ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাত মাসে ঘাটতি ৩৩ হাজার কোটি টাকা

রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

প্রকাশিত: ১১:৪০, ১৯ মার্চ ২০১৯

রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যপূরণ করতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের গত সাত (জুলাই-জানুয়ারি) মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি গত ৫ বছরের একই সময়ের তুলনায় সর্বনিম্ন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন খাতে ভ্যাট অব্যাহতি, এনবিআরের লোকবল সঙ্কটে রাজস্ব আয়ের গতি কমে গেছে। ফলে ঘাটতি বেড়েছে। জানা যায়, জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ১ লাখ ৫১ হাজার ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল এনবিআরের। বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি ৩৩ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এনবিআর সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে ভ্যাট খাত থেকে রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে সংস্থাটি। ৬০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রথম সাত মাসে রাজস্ব এসেছে ৪৬ হাজার ২৫ কোটি টাকা। এখানে এনবিআর ১৩ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা ঘাটতিতে পড়েছে। সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এলএনজি ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি, মোবাইল ফোন, অটোমোবাইল, ইন্টারনেটে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ায় কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হাতছাড়া হয়েছে।’ শুল্ক খাতেও রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি রয়েছে। সাত মাসে ৪৮ হাজার ১০০ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে এ খাতে রাজস্ব আয় ৩৬ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। এখানেও ১১ হাজার ৩১৩ কোটি টাকার ঘাটতি। মূলধনী যন্ত্রাংশ আমদানি কমে যাওয়া, চিনি, গুঁড়ো দুধ, সয়াবিন তেল, সিমেন্টের ক্লিংকার, ওষুধ, আপেল, কমলার আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আহরণ কমেছে বলে জানিয়েছে এনবিআর। অন্যদিকে, আয়কর খাতেও রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জুলাই-জানুয়ারি সময়ে আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে ৪৩ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বিপরীতে এনবিআর আদায় করেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং এখানেও ৮ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। পরে সেটি কমিয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। যার বিপরীতে এনবিআর আদায় করে ২ লাখ ৬ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যার মধ্যে ভ্যাট খাতে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা, আয়কর খাতে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা এবং আমদানি শুল্ক খাতে ৮৪ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঘাটতি থাকার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি। ম্যানেজমেন্টে অচলাবস্থা, নির্বাচনের বছরে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি, ভ্যাট, রেয়াত, শুল্কে ছাড় দেয়ায় ঘাটতি বাড়ছে। বকেয়া ও ঋণ খেলাপীদের কাছ থেকেও রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে না। এছাড়া এনবিআরের কর্মতৎপরতা প্রত্যাশা অনুযায়ী নয়। ফলে রাজস্ব আহরণ কম হওয়াটাই স্বাভাবিক।’ তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনীতির অবস্থা ভাল থাকলে রাজস্ব আহরণ ভাল হয়। অর্থনীতির অবস্থা তো ভাল না। সুতরাং রাজস্ব আয়ে ঘাটতি দেখা দেবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এনবিআর কঠোর না হলে সামনে আরও খারাপ অবস্থায় পড়তে হবে। এনবিআরের প্রশাসন ঢেলে সাজাতে হবে। তাহলে রাজস্ব আহরণে গতি আসবে।’ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘রাজস্ব আহরণে ঘাটতি কিছুতেই কাম্য নয়। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম রাজস্ব আদায় হয়। রাজস্ব কম হলে সরকারের উন্নয়নে খাতের ব্যয়ও কমাতে হবে। এনবিআরকে ধীর পায়ে হাঁটলে হবে না। দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে হবে।’ এনবিআরকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি কাক্সিক্ষত রাজস্ব আহরণ না হয়, তাহলে সরকার যে লক্ষ্য নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা ফলপ্রসু হবে না। ফলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। কাজেই এনবিআরকে আরও মনোযোগী হতে হবে।’ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া একটি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের রাজস্ব আদায়ের টার্গেট অনেক বেশি। কিন্তু জনবলের ঘাটতি রয়েছে। স্বল্পসংখ্যক লোক দিয়ে আমরা কাজ করছি। এছাড়া এবার অনেক ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড়, কমানো হয়েছে। সেই কারণেও রাজস্ব আয় কমেছে।’ তবে সামগ্রিক চিত্র হচ্ছে প্রথম দিকে রাজস্ব আয় কম থাকে আর শেষের দিকে বাড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি সামনে রাজস্ব আহরণের চিত্র পাল্টে যাবে। কোন ঘাটতি থাকবে না।’
×