ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁর পতিসর হতে পারে এক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৫ মার্চ ২০১৯

নওগাঁর পতিসর হতে পারে এক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ “ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান। তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান। আমার আপন হারা প্রাণ, আমার বাঁধন ছেড়া দান”,“ মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাইনা”, “ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা”। “মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক” বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের এসব হৃদয়স্পর্শী গান কবিতা ও মুখ নিঃসৃত বানীগুলি যেমন দম্ভহীন, তেমই অহংকারমুক্ত। যা মানুষ-মানুষের মাঝে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার বন্ধনকে মজবুত করে। হিংসা-নিন্দাকে দূরে সরিয়ে দেয়। সেই অহংকারমুক্ত বিশ্বের জনমানুষের কবি বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার পতিসর কাচারিবাড়ি হতে পারে এক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। নিভৃত পল্লী অবহেলিত জনপদ এই পতিসর এখনো কবিগুরুর স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে কথা বলে। এখানকার মানুষ, হাওয়া-বাতাস, স্থাপনা সবকিছুই কবির স্মৃতিকে বহন করে চলেছে। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা আসেন এই পতিসরে। রবীন্দ্র নাথের এই কাচারীবাড়িকে সরকারীভাবে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষনা করলে পর্যটকের সংখ্যাও যেমন বাড়তো, তেমনী সরকারী রাজস্বও বৃদ্ধি পেতো। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব জমিদারী তাঁর স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর পতিসর এই কাচারিবাড়ি। বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের স্মৃতিধণ্য কবির নিজস্ব জমিদারী নওগাঁর পতিসর যেন পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। কাচারি বাড়িতেই কবিগুরুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। পতিসরে নাগর নদের পাড়কে মনমুগ্ধকর করে তোলা হয়েছে। তৈরী করা হয়েছে শান বাঁধানো ঘাট। যে ঘাটে কবিগুরু তাঁর বোট থেকে নামা-ওঠা করতেন। দীর্ঘদিনেও পতিসরের তেমন উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন না হলেও জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ছোঁয়ায় ঘুরতে শুরু করেছে উন্নয়নের চাকা । কবিগুরুর নিজস্ব জমিদারী এলাকা কালিগ্রাম পরগনার সদর দপ্তর এই পতিসর। আর এই পতিসর নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার মনিয়ারি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত একটি গ্রাম । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ মাধুর্যঘেরা কবির স্মৃতি বিজড়িত পতিসর আজও সাহিত্যের অঙ্গনে স্বাড়ম্বরে বিরাজিত। কবির যখন ভরা যৌবন এবং কাব্য সৃষ্টির প্রকৃষ্ট সময়, তখনো তিনি বিরাজ করেছেন পতিসরে। কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তার পুরস্কারের অর্থ তিনি এই পরগনার প্রজাদের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার জন্য ৭৫ হাজার টাকা তৎকালিন সময়ে এখানে স্থাপিত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন। এই প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার প্রজাদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌছে দেয়ার লক্ষে কবি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে পতিসরে এসে তার পুত্র রথীন্দ্রনাথের নামে কালিগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনষ্টিটিউশন স্থাপন করেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের নামে ২শ’ বিঘা জমি দান করেন। তথ্য অনুসন্ধানে অন্তত এটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর ছিলেন মহান ও উদার মনের মানুষ। এই পরগনাসহ দেশের জাতি-ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে তিনি অন্তর দিয়ে ভালবাসতেন।
×