্কুলে ভর্তি না করেই কেন ক্লাসে এনে বসিয়ে রেখেছে অন্য ছেলেদের বসার জায়গায়। অপরাধ গুরুতর, তাই আজকে রাজা, রতন, বাবলুকে স্কুলে ভর্তি না করিয়েই, দলপতি আব্দুল কাইয়ুম শেখ হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো প্রায় ৮-১০ জনকে এক সঙ্গে নিয়ে সোজা হাঁটা দিল আমাদের দোহারপাড়ার দিকে। (চলবে)
×