ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নৈতিক দায়িত্ববোধ

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ২১ মার্চ ২০১৯

নৈতিক দায়িত্ববোধ

পিতা-মাতার কারণেই সন্তান পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধ, সৌন্দর্য ও আরাম-আয়েশ উপভোগ করার সুযোগ পায়। তাই পিতা-মাতার সমতুল্য এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। একজন মা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে আর পিতা সন্তানকে লালন করে অন্তরে। সন্তানের সুখের আশায় পিতা-মাতা নিজেদের অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ ও কষ্টের মধ্যে নিয়োজিত রাখেন। পিতা-মাতার একমাত্র চাওয়া সন্তান যেন ভাল থাকে। প্রত্যেক পিতা-মাতার চাওয়া যেন ভারতচন্দ্র রায় গুণাকরের অন্নদামঙ্গল কাব্যের মাঝি ঈশ্বরীর চাওয়ার মতো হয়ে ওঠে, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’ বাংলাদেশের সর্বত্র এক সময় যৌথ পরিবার লক্ষণীয় ছিল। ফলে বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে সঙ্গে নিয়ে একত্রে বসবাস করার মূল্যবোধটি ছিল শক্তিশালী। এখনও যদিও গ্রামাঞ্চলে যৌথ পরিবারের চিত্র দেখা যায়। কিন্তু দিনে দিনে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবারে রূপ লাভ করছে। ক্রমে হারিয়ে আমরা ফেলছি আমাদের এই সামাজিক মূল্যবোধ। আর এর ফলে সবচেয়ে বেশি নিঃস্ব-অসহায় হয়ে পড়ছে পিতা-মাতা। কিন্তু সন্তান জন্মের পর সব পিতা-মাতারই একটা আকাক্সক্ষা থাকে, এই সন্তান বড় হয়ে তাদের ভরণপোষণ ও দেখাশুনা করবে। কিন্তু এমন চিত্রও আজকাল লক্ষণীয় যে, ভরণপোষণ তো দূরের কথা বৃদ্ধ পিতা-মাতার খোঁজখবর পর্যন্ত নেয় না অনেক সন্তান। আবার অনেকে চাকরির কারণ ও বিদেশ বিভুঁইয়ের আশায় বৃদ্ধ পিতা-মাতার দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। ফলে পরিবারের বৃদ্ধ পিতা-মাতা সন্তানের কাছে হয়ে যায় যেন অপাঙক্তেয়। পিতা-মাতার ভরণপোষণ দেখভাল করবে কে তা নিয়ে সন্তানদের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয়। বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চায়। আধুনিকতার স্পর্শে আমরা আধুনিক হচ্ছি বটে; কিন্তু আধুনিকতার তাল সামলাতে না পেরে বেসামালে নিজের পিতা-মাতাকেও অবজ্ঞা জ্ঞান করতে অবহেলা করছি না। তথাকথিত আধুনিকতার কারণে নিজের জন্মদাতা পিতা-মাতাকে নিজের সঙ্গে রাখতে কুণ্ঠিত হই। আমরা ধারণা করি, পিতা-মাতা হচ্ছেনÑ আধুনিকতা বহির্ভূত বাসিন্দা। তাদের পরিবারের সঙ্গে রাখলে বন্ধু ও সামাজিক মহলে মানসম্মান বিসর্জন দিতে হবে। তাই অনেক সন্তানের মধ্যে এই মনোভাব জেগে ওঠে, কি প্রয়োজন মানসম্মান বিসর্জন বরং বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে বিসর্জন দিয়ে আধুনিকতাটাকে আরেকটু অর্জন করি। কিন্তু এটা একবারও মনে আসে না যে, এই বৃদ্ধ পিতা-মাতাই আমাদের চেয়ে বেশি আধুনিক। সন্তান থাকা সত্ত্বেও অবহেলায়ও একাকিত্বে বৃদ্ধ পিতা-মাতার দিনযাপন অনেক কষ্টের। বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের ভরণপোষণের অভাবে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া ও চিকিৎসাও হয় না অনেক পিতা-মাতার। আমাদের সমাজেও ইদানীং ইউরোপ-আমেরিকার মতো বৃদ্ধাশ্রম প্রসঙ্গটি শোনা যাচ্ছে। বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত জীবন কামনা অনেক সন্তানের মধ্যেই জেগে উঠছে। বৃদ্ধ পিতা-মাতার দেখভালের জন্য সমাজের পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার বিধবা ভাতা ও বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করেছে। তবে পরিবার ও সমাজে যেন সন্তানই তার বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে সঙ্গে রাখে; আর যদি বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে সঙ্গে রাখা না যায় তাহলে সন্তানকেই ভরণপোষণের ব্যয়ভার বহন করতে হবে সেই লক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিধিমালা প্রণয়ন করছে। আর যদি সন্তান পিতা-মাতার প্রতি তার যথাযথ দায়িত্ব পালনে অপারগ হয় তাহলে শাস্তির বিধানও থাকছে। এটাকে পিতা-মাতার ভরণপোষণ বিধিমালা নামে অভিহিত করা হবে। বনানী ঢাকা থেকে
×