ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুম্বাই হামলা ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক নজির ॥ চীন

সন্ত্রাস বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ২০ মার্চ ২০১৯

সন্ত্রাস বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি

চীন মানবাধিকার রক্ষা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চরমপন্থার ওপর একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। সোমবার চীনের তথ্য মন্ত্রণালয় দেশটির জিনজিয়ান প্রদেশের সামগ্রিক অবস্থার ওপর এই শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। ওই শ্বেতপত্রে ২০০৮ সালে মুম্বাইতে সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গও এসেছে। ওই হামলা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মুম্বাই হামলা সন্ত্রাসবাদের ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক উদাহরণগুলোর মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তানের মাটিতে বসে লস্কর-ই-তৈয়্যবা এই হামলা চালায়। খবর পিটিআই ও চায়না ডেইলি অনলাইনের। ওই শ্বেতপত্রে বলা হয়, চীন সরকার সকল প্রকার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও চরমপন্থার বিরোধী। শ্বেতপত্রটির শিরোনাম দ্য ফাইট এগেইনেস্ট টেররিজম এ্যান্ড এক্সট্রিমিজম এ্যান্ড হিউম্যান রাইটস প্রটেকশন ইন জিনজিয়ান। শ্বেতপত্রে আরও বলা হয়, সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পরিকল্পনা, সন্ত্রাসী হামলা ও এই ধরনের কার্যক্রম আয়োজনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে চীন আইন অনুসারে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। জিনজিয়ান প্রদেশে অনুপ্রবেশকারী ঢুকে বিচ্ছিন্নতাবাদ, ধর্মীয় উগ্রপন্থা ও কখনও কখনও সন্ত্রাসী হামলা করছে। এতে জিনজিয়ানের আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবন ও তাদের সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। তবে চীন সংবিধান মোতাবেক দেশের সকল নাগরিকের প্রতি সম্মান ও তাদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য বদ্ধপরিকর বলে সোমবার প্রকাশিত শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে চীন মনে করে। আর জাতিসংঘে দেয়া এ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি চীন রক্ষা করতে চায়। বর্তমান সময়ে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন এ বিষয়ে এখন কোন দেশই ছাড় দিচ্ছে না। এদিকে নিজেদের সাম্প্রতিক অবস্থান থেকে সরে অবশেষে মুম্বাই হামলার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিল চীন। দেশের ভেতরে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নেয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে চীন জানায়, সন্ত্রাসের আতঙ্ক উদ্বেগের বিষয়। বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে সন্ত্রাসবাদ। এখানেই ২০০৮ সালের নবেম্বর মাসের মুম্বাই হামলাকে সন্ত্রাসবাদের ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক উদাহরণগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই শ্বেতপত্র যে সময় প্রকাশিত হচ্ছে, ঠিক তখন চীনে গেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি। শ্বেতপত্রে বেজিং লিখেছে, গোটা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থা শান্তির পরিবেশ বিঘ্নিত করেছে। চীন সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই শ্বেতপত্রে। তাছাড়া সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে সেখানে। মুম্বাই হামলা শুধু ভারত নয়, গোটা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ভয়ানক হামলা। ওই হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৬৬ জন। তার মধ্যে বিদেশীও ছিলেন কয়েকজন। সেদিন হামলা চালায় লস্কর-ই-তৈয়্যবার ১০ জঙ্গী। মৃত্যু হয় নয়জনের। পরে একমাত্র জীবিত জঙ্গী আজমল কাসভের ফাঁসি হয়। শ্বেতপত্র প্রকাশের মাত্র কয়েক দিন আগে জেইশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজাহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ঘোষণার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় চীন। এ নিয়ে পরপর চার বার বাধা দিল বেজিং। কাশ্মীরে জঙ্গী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স মাসুদ আজাহারকে এই তকমা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এবারও ভেটো দেয় চীন। পুরো ঘটনাটিকে দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে দেখছে ভারত। সেই ঘটনার পর অবশ্য অন্য এক প্রসঙ্গে ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, মাসুদকে নিয়ে দিল্লীর উদ্বেগ চীন বুঝতে পারে, আর এই সমস্যার সমাধানও হবে। দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু সমৃদ্ধ চিরবৈরী প্রতিবেশী ভারত পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কমাতে বেজিং গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে চায় বলে সোমবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়। গত মাসে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলার জেরে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা প্রশমনে চীনের ভূমিকা বিষয়ে জানতে চাইলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণায় সোমবার জানায়, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তিপূর্ণ অবস্থানই চীনের আগ্রহের বিষয়। দেশ দুটির মধ্যে চলমান পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য চীন ভূমিকা নিতে চায়। চীনের পাশাপাশি অপর দেশসমূহও এ বিষয়ে আগ্রহী। বেজিং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় সবসময় শান্তিপূর্ণ উপায়ে এ সমস্যা সমাধানের আগ্রহী।
×