ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জেএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনা

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ১৯ মার্চ ২০১৯

জেএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনা

বি.এস.এস,বি-এড (১ম শ্রেণি) সিনিয়র শিক্ষক, কানকিরহাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়, সেনবাগ, নোয়াখালী। Email: [email protected] প্রথম অধ্যায় : ঔপনিবেশিক যুগ ও বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম শিক্ষিত ব্যক্তি জনাব তরাফদার তার এলাকার খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকে গত শতাব্দী পর্যন্ত নানা বংশ ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা দখলের ইতিহাস বলেন। শেষে ইউরোপীয় একটি কোম্পানীর ক্ষমতা দখলের কথা বলেন। ওই সময় এক দুর্ভিক্ষে এক-তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু হয়। সর্বশেষে বলেন, তার এলাকার মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা ও গণতান্ত্রিক অধিকার বোধেও উন্মেষ ঘটে এবং সেটা সফল হয়। ক. ভারতে প্রথম ভাইসরয় নিযুক্ত হন কে? খ.বাংলা ও ভারতে প্রতিষ্ঠিত শাসনকে ঔপনিবেশিক শাসন বলা হয় কেন? গ. জনাব তরাফদার বর্ণিত গল্পের দুর্ভিক্ষকালীন সরকার ব্যবস্থা ব্যাখ্যা কর। ঘ. জনাব তরাফদারের সর্বশেষ বক্তব্যের সঙ্গে তুমি একমত? যুক্তিসহ মতামত দাও। ক. ভারতে প্রথম ভাইসরয় নিযুক্ত হন লর্ড ক্যানিং। খ. কোনো দুর্বল দেশের ওপর ভিনদেশি দখলদারদের আধিপত্য হচ্ছে উপনিবেশ স্থাপন। আর উপনিবেশ স্থাপন প্রতিষ্ঠা করা এ শাসনকে বলে ঔপনিবেশিক শাসন। বাংলা ও ভারতে ইংরেজরা একইভাবে তাদের উপনিবেশ স্থাপন করে এক দীর্ঘস্থায়ী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। এক পর্যায়ে এদেশের মানুষ তাদের অভিসন্ধি বুঝতে পেরে তাদের বিরুদ্ধাচারণ করলে তারা তাদের শাসন গুটিয়ে চলে যায়। ঠিক এ জন্য বাংলা ও ভারতে ইংরেজদের প্রতিষ্ঠিত শাসনকে ঔপনিবেশিক শাসন বলা হয়। গ. উদ্দীপকের জনাব তরাফদারের বর্ণিত গল্পের দুর্ভিক্ষটি ১৭৭০ (বাংলা ১১৭৬) সালের ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’কে নির্দেশ করে। এ সময় বাংলায় ইংরেজদের প্রবর্তিত দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা কার্যকর ছিল। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়। ধূর্ত লর্ড ক্লাইভ দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। দ্বৈত শাসন ছিল একটি অদ্ভুত শাসন ব্যবস্থা। এ শাসন ব্যবস্থায় লর্ড ক্লাইভ বাংলার তৎকালীন নবাবের ওপর শাসন ও বিচার বিভাগের দায়িত্ব অর্পণ করেন এবং রাজস্ব আদায় ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত করেন কোম্পানির ওপর। এর ফলে নবাব পেলেন ক্ষমতাহীন দায়িত্ব আর কোম্পানি লাভ করল দায়িত্বহীন ক্ষমতা। দ্বৈত শাসন ছিল এদেশের মানুষের জন্য এক চরম অভিশাপ। রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পেয়ে ইংরেজরা প্রজাদের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করে এবং তা আদায়ে প্রচ- চাপ সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত করের চাপ এবং পর পর তিন বছর অনাবৃষ্টিতে খরায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বাংলায় নেমে আসে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ। এতে মারা যায় বাংলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ। ইতিহাস এ দুর্ভিক্ষের নাম ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’। ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকে জনাব তরাফদারের সর্বশেষ বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। জনাব তরাফদারের সর্বশেষ বক্তব্যটি হলোÑ ‘তার এলাকার মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা ও গণতান্ত্রিক অধিকারবোধেও উন্মেষ ঘটে এবং সেটি সফল হয়।’ ইংরেজরা তাদের শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। তাদের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকা-গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, কলকাতায় প্রশাসনিক বিভিন্ন দফতর, শিক্ষা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি। এতে করে কলকাতা বাংলার রাজধানী হয়ে ওঠে। এ সময় ইংরেজ গভর্নর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ও লর্ড হার্ডিঞ্জ এদেশে শিক্ষা বিস্তারসহ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার সূচনা করেন। নানা উদ্যোগের মাধ্যমে এদেশে একটি নতুন শিক্ষিত শ্রেণি ও নাগরিক সমাজ গড়ে ওঠে। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে শুরু করে। এতে ইংরেজদের উদ্দেশ্য সাধনের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার সংস্পর্শে এসে স্থানীয় মানুষের মধ্যে নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটতে থাকে। অনেক সমাজ সংস্কারক ও রাজনীতিবিদের জন্ম হতে থাকে এতে। আস্তে আস্তে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হয় যা পরবর্তীতে সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে চলে যায়। আমার মতামত এবং উপরিউক্ত যুক্তিসমূহ থেকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, উদ্দীপকের জনাব তরাফদারের বক্তব্য যথার্থ।
×