ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্যে বডিবিল্ডার হাসিব হলি

প্রকাশিত: ১২:০৫, ১৯ মার্চ ২০১৯

প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্যে বডিবিল্ডার হাসিব হলি

রুমেল খান ॥ ‘ক্রীড়াপ্রেমী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সান্নিধ্য পাওয়া, তার সঙ্গে দেখা করা-কথা বলার বিরল সৌভাগ্য সবার হয় না। আমি গর্বিত, আমিও সেই সৌভাগ্যধারীদের তালিকায়। ১৮ মার্চ, সোমবার, ২০১৯ ... এই তারিখের কথা কোনদিনও ভুলব না। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দোয়া-আশীর্বাদ নিয়ে ফিরেছি। চিরজীবন এই দিনটির কথা মনে থাকবে।’ আবেগে আপ্লুত হয়ে মোবাইল ফোনে যিনি কথাগুলো বলেন, তার নাম হাসিব হলি। ‘হলি’ শব্দের অর্থ হচ্ছে পবিত্র। অথচ আন্তর্জাতিক বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় এই দেশের হয়ে প্রথম স্বর্ণজয়ী এই হলিকেই কি না অন্যায়ভাবে আজীবন নিষিদ্ধ করে নিজেদেরই কলঙ্কিত ও অপবিত্র করেছিল বাংলাদেশ শরীরগঠন ফেডারেশন! আর সেই হলি যে আসলেই ‘হলি’, নিজের কাছে ডেকে নিয়ে সেটাই প্রমাণ করে দিলেন ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী। জানতে ইচ্ছে করে, এই ঘটনা কি শরীরগঠন ফেডারেশনের মুখে চপেটাঘাতের শামিল নয়? এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ফেডারেশনের বিতর্কিত, তথাকথিত এবং স্ব-ঘোষিত ‘সাবেক মিস্টার বাংলাদেশ খ্যাত’ সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামকে ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়! প্রধানমন্ত্রী কেন এবং কিভাবে ডাকলেন হাসিব হলিকে? জানতে চাইলে হলি জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে জানান, ‘আজ (সোমবার) সকাল ৮টার দিকে হঠাৎই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ফোন আসে। তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডেকেছেন গণভবনে, কাজেই দ্রুত যেতে হবে। আমি তো নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারিনি। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রক্রিয়া চলমান ছিল, কিন্তু আমার সাবেক কোচ ও শুভাকাক্সক্ষী শাহরিয়ার মুরাদ যে এত তাড়াতাড়িই যে বিষয়টা সম্পন্ন করে ফেলবেন, তা ভাবতেই পারিনি। মুরাদ ভাইকে এজন্য অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’ কেন ডাকলেন প্রধানমন্ত্রী? ‘মুরাদ ভাই আমার বডিবিল্ডিংয়ে অর্জন-সাফল্য-সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানিয়েছিলেন। সেখান থেকে এসব জেনে প্রধানমন্ত্রী আমার সম্পর্কে আগ্রহী হন এবং আমার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর খেলাধুলা সম্পর্কে গভীর আগ্রহ দেখে অবাক হয়েছি। তিনি আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন আরও ভাল খেলে দেশের জন্য সাফল্য নিয়ে আসার জন্য। আরও বলেছেন, এজন্য তোমার যা লাগে সব আমি দেব, কোন চিন্তা কর না। তাঁর এই আশ্বাসবাণী পেয়ে খুবই খুশি হয়েছি। আবারও নতুন করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে।’ প্রধানমন্ত্রীর হাতে একটি আবেদনপত্রও তুলে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম লেভেল এ্যাডভান্সড সার্টিফাইট ট্রেনার হাসিব। সেই সঙ্গে দৈনিক জনকণ্ঠে তাকে নিয়ে প্রকাশিত বেশকটি প্রতিবেদনের কপিও। তাতে আছে বডিবিল্ডিং নিয়ে হাসিবের অতীত আন্তর্জাতিক সাফল্য ও অর্জন এবং ভবিষ্যত পরিল্পনার সার সংক্ষেপ। সেগুলোর কিছুটা মুখেও জানিয়েছেন। আগামী নবেম্বর বা ডিসেম্বরে বিশ্ব বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপে এবং মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় যে অংশ নিতে চান এবং এজন্য যে প্রচুর অর্থের দরকার, সেটাও জানান। সব শুনে প্রধানমন্ত্রী তাকে খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হাসিব জানান, ‘পত্রিকাগুলোর জন্য একমাত্র জনকণ্ঠই শুরু থেকেই আমার সঙ্গে ছিল। তারাই আমাকে নিয়ে অন্য সবার চেয়ে বেশি কভারেজ দিয়েছে। এজন্য জনকণ্ঠকেও আন্তরিক ধন্যবাদ। আমি মনে করি জনকণ্ঠের ওই প্রতিবেদনগুলোই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সাক্ষাত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’ এছাড়া হলি প্রধানমন্ত্রীকে উৎসর্গ করে সিঙ্গাপুরে স্বর্ণজয়ী ট্রফিটা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেটা না নিয়ে হাসিবকেই ফিরিয়ে দেন এবং তাকে দোয়া করেন। এ সময় হাসিবের গায়ে জড়ানো ছিল বাংলাদেশের পতাকা, যেটা সিঙ্গাপুরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে স্বর্ণজয়ের পর গায়ে জড়িয়েছিলেন। উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাইয়ে সিঙ্গাপুর অনুষ্ঠিত ‘মিস্টার ইউনিভার্স ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ অংশ নিয়ে ভাল ফল করে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেন হলি। বিচ মডেল ম্যানস্ ফিজিক ক্যাটাগরিতে ১৬ জনের মধ্যে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেন তিনি। বিজয়ীদের নাম ঘোষণার সময় বিচারকরা সেরা ছয় জনকেই মঞ্চে ডেকে নেন, তবে পুরস্কৃত করেন প্রথম তিন জনকে। সে অনুযায়ী হলির এই অর্জন বেশ আশাব্যঞ্জবক এবং কৃতিত্বপূর্ণই বলতে হবে। মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা এই প্রথম এশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। এবং প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এই আসরে অংশ নেন হলি (এ্যাথলেটিক বডিবিল্ডিং ক্যাটাগরিতে, উচ্চতা : ১৬৫-১৭০ সেমি., ওজন : ৭০-৮০ কেজি)। ৫০তম এই আসরে ৫০ দেশের অসংখ্য বিশ্বমানের বডিবিল্ডার অংশ নেন। হাসিবের লক্ষ্যই ছিল প্রথম থেকে ষষ্ঠ স্থানের মধ্যে থাকা। কথা রেখেছেন ২৭ বছর বয়সী হলি। এর আগে ২০১৫ সালে জাতীয় বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়ন ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ খ্যাত হলি বডিবিল্ডিংয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে প্রথমবার (এখন পর্যন্ত একমাত্র) স্বর্ণপদক এনে দেন এই সিঙ্গাপুরের মাটি থেকেই, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে সিঙ্গাপুরে ‘নাব্বা ওয়ার্ল্ড ফিটনেস ফেডারেশন এশিয়া মাসল ওয়ার’ বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় (অংশ নেয় ১৩ দেশ) অংশ নিয়ে অনুর্ধ-২৪ জুনিয়র বিভাগে জিতে নেন স্বর্ণপদক। স্বভাবতই এটি বাংলাদেশের বডিবিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ঘটনা। তবে ফেডারেশনের উদ্যোগে সেখানে না যাওয়াতে হাসিবের এই অভাবনীয় সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এর দুই মাস পরেই তাকে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করে বডিবিল্ডিং ফেডারেশন আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এখন দেখার বিষয়, প্রধামন্ত্রীর প্রতিশ্রুত সাহায্য পেয়ে আগামীতে বডিবিল্ডিংয়ে দেশের জন্য আরও সাফল্য-সুনাম বয়ে আনতে পারেন কি না হাসিব, যিনি সবসময়ই বলেন, ‘আমার এই শরীর আমার দেশের জন্য!’
×