ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাবেক ফেন্সিডিল কারবারিদের নতুন উদ্যোগ

চাঁপাই সীমান্তে নকল ইয়াবা, কারখানা গড়েছে ভারতীয়রা

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ১৯ মার্চ ২০১৯

চাঁপাই সীমান্তে নকল ইয়াবা, কারখানা গড়েছে ভারতীয়রা

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ মরণ নেশা ইয়াবা কি এবার মিয়ানমার ছেড়ে ভারতে তৈরি হচ্ছে। খুবই লাভবান হবার মানসে ভারতের মাদক কারবারিরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তজুড়ে মালদহ-মুর্শিদাবাদে এসে ঠাঁই নিয়েছে। এক সময় যেমন ফেনসিডিল বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল একশ্রেণীর যুবকদের কাছে। তাই ভারতীয়রা সীমান্তে এসে এর কারখানা করে ফেনসিডিল ঠেলে দিচ্ছিল বাংলাদেশে। বিষয়টি বাংলাদেশ-ভারত একাধিক যৌথ বৈঠকে আলোচনা হবার পর ভারতীয় মাদক কারবারিরা সীমান্তের ফেনসিডিল কারখানা বন্ধ করে সরে গিয়েছিল। তারাই এখন নতুন করে আবারও সীমান্তে এসে জড়ো হয়ে ইয়াবা তৈরির কারখানা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে ইয়াবার বাজার মনে করছে। কয়েক মাস ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একাধিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সদস্যের হাতে চাঁপাই সীমান্ত হতে ইয়াবা উদ্ধার শুরু করে। গত ১২ মার্চ বিজিবি চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাকা সীমান্তের কাছাকাছি ১৩/১ পিলারের কাছ থেকে ওয়াহেদপুর বিওপির হাবিলদার আবু আব্দুল্লাহ ৪০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেন। মাদক আসছে শুনে টহলদল ঘাপটি মেরে বসে থাকার পর ভারতীয় এলাকা থেকে এক চোরাকারবারিকে বাহকের মাথায় একটি বস্তা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। চোরকারবারিরা বিজিবির অস্তিত্ব অনুমান করে বস্তা ফেলে আবার ভারতে ঢুকে পড়ে। বিজিবি চটের বস্তাটি উদ্ধার করলে তার মধ্য থেকে মরণ নেশার ৪০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য সোয়া কোটি টাকা। বিজিবি এই মরণ নেশা ইয়াবা উদ্ধার করে অনেকটাই বেকায়দায় পড়ে। ইতোপূর্বে বিজিপি কটি অভিযানে কিছু ইয়াবা উদ্ধার করলেও এটি সবচেয়ে বড় চালান বলে লেঃ কর্নেল সাজ্জাদ মনোয়ার পিএসসি বলেছেন। তিনি ৫৩ বিজিবির (ব্যাটালিয়ন) অধিনায়ক হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করার সময় নিশ্চিত করে বলতে পারেননি এটি মিয়ানমারের তৈরি না ভারতীয় সীমান্তের তৈরি। তিনি বলেন, এটির রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকার ল্যাবে পাঠানোর পর নিশ্চিত হবেন আসল না নকল। তবে সোর্স নিশ্চিত করেছেন কয়েকদিন আগে খাসেরহাটের জনৈক ব্যক্তি (বিনোদপুর ইউপি) ১ কোটি টাকার একটি স্লিপ নিয়ে ভারতে যায়। তারই কেনা এই ইয়াবা কিনা তা কেউ বলতে পারেনি। অনুমান করা হচ্ছে, ইয়াবা কেনার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন পড়ে। বিধায় সীমান্তে যেসব মাদক ব্যবসায়ী ইয়াবার কারখানা করে মিয়ানমার স্টাইলে ইয়াবা তৈরি করে ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশে; তারাই হয়তবা এই অর্থ নিয়ে কোটি টাকার ইয়াবা ঠেলে দিয়েছে। কারণ মনাকষা ইউনিয়নের সিরাজনগর, একাধিক চৌকা গ্রাম, চাঁন্দপুর, কামালপুর, রাঘবঘাটি, রাজনগর, হাঙ্গামী, সিংনগর, রাজনগর আরাজী, রানীনগর, শাহপাড়া, মুখীপাড়া, কায়াতপাড়া, সাতভাইয়া, দুর্লভপুরের মনোহরপুর, রঘুনাথপুর, পাঁচ রশীয়া, হাসানপুর, জগন্নাথপুর, দাইপুকুরিয়ার চক শ্রীরামসহ ১২টি গ্রাম, শাহবাজপুরের নামো চাকপাড়া দিলালপুরসহ ১৫টি গ্রাম, উজিরপুরের চক বাহারাম, বিশ্বনাথপুর, লম্পট, জয়ন্তীপুর, বাবলাতলা, দক্ষিণ উজিরপুরসহ পাকার বাবুপুর, গৌরাঙ্গপুর, কানশিরা, উত্তরপাকা, চরপাকাসহ ১২টি গ্রাম। পাকা গ্রামের ১৮ হাজার লোকের মধ্যে এখন ইয়াবা আনছে সিংহভাগ মানুষ। এরা ইয়াবা এনে ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা দেশে। তবে নকল ইয়াবা পাঠাচ্ছে ঢাকাতেও। এরা ইয়াবা পাঠানোর ব্যাপারে ব্যবহার করছে মাইক্রোসহ নানান উপজেলার এ্যাম্বুলেন্স।মিয়ানমারের ইয়াবা ভারত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে কিনা বিষয়টি নিশ্চিত করতে না পারলে তা জটিল হয়ে দাঁড়াবে। অধিক লাভের আশায় ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সাধারণ মদের মতো ইয়াবা তৈরি হচ্ছে কিনা? মালদহ- মুর্শিদাবাদসহ সীমান্ত জেলাসমূহে নকল ইয়াবা তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা হয়ে থাকলে ভবিষ্যতে বড় হুমকির মুখে পড়বে বাংলাদেশ। এই আশঙ্কা ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক সাজ্জাদ সারোয়ারের। বিষয়টি এই মুহূর্তে বন্ধ করতে না পারলে আরও ছড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশে।
×