ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাক-ভারত সংঘাতের মাশুল দিচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া

প্রকাশিত: ২২:১৯, ২০ মার্চ ২০১৯

পাক-ভারত সংঘাতের মাশুল দিচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া

অনলাইন ডেস্ক ॥ গত মাসে শুরু হওয়া পাক-ভারত সংঘাত কিছুটা থেমে আছে। কিন্তু ভারতের জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স এয়ার ইন্ডিয়াকে এখনও এর চড়া মাশুল গুনে যেতে হচ্ছে। গত তিন সপ্তাহ ধরেই পাকিস্তানের আকাশসীমা ভারতীয় বিমানের জন্য নিষিদ্ধ। ফলে এয়ার ইন্ডিয়ার ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমানগুলোকে এখন অনেক ঘুরপথে যেতে হচ্ছে। বাড়তি সময়, জ্বালানি এবং রিফিউয়েলিং স্টপেজের কারণে এয়ার ইন্ডিয়ার ইতোমধ্যেই এক কোটি ডলারের মতো বাড়তি খরচ হয়েছে এবং এই অঙ্কটা রোজই বেড়ে চলেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, অচিরেই এই পরিস্থিতি হয়তো আবার স্বাভাবিক হতে পারে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে বালাকোটে হামলা চালিয়েছিল ভারতের যুদ্ধবিমান। তার পরের দিন থেকেই এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য বন্ধ হয়ে যায় পাকিস্তানের আকাশসীমা। ফলে দিল্লি থেকে তাদের ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমানগুলোকে এখন প্রথমে দক্ষিণমুখী হয়ে গুজরাট যেতে হচ্ছে - তারপর আরব সাগর ও পার্সিয়ান গাল্ফ পাড়ি দিয়ে উড়তে হচ্ছে গন্তব্যের দিকে। এয়ার ইন্ডিয়া দীর্ঘদিন ধরেই আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে। নতুন এই পরিস্থিতিতে তাদের সমস্যা আরও অনেকগুণ বেড়ে গেছে। সংস্থাটির সাবেক ব্যবস্থাপক অশোক শর্মা বলেন, যেহেতু ঘুরপথে যেতে হচ্ছে তাই খরচ তো বাড়বেই। তা ছাড়া জার্নির সময়ও স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে। আর বেশি লম্বা রুট মানেই বেশি জ্বালানি, যার পুরোটা একবারে ভরে নিয়ে যাত্রা শুরু করাও সব সময় সম্ভব নয়- ফলে রাস্তায় কোনও একটা ট্রানজিট পয়েন্টে নতুন করে তেল ভরার জন্য রিফিউয়েলিং স্টপও নিতে হচ্ছে। দিল্লি থেকে এতদিন এয়ার ইন্ডিয়ার যে ফ্লাইটগুলো সরাসরি নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, ওয়াশিংটন ডিসি বা শিকাগোতে যেত সেগুলোকেই এখন জ্বালানি ভরার জন্য থামতে হচ্ছে আমিরাতের শারজাহ বা অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়। আর এতেও খরচ প্রচুর বেড়ে গেছে। এমন কী, লন্ডন বা প্যারিস থেকে এয়ার ইন্ডিয়ায় চেপে দিল্লি আসতে বাড়তি দু-তিনঘন্টা সময় লাগছে। ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব সালমান হায়দার অবশ্য মনে করেন, পরিস্থিতিটা পাকিস্তানকেও অসুবিধায় ফেলছে - কাজেই একটা সমাধান হয়তো শিগগিরি বেরিয়ে আসবে। হায়দার বিবিসিকে বলেন, পাকিস্তান যখন পূর্ব আর পশ্চিম, দু’ভাগে বিভক্ত ছিল তখন ভারত তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিলেই তারা বিরাট বিপদে পড়ত। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর সমস্যাটা সেভাবে নেই ঠিকই, কিন্তু আজ ভারতও যখন তাদের আকাশসীমা পাকিস্তানের জন্য বন্ধ করে দিচ্ছে - সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া তাদের কাছে বহু দূরের পথ হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমি নিশ্চিত দু’দেশের উত্তেজনা আরও একটু প্রশমিত হলেই এই পরিস্থিতির একটা সমাধান হবে। এর আগেও একাত্তরের যুদ্ধের সময় এবং তারপরেও বেশ কয়েকবার ভারত-পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা পরস্পরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এখন এয়ার ইন্ডিয়ার যত বিমান প্রতিদিন ইউরোপ-আমেরিকায় যায় আগে কখনওই এত বেশি বিমান যায়নি। ফলে আর্থিক চাপটাও পড়ছে নজিরবিহীন।
×