ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিতে আজ ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ২০ মার্চ ২০১৯

সেমিতে আজ ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ যে কোন খেলাতেই ফেবারিট দল মানেই যে তারা সবসময় জিতবে বা সফল হবে এমনটা শিরোধার্য নয়। যদি তাই হতো তাহলে সব খেলাই হয়ে যেত একঘেয়ে, পানসে, বিরক্তিকর। সেটা হয় না বলেই মাঝে মধ্যেই দুর্বল দলের কাছে হারের তেতো স্বাদ গ্রহণ করে সবল দল। এতে করে খেলাটির আকর্ষণ, গুরুত্ব ও রোমাঞ্চ বেড়ে যায় বহুগুণে। আজ বুধবার বাংলার বাঘিনীদের জন্য হতে পারে তেমনই একটি দিন। আন্ডারডগ হয়ে তাদের হারাতে হবে ফেবারিট ভারতকে। কোন সন্দেহ নেই তাদের এই লক্ষ্যপূরণ ভীষণ কষ্টসাধ্য, কিন্তু একেবারেই অসম্ভব নয়। যদি তাদের এই প্রচেষ্টা সফলতায় রূপ নেয় তাহলে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারানোর ইতিহাস গড়ার পাশাপাশি তারা নাম লেখাতে পারবে ‘সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর পঞ্চম আসরের ড্রিম ফাইনালে। নেপালের বিরাটনগরের শহীদ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে বিকেল সোয়া ৩টায় অনুষ্ঠেয় এই আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। এর আগে একই ভেন্যুতে বেলা সোয়া ১১টায় প্রথম সেমিতে তিনবারের রানার্সআপ ও স্বাগতিক নেপালকে মোকাবেলা করবে শ্রীলঙ্কা। পরিকল্পনা ছিল দুটি। একটি সফল হয়েছে, আরেকটি হয়নি। একটি হারে আংশিক সফলতা এসেছে। তবে ওই হার ভুলে এখন সেমিতে চোখ রাখছে বাংলার বাঘিনীরা। এ জন্য জোর অনুশীলন করেছে তারা। দলের জন্য সুখবর- কৃষ্ণা রানী সরকারকে সেমির ম্যাচে পাবেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। অনুশীলনে চোট পাওয়ায় গ্রুপের দুই ম্যাচেই খেলতে পারেননি এই নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড। আজকের সেমিতে যদি জিততে পারে তাহলে টানা দু’বার সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নাম লেখাতে পারবে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। আগের ফাইনালে (২০১৬ সালে) এই ভারতের কাছেই ৩-১ গোলে হেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল সাবিনাদের। পরিসংখ্যানই বলছে- প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারত বেশ কঠিন দলই বাংলাদেশের জন্য। কেননা সিনিয়র পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে এর আগে কখনই ভারতকে হারাতে পারেনি তারা। এ পর্যন্ত ৮ বারের মোকাবেলায় ৭টিতেই হেরেছে লাল-সবুজরা। ড্র করেছে ১টি ম্যাচে। অভিজ্ঞতা, ফিটনেস, বয়স, গতি, ক্ষিপ্রতা... সবকিছুতেই ভারত এগিয়ে। তবে বাংলাদেশের মেয়েরাও গত কয়েক বছরের মধ্যে আরও উন্নতি করেছে। এখন কেমন উন্নতি করেছে সেটাই বোঝা যাবে আজ। ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে ২-০ গোলে জেতা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক নেপালের কাছে হার মানে ৩-০ গোলে। গ্রুপ রানার্সআপ হয় তারা। পক্ষান্তরে ভারত ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপকে ৬-০ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৫-০ গোলে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে সেমিতে ওঠে। গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপপর্ব ও ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। গ্রুপপর্বে গোলশূন্য ড্র করলেও শিরোপা লড়াইয়ে ৩-১ ব্যবধানে হেরেছিল কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে গ্রুপের সেরা হওয়ার লক্ষ্য ছিল বাংলার মেয়েদের। কিন্তু সেটা হয়নি। প্রথমে আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ার পর আর ম্যাচে ফিরতে পারেননি সাবিনা-মারিয়ারারা। মিয়ানমারে গত নবেম্বরে টাকিও অলিম্পিক ফুটবলের বাছাইয়ে সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-ভারত। ওই ম্যাচে ভারতের কাছে ৭-১ গোলে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। আর সাফে ভারতের সঙ্গে ৪ ম্যাচ খেলে ৩ ম্যাচেই হারে, মাত্র ১টিতে ড্র করে। ২০১০ সাফে ৭-০, ২০১২ সাফে ৩-০ গোলে হার; ২০১৬ সালে ১-১ ড্র এবং ফাইনালে ৩-২ গোলে হার। এছাড়া ২০১১ এসএ গেমসে ৬-০ এবং ২০১৬ এসএ গেমসে ৩-০ গোলে হারে বাংলাদেশ। ২০১১ অলিম্পিক বাছাইপর্বে হেরেছিল ৩-০ গোলে। আজকের ম্যাচ নিয়ে কি ভাবছেন লাল-সবুজবাহিনীর দ্রোণাচার্য গোলাম রব্বানী ছোটন? ‘আমাদের প্রস্তুতি ভাল। বুধবারের সেমিফাইনাল ম্যাচ অন্যরকম ম্যাচ। এটা হলো নকআউট ম্যাচ। ভারত চারবারের চ্যাম্পিয়ন, তাদের অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। কিন্তু এগুলো নিয়ে আমাদের ভাবার অবকাশ নেই। সেমিফাইনালে জয়ের জন্যই মাঠে নামব। মেয়েরা সর্বোচ্চ দিয়েই খেলবে।’ ছোটন আভাস দিলেন- ফরোয়ার্ড লাইনআপ কেমন হতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনি খেলাতে পারেন চার ফরোয়ার্ডÑ সাবিনা, স্বপ্না, কৃঞ্চা ও সানজিদাকে। শামসুন্নাহার লেফটব্যাক, রাইটব্যাক শিউলি আজিম, আঁখি, মাসুরা, মারিয়া ও মনিকা। ৪-২-৪ ফর্মেশনে খেলবে। ডিফেন্ডিংয়ের সময় ৪-৪-২। এ্যাটাকিংয়ের সময় ৪-৪-২ এবং ডিফেন্ডিংয়ের সময়ও তাই। তখন সানজিদা এবং কৃঞ্চা নেমে এসে শিউলি এবং শামসুন্নাহারের সঙ্গে খেলবে। ভারতের কাছে হারলেই মিশন শেষ। তবে এ নিয়ে ভাবিত নন ছোটন, ‘একজন কোচ হিসেবে আমি অবশ্যই এটাকে শেষ ম্যাচ হিসেবে ভাবতে চাই না। সেমিতে যে কোন কিছুই হতে পারে। এ রকম অনেক ঘটনা পৃথিবীতে ঘটছে যে আন্ডারডগরাই জিতেছে, এই ম্যাচেও এমন কিছু ঘটতে পারে। আমাদের মেয়েরা বিগত দিনে অনেককিছু শিখেছে।’ প্রতিপক্ষ দল প্রসঙ্গে ছোটনের মূল্যায়ন, ‘ওদের ৭ নম্বর খেলোয়াড়টা সেরা খেলোয়াড়। তাকে ঘিরেও আমাদের পরিকল্পনা আছে। আর আমি ভারতের দুটি ম্যাচই দেখেছি। তাদের স্টাইল হচ্ছে মধ্যমাঠ থেকে খেলা তৈরি করে। তাদের শক্তিশালী দিক হলো মিডফিল্ড থেকে ফরোয়ার্ড লাইন। আমাদের মেয়েরা রক্ষণভাগে যদি স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারে তাহলে ভাল কিছুই হবে।’ ছোটন আরও জানান- ‘ভারতের সঙ্গে জোনাল মার্কিংয়ে খেলা হবে। ম্যান মার্কিংয়ে খেলা হবে না। ডিফেন্ডিংয়ের সময় ডিফেন্ডিং এবং এ্যাটাকিংয়ের সময় এ্যাটাকিংয়ে খেলব। বাংলাদেশ আন্ডারডগ হিসেবেই খেলবে। যে নতুন রাইজিং তারা অনুর্ধ-১৫তে চ্যাম্পিয়ন, অনুর্ধ-১৮তে চ্যাম্পিয়ন। বুধবার এখানেই তারা আন্ডারপগ হিসেবে খেলবে। অনেক আন্ডারডগের আধিপত্য বিস্তার করার ইতিহাস ফুটবলে আছে।’ রক্ষণভাগ নিয়ে আমি আশাবাদী। আগের ম্যাচে তারা ভুল করেছে, সেটা বুঝতেও পেরেছে। সেমির ম্যাচে এই ভুলটা হবে না।’ ভারত দলের দুই তারকা- অভিজ্ঞ ফুটবলার বালা ও কমলা দেবী নেই। এটা তাদের দুর্বলতা বলে মনে করেন ছোটন। এর সুবিধা নিতে চান ছোটন। কৃষ্ণা প্রসঙ্গে ছোটনের অভিমত, ‘নেপাল ম্যাচে স্বপ্না অনেক দৌড়িয়েছে। প্রচুর কষ্ট করতে হয়েছে তাকে। এবার কৃষ্ণা যোগ দেয়ায় স্বপ্নার ওপর থেকে চাপ কিছুটা কমে যাবে। আর কৃষ্ণার আছে বড় ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা। চারজন মিলে একটা সংঘবদ্ধ এ্যাটাক হবে। প্রথম থেকেই আমাদের লক্ষ্য থাকবে প্রথম ২০ মিনিট আক্রমণাত্মক খেলা। খেলা টাইব্রেকারে গড়ালেও তার জন্যও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন ছোটন। সাবিনারা বিশ্বাস করেন যে ভারতকে হারাতে পারবেন তারা। তাদের যুক্তি- ২০১৬ সালে যদি একটা খেলায় ড্র করতে পারেন এবং ফাইনালে ফাইট দিতে পারেন, তাহলে এবার কেন পারবেন না! এখন দেখার বিষয়, আজকের সেমির ম্যাচে আন্ডারডগ বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়ে অঘটন ও ইতিহাস সৃষ্টির পাশাপাশি ফাইনালে নাম লেখাতে পারে কি না।
×