জিএম মোস্তফা ॥ দুর্দান্ত গতিতে ছুটছিল জুভেন্টাস। চলতি মৌসুমে ইতালিয়ান সিরি এ লীগে কোন ম্যাচেই হার দেখেনি তারা। রবিবারও অপরাজিত থাকার লক্ষ্য নিয়ে জেনোয়ার মুখোমুখি হয়েছিল সিরি এ লীগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু না, এদিন ভিন্ন স্বাদটাই পেয়ে গেল জুভেন্টাস। জেনোয়ার কাছে ২-০ গোলে হার মানে ম্যাসিমিলিয়ানো এ্যালেগ্রির শিষ্যরা। মূলত, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে বিশ্রামে রাখার খেসারতই যেন দিতে হলো জুভেন্টাসকে। দিনের অপর ম্যাচে মিলান ডার্বিতে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এসি মিলানকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে লীগ টেবিলের তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ইন্টার মিলান।
গত মঙ্গলবার এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের লড়াইয়ে দারুণভাবে নিজেদের ফিরিয়ে এনে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছিলেন রোনাল্ডো। যে কারণেই জেনোয়ার বিপক্ষে রোনাল্ডোকে বিশ্রামে রাখার সিদ্ধান্ত নেন জুভাদের কোচ। রোনাল্ডোর অনুপস্থিতিতে প্রথম হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হলো তাদের। তারপরও টানা অষ্টম সিরি এ লীগ শিরোপা জয়ের পথে বেশ ভালভাবেই এগিয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নেপোলির সঙ্গে জুভেন্টাসের পয়েন্টের ব্যবধান এখনও ১৫। উদিনেসের বিপক্ষে ৪-২ গোলের দুই ম্যাচ পর জয় পেয়েছে নেপোলি। এই ম্যাচে আর্সেনাল থেকে ধারে খেলতে আসা নেপোলি গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনা মাথায় আঘাত লেগে ৪৪ মিনিটে মাঠ ত্যাগে বাধ্য হন। পরবর্তীতে নেপলস হাসপাতলে তার মাথায় সিটি স্ক্যান করা হয়েছে।
পেশির ইনজুরির কারণে ১০ মাস বিশ্রামে থাকার পর জুভেন্টাসের সাবেক মিডফিল্ডার ২৬ বছর বয়সী স্টিফানো স্টুরারো এদিন প্রথম জেনোয়ার হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। বদলি বেঞ্চ থেকে উঠে আসার দুই মিনিটের মধ্যে ৭২ মিনিটে তার গোলে এগিয়ে যায় জেনোয়া। আরেক বদলি খেলোয়াড় গোরান পানডেভ ৮১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার পাশাপাশি দলের জয় নিশ্চিত করেন। এর আগে গত বছরের এপ্রিলে নেপোলির বিপক্ষে সিরি এ লীগে সর্বশেষ হার দেখেছিলেন এ্যালেগ্রি। এরপর জেনোয়ার বিপক্ষেই প্রথম হারলেন তিনি। তবে ২০১৭ সালের নবেম্বরে সাম্পদোরিয়ার বিপক্ষে পরাজয়ের পর জোনোয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল প্রথম এ্যাওয়ে পরাজয়।
তবে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা ইতোমধ্যেই এবারের মৌসুম কোপা ইতালিয়াতে আটলান্টা, চ্যাম্পিয়ন্স লীগের গ্রুপ পর্বে ইয়ং বয়েজ ও শেষ ষোলোর প্রথম লেগের লড়াইয়ে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে পরাজিত হয়েছে। কিন্তু জেনোয়ার কাছে হারটাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না এ্যালেগ্রি। এ প্রসঙ্গে ম্যাচের শেষে তিনি বলেন, ‘এটা কোন দুর্ঘটনা নয়। তবে আমি হতাশ। কারণ অপরাজিত থেকে লীগ শেষ করার লক্ষ্য সবারই ছিল। কোন খেলোয়াড়ই সব ম্যাচে নিজের শতভাগ দিতে পারে না। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ম্যাচ খেলে অনেকেই পরিশ্রান্ত ছিল।’ এ্যালেগ্রি এ সময় আরও বলেন, ‘এই পরাজয়টা আমাদের উপকারে আসবে। কারণ হয়তবা আমরা মনে করতে পারি লীগ শিরোপা আমাদের কাছে এসে গেছে। এখনও আমাদের অন্তত পাঁচ ম্যাচে জয়ী হতে হবে। আটলান্টার বিপক্ষে কোপা ইতালিয়ার ম্যাচটি এক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে। আন্তর্জাতিক বিরতির আগে এটাই আমাদের শেষ ম্যাচ। সে কারণে খেলোয়াড়রা বিশ্রাম নিয়ে একেবারে সতেজ হয়ে মাঠে ফিরতে পারবে।’
এদিকে সান সিরোতে উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে ইন্টার মিলান শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে নিয়ে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলার স্বপ্ন টিকিয়ে রেখেছে। ২০১৪ সালের পর থেকে এসি মিলান চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলার সুযোগ পায়নি। ম্যাচের তিন মিনিটে মাটিয়ান ভেসিনোর গোলে এগিয়ে যায় ইন্টার। ৫১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন স্টিফেন ডি ভ্রিজ। ৬৭ মিনিটে স্পট কিক থেকে দলের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন লটারো মার্টিনেজ। এসি মিলানের হয়ে ৫৭ মিনিটে টিমেয়ো বাকাইয়োকো প্রথম গোল করার পর ৭১ মিনিটে মাতেও মসাচ্চিও দ্বিতীয় গোল করে দলকে লড়াইয়ে ফিরিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই গোল দুটি দলের পরাজয় আটকানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। দিনের আরেক ম্যাচে নেপোলি প্রথমার্ধে ওসপিনার ইনজুরি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নেয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে।
