ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর নবম স্প্যান বসছে ২১ মার্চ

প্রকাশিত: ১৩:০০, ১৯ মার্চ ২০১৯

পদ্মা সেতুর নবম স্প্যান বসছে ২১ মার্চ

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতুতে যুক্ত হচ্ছে আরও একটি স্প্যান। সেতুর নবম স্প্যান বসতে যাচ্ছে আগামী ২১ মার্চ। এ লক্ষ্যে এখন চূড়ান্ত কাজ চলছে। ২০ মার্চ মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কশপ থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে পদ্মা সেতুর নবম স্প্যান বহনকারী ভাসমান জাহাজ। ‘৬ডি’ নম্বর নতুন স্প্যানটি বসতে যাচ্ছে জাজিরা প্রান্তের ৩৫ ও ৩৪ নম্বর খুঁটিতে। লৌহজং উপজেলার মাওয়া প্রান্ত থেকে ৩৬শ’ মেট্রিকটন ওজন ক্ষমতার ভাসমান জাহাজ তিয়ান-ই স্প্যানটি নিয়ে ২০ মার্চ রওনা দেবে বলে পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল নির্বাহী প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুতে যুক্ত হবে আরও একটি স্প্যান। জাজিরা অংশে সেতুটি দৃশ্যমান হবে ১২০০ মিটার। এছাড়া মাওয়া প্রান্তে দৃশ্যমান রয়েছে ১৫০ মিটার। এদিকে সার্ভিসিংয়ে থাকা তিনটি হ্যামারের মধ্যে সবচেয়ে বড় ৩৫০০ কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন হ্যামারটি রবিবার থেকে পাইল স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। এছাড়া ২৪০০ কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন হ্যামারটির মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরুর কথা রয়েছে। অপর সবচেয়ে ছোট ১৯০০ কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটি ঠিক হতে সময় লাগবে। এই হ্যামারটির একটি যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। সেটা এখানে সার্ভিসিং করা সম্ভব হয়নি। জার্মান থেকে সেই যন্ত্রাংশটি এলসি করে আনা হয়েছে। যন্ত্রাংশটি এখন বাংলাদেশে পৌঁছেছে। কাস্টমসের ছাড়পত্র শেষে এটি সার্ভিসিং করা হবে। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুতে আরও একটি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। এ নিয়ে সেতুর ২৬২টি পাইলের মধ্যে ২১০ পাইল সম্পন্ন হলো। বাকি ৫২ পাইল স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান। জার্মানি থেকে আগত ২৪ টেকনিশিয়ান হ্যামারগুলো চালানোর জন্য পরিচালনা করছেন। প্রতিটি পাইল ১শ’ থেকে ১২৮ মিটার গভীরে পদ্মার তলদেশে স্থাপন কাজে যুক্ত হ্যামারগুলো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ায় কোন সমস্যা ছাড়াই পাইল স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। প্রকৌশলী সূত্রে জানা গেছে, পিলারে গাইডিং ফ্রেম তৈরির সময় সঙ্গে দীর্ঘ পাইল স্থাপন করা হয়। এই পাইলের ওপরই বসে হ্যামার। মূলত একটি ভাসমান বার্জ থেকে হ্যামারগুলো দিয়ে ড্রাইভ করা হয়। বার্জের মধ্যে রয়েছে ৬টি স্টেশন, যা দেখতে অনেকটা কন্টেনারের মতো। এই স্টেশনে হ্যামারটি ড্রাইভ করানোর সকল যন্ত্রপাতি রয়েছে। রয়েছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রও। হ্যামার পাইলের ওপর স্থাপনের পর উপরের স্টেশন থেকে হাইড্রোলিক প্রেসার দিয়ে ড্রাইভ করানো হয়। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী জানিয়েছেন, হাইড্রোলিক প্রেসার পেয়েই শক্তিশালী হ্যামারটি উপর দিকে উঠে আবার নিচের দিকে আছড়ে পড়ে পাইলের ওপর। এভাবেই পাইলগুলো পদ্মার তলদেশে প্রবেশ করতে থাকে। হ্যামারটি প্রতি মিনিটে ৩৫ থেকে ৪০ বার পাইলে আঘাত করতে পারে। ফলে একটি পাইল বসাতে ৮ ঘণ্টার মতো লাগে। তবে নানা সমস্যা ও পাইল ঝালাই করে জোড়া দিয়ে একটি পাইল বসাতে লেগে যায় ৭ থেকে ৮ দিন। কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেশি। একটি হ্যামার দুই লাখবার পাইলের ওপর আছড়ে পড়ার পর সার্ভিসিং করতে হয়। আর আট লাখবারের পর অনেক যন্ত্রাংশ বদল করতে হয়। এছাড়া, পদ্মা সেতুর অন্যান্য কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৫শ’ রোডওয়ে বক্স স্ল্যাব ও সাড়ে ১৬শ’ রেলওয়ে বক্স স্ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতল পদ্মা সেতুতে সব মিলিয়ে ৪২টি খুঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ২১টি ও জাজিরা প্রান্তে ২১টি। আর ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এর মধ্যে ইতোমধ্যে ২১ টি স্প্যান বাংলাদেশে পৌঁছেছে। এর ৮ স্প্যান ইতোমধ্যে খুঁটির ওপর বসে গেছে। বাকি ১৩ স্প্যানের কাজ কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কশপে চলছে। এর মধ্যে ৭ স্প্যানের কাজ প্রায় শেষেরদিকে যার মধ্যে ২টা স্প্যানের এখন রঙের কাজ চলছে। বাকি স্প্যানগুলোর ওয়েলডিংয়ের কাজ চলছে। সেতুর ৪০ খুঁটি থাকবে পানিতে আর ডাঙায় ২ খুঁটি। ডাঙায় থাকা দুটি খুঁটি সংযোগ সড়কের সঙ্গে মূল সেতুকে যুক্ত করবে।
×