ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এগিয়ে যাচ্ছে টাঙ্গাইলের নারী ফুটবল

প্রকাশিত: ১১:৫০, ২০ মার্চ ২০১৯

এগিয়ে যাচ্ছে টাঙ্গাইলের নারী ফুটবল

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ নানা প্রতিকূলতার মাঝেও এগিয়ে যাচ্ছে টাঙ্গাইলে বয়সভিত্তিক নারী ফুটবল দল। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, পারিবাবিক বাধা, অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা কোনকিছুই দমিয়ে রাখেতে পারেনি সেলিনা আক্তার ঝুমুর, রিতু আক্তারসহ দলের ১৭ খেলোয়াড়কে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেসা টুর্নামেন্ট দিয়ে তাদের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। তারপর ধীরে ধীরে ফুটবলের প্রতি ভালবাসা। সাফল্যও কম আসেনি। বিগত ২০১৬ সালে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ও ২০১৭ সালে রানার্স-আপ হয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালে যুব গেমসে অনুর্ধ-১৭ ফুটবলে দেশসেরা হয়েছে টাঙ্গাইল। অনুর্ধ-১৪ ফুটবলে এই দল ২০১৮ সালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়ে টাঙ্গাইলের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে। দলের দলনায়ক হচ্ছে পৌর এলাকা সন্তোষের রিতু আক্তার। বাবা দিনমুজুর। তার দুই সন্তানের মধ্যে রিতু ছোট। দুই সন্তানের পড়ালেখা, তারপর খেলাধুলার সামগ্রী কেনা অনেক খরচের। কোন রকমে চলে তাদের পরিবার। কমতি নেই তার ফুটবলের প্রতি ভালবাসার। প্রতিদিন নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে সে। রিতুর আশা একদিন জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলে পরিবারের অর্থনৈতিক দৈন্যতা ঘোচাবে। এছাড়া সখীপুর থেকে টাঙ্গাইল এসে ফুটবলের টানে নিয়মিত অনুশীলন করে শান্তা, সোনিয়া, রুপা। ঘাটাইলের লাকি আক্তার, লিজা, লাবণী, ঝুমুর। নাগরপুর থেকে আসে ইতি আক্তার, করটিয়া থেকে সীমা, রোমানা, টাঙ্গাইল সদরের সাবিনা, মারিয়া সুলতানা। তাদের বাসস্থানের কোন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেই। নিজেরাই ভাড়া নিয়েছেন শহরের বেড়াডোমা এলাকায় একটি কক্ষ। সেখানেই গাদাগাদি করে কোন রকমে থাকা-খাওয়া। এ অবস্থায় রুপা আক্তারের পরিবার রুপাকে এখান থেকে নিয়ে যায়। অনেক বুঝিয়ে রুপাকে আবার অনুশীলনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এর বিপরীত চিত্রও আছে, টাঙ্গাইল দলের সহ-অধিনায়ক সেলিনা আক্তারের মা সামছুর নাহার বলেন, বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টে ফুটবল খেলে আগ্রহী হয় আমার মেয়ে। আমি তাকে সবসময় সাহায্য করি। আমি চাই সেলিনা ভাল একজন ফুটবল খেলোয়াড় হোক। এসব প্রমীলা ফুটবলারের মায়ের মমতায় আগলে রেখেছেন কামরুন্নাহার খান মুন্নী। তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। উত্তরণ শিশু শিক্ষালয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তিনি। ফুটবলের টানে শিক্ষকতার পাশাপাশি এসব মেয়েদের দেখাশুনা করেন। খেলা শেখান। অদম্য সাহসী মুন্নী প্রচলিত ধারার বিপরীতে লড়ছেন একাই। তিনি বলেন, বিগত ২০১১ সালে বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টের মাধ্যমে প্রথম ফুটবল অঙ্গনে আসা। কিন্তু ফুটবলের প্রতি ভালবাসা দীর্ঘদিনের। বড় ভাই ফুটবল খেলতেন। তারও প্রচ- ইচ্ছে ছিল ফুটবলার হবার। কিন্তু সামাজিক কারণে পারেননি। তিনি আমৃত্যু ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে চান। এই খেলার মাধ্যমেই বাল্যবিয়ে রোধ করতে চান। ২০১১ সাল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুরু হয় বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা ফুটবল টুর্নামেন্ট। টাঙ্গাইলে এই নারী ফুটবলারদের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই এসেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে। তাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং তাদের দেখভাল করার। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, আমাদের দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে খেলোয়াড় বের করে আনা। তারা যেহেতু পঞ্চম শ্রেণীর পর আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় থাকে না, সেক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে আর সাহায্য করা সম্ভব হয় না। এরপর দায়িত্ব বর্তায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের।
×