ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুদক মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরীর বদলীতে র‍্যাকের উদ্বেগ

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২০ মার্চ ২০১৯

দুদক মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরীর বদলীতে র‍্যাকের উদ্বেগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক ও এনফোর্সমেন্ট টিমের প্রধান মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীকে অন্যত্র বদলী করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দুদক বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র‍্যাক)। দেশের বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনাকারী ও দুর্নীতিবাজদের মাঝে আতংক সৃষ্টিকারী এই ব্যক্তিকে সোমবার জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে বদলি করা হয়েছে। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগের কথা জানান সংগঠনটির সভাপতি হায়দার আলী ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ। বিবৃতিতে তারা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আশা জাগিয়েছিল। দুর্নীতি দমন কমিশনের বেশকিছু অভিযানও দুর্নীতিবিরোধী মানুষের কাছে ছিল ব্যাপক প্রশংসিত। এক্ষেত্রে দুদকের মহাপরিচালক এবং এনফোর্সমেন্ট টিমের প্রধান মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর অভিযানগুলো ছিল ব্যাপক প্রশংসিত। ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক, সরকারের ভূমি উদ্ধার, প্রভাবশালীদের কাছ থেকে সরকারি গাড়ি উদ্ধারসহ বেশকিছু কাজ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে নিভৃতেই তিনি দুর্নীতিবিরোধী কাজ করছিলেন। র‍্যাক এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে, আমরা মনে করি, একজন সৎ কর্মকর্তার এমন বদলির কারণে দুদকের অন্য সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙে যাবে। এতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিকে পিছিয়ে দেবে। আমাদের প্রত্যাশা, মুনীর চৌধুরীকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে দেশের স্বার্থেই দুদকে ফিরিয়ে আনা হোক। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক হিসেবে যোগদানের পর তার নেতৃত্বাধীন কর্মকান্ড ব্যাপক প্রশংসিত ছিল। তার কর্মকান্ডের জন্য তিনি সারা দেশের মানুষের আস্থা ও ভরসাস্থলে পরিণত হন। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার একের পর এক অভিযানে ভেঙে যায় বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতির সিন্ডেকেট। দুদকের হটলাইন ১০৬ নম্বরে অভিযোগ পাওয়ার পরই তিনি বিভিন্ন দপ্তরে হানা দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, মুনীর চৌধুরীর এনফোর্সমেন্ট টিম যখন সারা দেশে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে ব্যস্ত, ঠিক তখনই তাকে বদলি করা হলো জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে। জনশ্রুতি আছে, বড় দুর্নীতিবাজ বা রাঘব বোয়ালরাই তাকে বদলির জন্য বেশকিছু দিন ধরে সক্রিয় ছিল। তার বদলির ঘটনায় বিভিন্ন সরকারি অফিসে দুর্নীতিবাজরা গোপনে মিষ্টি বিতরণ উৎসব করেছেন বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানা গেছে। উল্লেখ্য, গত ১৮ মার্চ জনপ্রশাসন থেকে এক আদেশে মুনীর চৌধুরীকে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের (অতিরিক্ত সচিব) মহাপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। জনপ্রশাসনের উপ-সচিব মো. তমিজুল ইসলাম খানের সই করা আদেশ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সরকার মুনীর চৌধুরীকে দুদকের মহাপরিচালক (ডিজি) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর তিনি দুদকের এনফোর্সমেন্টের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।এ সময় বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের অভিযানে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। মুনীর চৌধুরী এর আগে বন্দর, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, ভূমি এবং বিদ্যুৎ খাতে দায়িত্ব পালনের সময় সরকারি সম্পদ উদ্ধার ও রাজস্ব আদায় করে ব্যাপক আলোচিত হন। চট্টগ্রাম বন্দর, পরিবেশ অধিদপ্তর, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর, মিল্ক ভিটা ও ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষে দায়িত্ব পালনের সময় তার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ভূমি উদ্ধার ও রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়।
×