ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভাল অবস্থানে অর্থনীতির সূচক

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ২০ মার্চ ২০১৯

ভাল অবস্থানে অর্থনীতির সূচক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আমদানি ও রফতানিতে সুবাতাস বইছে। পরিসংখ্যান মতে, গত জানুয়ারি মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। একইভাবে ফেব্রুয়ারিতে রফতানি আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। গতি ফিরেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে আমদানি, রফতানি ও প্রবাসী আয় নিয়ে এই স্বস্তির কথা তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রফতানি আয় বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। এ সময় ৩৩৮ কোটি ৩২ লাখ ডলার রফতানি আয় দেশে এসেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এখাতে আয় হয়েছিল ৩০৭ কোটি ২১ লাখ ডলার। একইভাবে এ বছরের জানুয়ারিতে আমদানি ব্যয় বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, এ বছরের জানুয়ারিতে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৬১২ কোটি ৮ লাখ ডলার। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৫২৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এ সময়ে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১৩১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন ১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এদিকে, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন পণ্য রফতানি থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে ২ হাজার ৭৫৬ কোটি ২৮ লাখ ডলার। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশি। জাতীয় নির্বাচনের পর রাজনীতিতে স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরে আসায় আমদানি, রফতানি ও প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত। তিনি বলেন, অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর অবস্থা এখন ভালর দিকে। আগামী মাসগুলোতেও প্রবাসী আয়, আমদানি ব্যয় ও রফতানি আয় আরও বাড়বে বলে আশা করেন তিনি। ড. জায়েদ বখত উল্লেখ করেন, নির্বাচনের পর কোন অস্থিরতা নেই। সরকারের ধারাবাহিকতায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকমাস ধরে পণ্য আমদানি ব্যয় কমে যায়। রফতানি আয়েও স্থবিরতা দেখা দেয়। এমনকি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সও ধীরগতিতে আসতে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত আগস্ট মাস থেকে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করে। ২০১৭ সালের আগস্টের তুলনায় ২০১৮ সালের আগস্টে আমদানি কমেছে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। আবার গত অক্টোবর মাসে আমদানিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ২০১৭ সালের নবেম্বরের তুলনায় ২০১৮ সালের নবেম্বরে আমদানি ব্যয় কমেছে ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের নবেম্বর মাসে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫০৮ কোটি ডলার। আগের বছরের (২০১৭) একই সময়ে আমদানি বাবদ ব্যয় করতে হয়েছিল ৫২২ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য মতে, প্রবাসীরা আগের তুলনায় অনেক বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। বছরের সবচেয়ে ছোট মাস ফেব্রুয়ারিতে (২৮ দিনে) প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১৩১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালের নবেম্বর মাসে তারা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিটেন্স তিন শতাংশ কম পাঠিয়েছেন। নবেম্বর মাসে ১১৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে, যা ২০১৭ সালের একই সময়ে ছিল ১২১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের শেষ মাস অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুনে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস তিন দশমিক ০৯ শতাংশ। একইভাবে ২০১৮ সালের মার্চ মাসেও রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস এক দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত ডিসেম্বর মাসে পণ্য রফতানি থেকে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় মাত্র ২ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি অর্থ দেশে এসেছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ৩৪২ কোটি ৬১ লাখ ডলার রফতানি আয় দেশে এসেছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আয় হয়েছিল ৩৩৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার। জানা গেছে, রফতানির ২৭ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ২৩ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। জুলাই-ফেব্রুয়ারি এই আট মাসে মোট রফতানি আয়ের ৮৪ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। এর মধ্যে নিট পোশাক রফতানি করে এসেছে এক হাজার ১৪৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ওভেন পোশাক রফতানি করে আয় হয়েছে এক হাজার ১৬৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। বর্তমান অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০ শতাংশের মতো। কিন্তু দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসে তা হোঁচট খায়। ওই মাসে গত বছরের আগস্টের চেয়ে আয় কমে ১২ শতাংশ। ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। জানুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৮ শতাংশ। প্রসঙ্গত, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রফতানি করে ৩৯ বিলিয়ন (তিন হাজার ৯০০ কোটি) ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
×