ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:০২, ২১ মার্চ ২০১৯

তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালীর আত্মপরিচয়ের সঠিক ইতিহাস সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে তৃণমূল পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা উদযাপনের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর মাধ্যমেই দেশের মানুষ সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত যেন উদযাপিত হয় তারই উদ্যোগ আমরা নেব। মানুষ যেন সঠিক ইতিহাসটা জানতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয় এবং বাংলাদেশকে যেন আমরা সারা বিশ্বের কাছে মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে পারি। আমাদের যে অগ্রযাত্রা সেটা অব্যাহত রেখেই জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সেটাই হবে আমাদের প্রতিজ্ঞা। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি ও বাস্তবায়ন কমিটির প্রথম যৌথসভায় প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ঢাকা শহর বা দেশের বড় বড় শহরে যেন এটা সীমাবদ্ধ না থাকে; আমরা সারাদেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত তাঁর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা ছড়িয়ে দিতে চাই। আসলে সত্যকে কেউ কখনও মুছে ফেলতে পারে না। সত্য কখনও না কখনও উদ্ভাসিত হবেই আর তার স্থানটা সে করে নেবে। আজকে আমরা সেটার প্রমাণ পাচ্ছি। সরকার জাতির মহান এই নেতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ইতোমধ্যেই ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করে তা যথাযথভাবে উদযাপনে বিশিষ্টজনদের নিয়ে ১০২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি এবং বাস্তবায়নের জন্য ৬১ সদস্যবিশিষ্ট যে কমিটি করেছে, বুধবার ছিল তারই প্রথম যৌথ বৈঠক। মুজিব বর্ষের প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে সারাদেশের সকল জেলা, উপজেলা, থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানমালা চলবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্চ মাসটা আমাদের জন্য খুবই অর্থবহ মাস। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন, আবার ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। কাজেই ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত বছরটাই আমরা মুজিব বর্ষ হিসেবে উদযাপন করব। উদযাপনের ক্ষেত্রে আমাদের কি কি করণীয়? আমাদের সমাজের বিশিষ্টজন যারা এখানে উপস্থিত আছেন এবং আমরা একটি ১০২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করে দিয়েছি। হয়ত আরও গুরুত্বপূর্ণ নাম আমাদের এই কমিটিতে থাকা দরকার, সেখানে থাকলে আমরা তাদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করব। তিনি বলেন, এছাড়া ৬১ সদস্যবিশিষ্ট আলাদা একটি কমিটি করে দিয়েছি। আমরা যে সিদ্ধান্তগুলো নেব, তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কাজ করবে। এছাড়া ভাগে ভাগে যে কমিটি করা প্রয়োজন সে ব্যাপারেও আপনাদের পরামর্শ নেব। কারণ, এটা আমরা জাতীয়ভাবে পালন করার জন্য করেছি। এক্ষেত্রে আপনাদের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া দল হিসেবেও আওয়ামী লীগের একটা আলাদা কমিটি করেছি। দলের পক্ষ থেকেও আমরা কি কি করব তা ঠিক করা হবে। জাতির পিতার জন্মশতাবার্ষিকী যথাযথভাবে উদযাপন করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে এ দেশের মানুষের জন্যই কষ্ট স্বীকার করে গেছেন আমাদের জাতির পিতা। সেই কষ্টের ফসল হিসেবেই আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, স্বাধীন জাতির মর্যাদা। কাজেই এটা আজকে আমাদের একটা জাতীয় কর্তব্য। আমি মনে করি, তাঁর (বঙ্গবন্ধু) জন্মশতবার্ষিকী আমরা ভালভাবে উদযাপন করব। আমাদের হাতেও সময় খুব বেশি নেই। কারণ, নির্বাচনসহ বিভিন্ন কর্মকা-ের জন্য আমাদের বেশ কিছু সময় পেরিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা তাঁর জীবনের সব থেকে মূল্যবান সময় এদেশের মানুষের কথা চিন্তা করে ব্যয় করেছেন। মানুষের ওপর অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে দিনের পর দিন কারাবরণ করেছেন। তাঁরা সন্তান হিসেবে পিতৃ¯েœহ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কেননা, জীবনের মূল্যবান সময়গুলো কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠেই তিনি কাটিয়েছেন। বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জে জাতির পিতা দেখেছেন দারিদ্র্যের হাহাকার। বুভুক্ষু নর-নারীর কষ্ট। মানুষ ওষুধ পায়নি, চিকিৎসা পায়নি, খাবার পায়নি, থাকার জায়গা নেই। মানুষের এই দুঃখ-কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারেননি। এসব তাঁকে ব্যথিত করেছে। জাতির পিতা আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে যে কষ্ট সহ্য করেছেন, এটা কাদের জন্য? এদেশের মানুষের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য। যৌথসভায় উপস্থিত সকলকে কষ্ট করে আসার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে কমিটির সদস্যদের কাছে মতামত আহ্বান করেন প্রধানমন্ত্রী। যৌথসভায় সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান, নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়সহ যৌথ কমিটির সদস্য বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন। ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাঁর সরকার জাতির পিতার আদর্শে দেশটা গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক বাধাবিঘœ পেরিয়েই এ বছর আমরা জাতির প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগ অর্জনের দোড়গোড়ায় উপনীত হয়েছি। মাথা পিছু আয় বেড়ে ১৯০৯ ডলার হয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যে মর্যাদা পেয়েছি তা ধরে রাখার জন্য ইতোমধ্যেই কর্মসূচী গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশে আজকে আমরা দারিদ্র্যের হার ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। প্রকৃত হার আরও কম হবে। হয়ত আমরা দারিদ্র্যের হার ১১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আমাদের লক্ষ্য আরও কমিয়ে আনা, যখানে হতদরিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না। সরকারপ্রধান বলেন, ১০ বছরে আমরা চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের, যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। তিনি বাংলাদেশকে দারিদ্র্য মুক্ত করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। তিনি সব সময় চাইতেন তাঁর মানুষ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি অর্জন করবে এবং বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে একটি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, সেটাই নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্য অর্জনেই তাঁর সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই এদেশের কৃষক, শ্রমিক এবং মেহনতি মানুষের কল্যাণে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি এবং তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যার সুফলও মানুষ পেতে শুরু করেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর দীর্ঘ ২১ বছর বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুঃখের বিষয় একটা সময় ছিল, ভাষা আন্দোলনে তাঁর (জাতির পিতার) অবদান একদমই মুছে ফেলা হচ্ছিল। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর যে অবদান সেটাও মুছে ফেলার একটা চেষ্টা করা হয়েছিল। ২১ বছর এদেশের মানুষ সত্য জানতেই পারেনি। আসলে সত্যকে কেউ কখন মুছে ফেলতে পারে না। সত্য কখনও না কখনও উদ্ভাসিত হবেই আর তার স্থানটা সে করে নেবে। আজকে আমরা সেটার প্রমাণ পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের চলমান অগ্রযাত্রা আমরা অব্যাহত রেখেই জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। আর তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে সেটাই হবে আমাদের প্রতিজ্ঞা। একদিকে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা, অপরদিকে মানুষের কল্যাণে আরও কি কি পদক্ষেপ নিতে পারি। এখানে আমাদের সমাজের সকল শ্রেণীর গুণী-বিশিষ্টজন সবাই রয়েছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা রয়েছেন। জনগণের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এখানে আপনাদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা বিভিন্ন উপকমিটি করব সেখানে আপনাদের দায়িত্ব দিয়ে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে কি কি করণীয় সেটা আমরা নির্দিষ্ট করব।
×