ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মশামুক্ত করতে শাহজালালে শীঘ্র অভিযান

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ১৯ মার্চ ২০১৯

মশামুক্ত করতে শাহজালালে শীঘ্র অভিযান

মশিউর রহমান খান ॥ এবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকাকে পুরোপুরি মশকমুক্ত করার ক্রাশ অভিযানে নামছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরসহ বিমান উড্ডয়ন এলাকা, বিমানবন্দরের অভ্যন্তরের সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানে এই অভিযান পরিচালনা করা হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (ক্যাব) সকল স্থাপনাকেও মশকমুক্ত করা হবে। ডিএনসিসি ও ক্যাব যৌথ উদ্যোগে এ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বিমানবন্দর এলাকায় ও বিমানবন্দরের ভেতরে এমনকি বিমানের ভেতরে মশার উপদ্রব কমাতে অতি দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া নির্দেশের পরই ডিএনসিসির নবনির্বাচিত মেয়র এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। রাজধানীর উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে মশা দূর করতে বিশেষ অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান আতিকুল ইসলাম। গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির পুরো এলাকায় মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রামও নেয়া হবে বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি। এরই অংশ হিসেবে মেয়র শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই এই ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করতে চান বলে জানান মেয়র। দেশের প্রধান বিমানবন্দরটিতে প্রতিদিনই মশার উৎপাতে অনেক সময় দেশী-বিদেশী ভ্রমণকারীদের টিকে থাকা দায় হয়ে পড়ে। বিদেশ থেকে আসা অতিথিরা বিমান ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে মশার উৎপাত নিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ দিলেও তাদের মশক নিধনে তেমন কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। আবার কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তেমন কার্যকরী হয় না। পৃথিবীর কোন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে মশার উৎপাত লক্ষ্য করা না গেলেও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সর্বত্রই মশার দেখা মেলে। ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে শুরু করে, সাধারণ যাত্রীদের বসার স্থান, মসজিদ, বিশ্রামাগার, এমনকি বিমানের ভেতরেও পর্যন্ত মশার উপদ্রব দেখা যায়। যা একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য লজ্জাজনক ও বিব্রতকর বিষয় বটে। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, মেয়র আতিকুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা গার্মেন্টস সংশ্লিষ্ট বায়ার ও ব্যবসায়ীগণ শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে শুরু করে যত্রতত্র মশার ভয়াবহ উৎপাত দেখে মেয়রকে ফোন করে মশা নিয়ে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির কথা জানান। একই সঙ্গে বিদেশী যাত্রীরা একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশা নিয়ে চলমান অব্যবস্থাপনা নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এছাড়া মেয়র এর আগে বাংলাদেশ গার্মেন্টস পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক মালিক সমিতির (বিজিএমইএ) এর সাবেক সভাপতি থাকা অবস্থায় অনেক বিদেশী মশা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ করেন। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহজালাল বিমানবন্দরের মতো একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এত মশা কেন তা জানতে চেয়েছেন। একই সঙ্গে অতি দ্রুত বিমানবন্দর এলাকা ও এর আশপাশের সকল স্থাপনাকে মশকমুক্ত করতে মেয়রকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরই অতি দ্রুত তা বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নেমেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। সূত্র জানায়, মশার উৎপাত দূর করতে মেয়র বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। মশক নিধন নিয়ে গঠিত কমিটির সঙ্গে সম্প্রতি করা এ বৈঠকে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মেয়র নির্দেশ দেন যে, যেহেতু একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তাই সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অতি দ্রুতই যোগাযোগ করে বিমানবন্দর ও এর আশপাশে থাকা সকল প্রকার জলাশয়ে একযোগে মশক নিধন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার উপদ্রবের কারণে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট নির্দিষ্ট সময় থেকে ২ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। ফ্লাইটের নির্ধারিত সময়ে উড়োজাহাজটি রানওয়ের দিকে এগোলেও শুধু একঝাঁক মশার কারণে বাধ্য হয়ে বিমানটি ফিরে আসে। মশার উৎপাতে উড়োজাহাজের যাত্রীরা বসে থাকতে পারছিলেন না। এরপর কেবিন ক্রুরা প্রায় ২ ঘণ্টায় মশা নিধন শেষ করেন, এরপর ফ্লাইটটি গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেয়। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম। জানা গেছে, বিমানবন্দরে আলফা-২ বে এরিয়ায় বোয়িং ৭৩৭ মডেলের উড়োজাহাজটিতে প্রায় ১৫০ জন যাত্রী ওঠার সময় সেটিতে মশা ঢুকে পড়ে। এরপর যাত্রী নিয়ে উড্ডয়নের জন্য রানওয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল উড়োজাহাজটি। কিন্তু মশার উৎপাতে যাত্রীরা বিরক্ত হয়ে কেবিন ক্রুদের কাছে অভিযোগ করেন। এতে রানওয়ের পরিবর্তে পুনরায় বে এরিয়ায় উড়োজাহাজটি ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হন বৈমানিক। এরপর মশা নিধন চলে প্রায় ২ ঘণ্টা। রাত পৌনে ৩টার দিকে পুনরায় ফ্লাইটটি ছেড়ে যায়।
×