ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরিশাল গ্রীন সিটি পার্ক পরিত্যক্ত ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ১৬ মার্চ ২০১৯

 বরিশাল গ্রীন সিটি পার্ক পরিত্যক্ত ঘোষণা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বরিশাল গ্রীন সিটি পার্ক তিন বছরের মধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নির্মিত এ শিশু পার্কের মধ্যে নিম্নমানের বিভিন্ন রাইড ভেঙ্গে শিশুরা আহত হওয়ার কারণে এবং পার্কটি এখন আর ব্যবহার উপযোগী না থাকায় শিশুদের দুর্ঘটনা এড়াতে গত দেড় মাস পূর্বে শিশু পার্কটি বন্ধ করে দিয়েছে পার্কের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। বরিশালের সুশীল সমাজের দাবি, প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রীন সিটি পার্ক নির্মাণের সময় ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় উদ্বোধনের দুই বছরের মধ্যেই পার্কটির অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনকে খতিয়ে দেখার জন্য আহ্বান করেছেন নগরবাসী। পার্কটি ঘুরে দেখা গেছে, গ্রীন সিটি পার্কের নামের রং বদলে জং ধরেছে কোটি টাকার খেলনায়। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার আর বিসিসি’র রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গ্রীন সিটি পার্ক শিশু বিনোদনের পরিবর্তে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। পার্কটির খেলনাগুলোর প্রায় সবই অকেজো। আবার অনেক হদিস নেই পার্ক চত্বরে। সচেতন নগরবাসীরা অভিযোগ করেন, শুরুতেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে পার্কটি অল্পদিনেই পূর্বের রূপ হারিয়ে মরিচা ধরে মুখথুবড়ে পড়েছে। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হলেও বাস্তবে চায়না থেকে অতিনিম্নমানের খেলনা বসিয়ে প্রকল্পের পুরো টাকাই আত্মসাত করা হয়েছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এক কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানের পাশে গ্রীন সিটি পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ২০১৬ সালের ২৯ জানুয়ারি পার্কটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল। সূত্র মতে, উদ্বোধনের সময় পার্কে দুটি দোলনা, তিনটি স্লিপার, একটি রোলার, দুটি ব্যালেন্স রাইডারসহ ১৮টি রাইডস্ ছিল। সৌন্দর্যবর্ধণে স্থাপন করা হয়েছিল ডিজিটাল ট্রি (গাছ), টাওয়ার, এলইডি লাইট ও সিকিউরিটি বাল্ব। কিন্তু বছর যেতে না যেতেই পার্কের দুটি দোলনা, একমাত্র রোলার রাইডার, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, কুকুর, ড্রাগনসহ নয়টি খেলনা ভেঙ্গে গেছে। প্রবেশপথে স্থাপিত বৈদ্যুতিক তুলা গাছটিও ভেঙ্গে পড়েছে। জ্বলছে না দুটি ডিজিটাল বাঁশ লাইট। চারপাশে ৬১টি সিকিউরিটি বাল্বের এক তৃতীয়াংশই নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে টয়লেট ব্যবহারে অনুপযোগী। শুধু অবকাঠামো নয়, পার্কের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণেও অবহেলার অভিযোগ রয়েছে বিসিসি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্ক নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়েছিলেন জনৈক শাহিন সিকদারের মালিকানাধীন সিকদার কনস্ট্রাকশন। কাগজে কলমে এই ঠিকাদারের নাম থাকলেও মূল ঠিকাদার ছিলেন তৎকালীন মেয়র আহসান হাবিব কামালের পুত্র কামরুল আহসান রূপন। সূত্র মতে, পার্ক নির্মাণের শুরুতেই নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় উদ্বোধনের দুই বছরের মধ্যেই গ্রীন সিটি পার্কটি বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে পার্কের খেলনা সামগ্রী। এমনকি পার্কের প্রবেশদ্বারের টাইলসও ভেঙ্গে উঠে গেছে। চারপাশের সীমানা প্রাচীরেও দেখা দিয়েছে বিশাল বিশাল ফাটল। দরপত্র অনুযায়ী পার্কের ভেতরে এবং প্রবেশদ্বারে চীন থেকে উন্নতমানের ঘাস এনে লাগানোর কথা থাকলেও স্থানীয় ঘাস লাগানোর কারণে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া অযতœ-অবহেলার পার্ক জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। বসার জায়গাগুলোতে জমেছে ধূলার আস্তর। পার্কটি উদ্বোধনের চার মাসের ব্যবধানে ‘রোলার রাইডার’ ভেঙ্গে যায়। এরপর গ্রীন সিটি পার্কে নিম্নমানের রাইডসসহ অন্যান্য সামগ্রী স্থাপনের বিষয়টি দর্শনার্থীদের নজরে আসতে শুরু করে। একাধিক দর্শনার্থীরা জানিয়েছেনে, শিশুদের খেলার জন্য রাইড বা দোলনাগুলো ভাল না থাকায় পার্কে এলে তাদের সময় কেটেছে গল্প করে। ভাঙ্গা দোলনায় উঠে আহত হয় শিশুরা। পুরো পার্কেই আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এ কারণে পার্কটির প্রতি শিশুরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বরিশালের ২৭টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি নাট্যজন কাজল ঘোষ বলেন, আমরা পার্কটি চাই। তবে পার্কে কোন শিশু আহত হোক তা আমরা চাই না। আমরা চাই পার্কটি আবারও সুন্দর করে সাজানো হোক সময় উপযোগী করে। তিনি আরও বলেন, দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ পার্কে অবশ্যই অনিয়ম হয়েছে। যে কারণে মাত্র তিন বছরের মধ্যেই পার্কটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। অতিদ্রুত এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হোক। পার্ক নির্মাণের সময় কেউ অনিয়ম করে থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও তিনি জোর দাবি করেন। এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোঃ খাইরুল ইসলাম জানান, পার্কটি এখন ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এখন শিশুরা বিভিন্ন খেলনা ব্যবহার করলে দুর্ঘটনায় পড়বে। তাই আমরা পার্কটি বন্ধ করে দিয়েছি। সিটি মেয়র পার্কটি পরিদর্শন করে বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যত দ্রুত সম্ভব আমরা হয় পার্কটি সংস্কার করব নতুবা নতুন খেলনা স্থাপন করে শিশুদের জন্য উন্মুক্ত করব।
×