ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জমে উঠেছে নীলফামারীর এসএমই পণ্যমেলা

সাশ্রয়ী মূল্যে মনকাড়া বাহারি পণ্য

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ২০ মার্চ ২০১৯

সাশ্রয়ী মূল্যে মনকাড়া বাহারি পণ্য

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী থেকে ॥ মনকাড়া বাহারি পণ্য ও সাশ্রয়ী মূল্য এই দুই মিলিয়ে নীলফামারীতে জমে উঠেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিক্রয় ও বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আঞ্চলিক এসএমই পণ্যমেলা। ‘উত্তরের শিল্পনগরী, দীপ্তিমান নীলফামারী’। জেলা ব্র্যান্ডিং এই নামের সঙ্গে এই মেলা স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আশা আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পাটজাতপণ্য, খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়াজাত ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী, আইটি পণ্য, প্লাস্টিক ও অন্যান্য সিনথেটিক, হস্তশিল্প, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যারসহ অন্যান্য পণ্য প্রদর্শন এবং বিক্রি হচ্ছে মেলায়। ক্রেতাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এসব পণ্য। আরেকটি বিষয় হলো আধুনিক পৃথিবীর পোশাক-আশাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো টাই। আধুনিক ফ্যাশনে এর যেমন কদর, তেমনই রয়েছে অতীতেও। এত বছরের পথ পরিক্রমায় এতটুকু কমেনি টাইয়ের আবেদন। জেলা শহরের সরকারী হাইস্কুল বিশাল মাঠজুড়ে আয়োজিত এই মেলা চলছে। গত ১৫ মার্চ সকাল থেকে শুরু হওয়া মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে। উত্তরের ছোট জেলা শহরে এমন মেলায় ১০৫টি স্টল স্থান পেয়েছে। মঙ্গলবারসহ গত কয়েকদিনে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, জেলার ছয় উপজেলার এলাকা থেকে আসা মেলায় তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন করছেন। নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ ব্যাপক। তারা বুটিক ও বাটিক পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছেন। তাদের বুটিক ও বাটিক পণ্যের দোকানে মিলছে ৬০০ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে মেয়েদের পোশাক, শাড়ি, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক ও বিছানার চাদর। হাতের নাগালে পণ্যের দাম হওয়ায় ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে এসএমই মেলা। বিক্রেতারা জানান, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়ছে। স্থানীয় মিডিয়া হাউসের পরিচালনায় নারীদের অদ্বিতীয়া ফ্যাশন হাউসের স্টলে তৈরি পোশাকের বাহার নিয়ে এসএমই পণ্যমেলায় অংশ নিয়েছে তারা। এখানে ক্রেতাদের ভিড় অনেক। পোশাক কিনতে আসা সোনিয়া ইসলাম বলেন, ফ্যাশনওয়্যার ঘুরে ঘুরে গরমকালের কিছু ড্রেস কিনলাম। এছাড়াও এখানে পাটজাত পণ্যের অনেক বেশি কালেকশন আছে, সেগুলোও কিনলাম। তিনি বলেন, এই এসএমই মেলার আয়োজন আসলেই চমৎকার একটি পদক্ষেপ। এতে করে আমাদের নিজেদের জেলার বিভিন্ন উদ্যোক্তা এবং ক্রেতাদের মাঝে একটা সেতু বন্ধনের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে পরিচিতও হওয়া যায়। তিনি বলেন, মেলার একটি বড় দিক হলো সন্ধ্যার পর মেলার মঞ্চে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এটি মেলায় আগত দর্শনার্থীদের বেশি উৎসাহী করে তুলছে। মেলা ঘুরে দেখা যায়, পোশাকের পর মেলায় সবচেয়ে বেশি মিলছে চামড়াজাত পণ্য। এসবের মধ্যে জুতা, স্যান্ডেল, ব্যাগ, বেল্টসহ চামড়ার তৈরি বিভিন্ন পণ্য তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে মেলায়। মেলায় বরাদ্দ পেয়েছে কয়েকটি হস্তশিল্পের দোকান। এছাড়া মধুসহ বিভিন্ন পণ্যও নিয়ে এসেছে কিছু প্রতিষ্ঠান। মেলায় রয়েছে বিভিন্ন রকমের পিঠা। এগুলোর দামও হাতের নাগালে। এছাড়া ছোট থেকে মাঝারি আকারের পাপোশ ও কার্পেট মেলায় ৭০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আছে স্থানীয়ভাবে তৈরি বিভিন্ন ধরনের আচারের স্টল। আছে কৃষকদের জন্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা জৈব সার। ফারজানার সঙ্গে আসা সুরাইয়া আকতার রাখী ও শামীমা আকতার সাথী জানান, মেলার সকল পণ্যই নীলফামারীর। এটি সব থেকে ভাল লাগছে। এই মেলায় স্থান পেয়েছে নীলফামারী ‘এস গোল্ডেন কুক অয়্যার’ ইন্ডাস্ট্রির তৈরি প্রেসার কুকার, ননস্টিক ফ্রাই প্যান। এ ছাড়া হাঁড়ি-পাতিল। এ সকল উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান আন্তর্জাতিক মানের। এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় নীলফামারী জেলা প্রশাসন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক), জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি (নাসিব) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় এই মেলা চলছে। নীলফামারীতে প্রথমবারের মতো এই মেলা যেন স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। নীলফামারী জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, নীলফামারীর জেলা ব্র্যান্ডিং-এর স্লোগান ‘উত্তরের শিল্পনগরী, দীপ্তিমান নীলফামারী’ যার মূল বিষয় বস্তুই হলো ‘উদ্যোগ ব্র্যান্ডিং’ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিভিন্ন শিল্প উদ্যোক্তাদের উত্তরণ বিকাশ। এর সঙ্গে এসএমই ফাউন্ডেশনের এই কার্যক্রম অত্যন্ত সংশ্লিষ্ট এবং তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি জানান, এক সময় অবহেলিত ও মঙ্গাপীড়িত নীলফামারী আজ অনেক বৃহৎ-মাঝারি-ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোগের প্রয়াসে শামিল হয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়। এই সকল আয়োজনের মাধ্যমেই একদিন নীলফামারী জেলার উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় গ-ি পেরিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পাবে এবং তাদের উৎকর্ষতায় আলোকিত হবে উত্তরের নীলফামারীর জনপথ।
×